Jane Street-এর সঙ্গে জড়িত এই বিতর্কটি জুলাই ২০২৩-এ প্রথম সামনে আসে, যখন ট্রেডার মায়াঙ্ক বনসাল অভিযোগ করেন যে, ওই ফার্মের তরফে নিফটি ইন্ডেক্সকে মেয়াদ শেষের সময়ে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল।
ভারতীয় শেয়ার বাজারে আবারও কারচুপির অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এবার এই বিতর্কের সঙ্গে জড়িয়েছে একটি মার্কিন ট্রেডিং ফার্ম, যার নাম জেন স্ট্রিট। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা জানুয়ারি ২০২৪ থেকে অপশন ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করেছে। এই পুরো ঘটনার পর্দা ফাঁস করেছেন দুবাই-এর একটি হেজ ফান্ডের চেয়ারম্যান মায়াঙ্ক বনসাল। তিনি এই কেলেঙ্কারির বিষয়ে ভারতীয় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-কে (SEBI) ক্রমাগত তথ্য দিয়ে আসছিলেন।
জুলাই ২০২৩ থেকে সন্দেহের সূত্রপাত
এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় জুলাই ২০২৩-এ, যখন মায়াঙ্ক বনসাল প্রথম বুঝতে পারেন যে, জেন স্ট্রিট মেয়াদ শেষের সময় নিফটি ইন্ডেক্সকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে। সেই সময় তিনি লক্ষ্য করেন যে, মিডক্যাপ সিলেক্ট ইনডেক্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় আচমকা তীব্র ওঠানামা হয়, যা স্বাভাবিক প্যাটার্ন থেকে বেশ আলাদা ছিল।
অপশন ট্রেডিংয়ে ধরা পড়ে গড়মিল
এরপরে, জানুয়ারি ২০২৪ থেকে জেন স্ট্রিটের ট্রেডিং প্যাটার্নের উপর বিস্তারিত নজর রাখা হয়। মায়াঙ্ক বনসাল জানতে পারেন যে, কোম্পানিটি অপশনের মাধ্যমে নিফটি এবং ব্যাংক নিফটির গতিপথ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল। ১৭ জানুয়ারি, ব্যাংক নিফটির মেয়াদ শেষের দিনে এই গড়মিলটি একেবারে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়, যার ফলে বাজারে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
সেবি-কে ক্রমাগত জানানো হয়
মায়াঙ্ক বনসাল সেবি-কে ইমেল এবং বিভিন্ন নথির মাধ্যমে জানান যে, জেন স্ট্রিট ক্রমাগত ভারতের ডেরিভেটিভ বাজারে কারচুপি করছে। তিনি আরও বলেন যে, এই কারচুপির কারণে কেবল বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হচ্ছে না, বরং বাজারের স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার উপরেও প্রভাব পড়ছে। সেবিও এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং তদন্ত শুরু করে।
নিয়মের সরাসরি লঙ্ঘন
বনসালের মতে, জেন স্ট্রিট ভারতীয় শেয়ার বাজারের একাধিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। তিনি সেবি অ্যাক্ট এবং সিকিউরিটিজ কন্ট্রাক্টস রেগুলেশন অ্যাক্ট (SCRA)-এর উল্লেখ করে বলেন যে, এই ধরনের ট্রেডিং কার্যকলাপ সম্পূর্ণ অবৈধ। বনসালের মতে, এটি কোনো সাধারণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল না, বরং একটি সুপরিকল্পিত কৌশল ছিল যার মাধ্যমে বাজারকে একটি বিশেষ দিকে ঘোরানো হয়েছিল।
ফর্মের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন
ট্রেডিং বিশেষজ্ঞদের মতে, জেন স্ট্রিটের মতো হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং ফার্মগুলি সাধারণত অত্যন্ত দ্রুত অর্ডার দেয় এবং সরিয়ে নেয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সেগুলি বোঝা সহজ নয়। কিন্তু যখন এই ফার্মগুলির কার্যকলাপ একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে বারবার ঘটতে থাকে এবং বাজারের গতিপথকে প্রভাবিত করে, তখন এটি একটি গুরুতর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
বাজারে উদ্বেগ
এই কেলেঙ্কারির খবর মিডিয়া এবং বিনিয়োগকারী মহলে ছড়িয়ে পড়তেই বাজারে উদ্বেগ বাড়ে। বিশেষ করে ডেরিভেটিভ ট্রেডিংয়ে সক্রিয় বিনিয়োগকারী এবং ব্রোকারেজ হাউসগুলিও এই কার্যকলাপ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। যদিও সেবির তরফে এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি, তবে সূত্রানুসারে তদন্ত চলছে।
মায়াঙ্ক বনসালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ
দুবাই-এর হেজ ফান্ডের চেয়ারম্যান মায়াঙ্ক বনসাল এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বনসাল ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে সেবি-র সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় নথি, চার্ট এবং তথ্য সরবরাহ করেছেন। বনসালের মতে, সময় থাকতে যদি এই কার্যকলাপ বন্ধ করা না হয়, তাহলে ভারতীয় শেয়ার বাজারের সম্মানহানি হতে পারে।
তদন্ত চলছে, সিদ্ধান্ত বাকি
এই মামলার তদন্ত এখনো চলছে। মায়াঙ্ক বনসালের দেওয়া তথ্য এবং ট্রেডিং প্যাটার্নগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেবি-র আধিকারিকরা এই মামলাটিকে "অগ্রাধিকার" দিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। এখন দেখার বিষয়, জেন স্ট্রিটের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং ভারতীয় বাজারের স্বচ্ছতা পুনরুদ্ধার করা যায় কিনা।