জিও-র দশম বর্ষে প্রবেশ: ভারতের ডিজিটাল যাত্রার গৌরবময় অধ্যায়
দশম বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে জিও। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি জানান, বিগত এক দশকে জিও ভারতের ডিজিটাল বিপ্লবের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে।তিনি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেন—জিও পরিবার ইতিমধ্যেই ৫০ কোটির বেশি গ্রাহকের সীমা অতিক্রম করেছে। তাঁর কথায়, এই মাইলফলক হল দেশের মানুষের অটল আস্থা ও সমর্থনের প্রতীক।
গ্রাহকের আস্থা: ভারতের ঘরে ঘরে জিও-র প্রভাব
জিও কেবল একটি টেলিকম কোম্পানি নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বদল আনার মাধ্যম। বিনামূল্যে ভয়েস কল থেকে শুরু করে সুলভ ইন্টারনেট, প্রতিটি পরিবারের হাতে পৌঁছে দিয়েছে সাশ্রয়ী ডিজিটাল সুবিধা। ভিডিও দেখা, ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহার, অনলাইন শিক্ষা ও ব্যবসা—সবই আজ জিও-র অবদানের ফল।
ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ভিত গড়ার কৃতিত্ব
আম্বানি সভায় উল্লেখ করেন, আধার, ইউপিআই, জনধন অ্যাকাউন্ট বা ডাইরেক্ট ব্যাংক ট্রান্সফারের মতো ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের প্রচলনে জিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে ভারত গড়ে তুলেছে আত্মবিশ্বাসী ও প্রযুক্তিনির্ভর নতুন প্রজন্ম। কেবল তাই নয়, ১০০-রও বেশি ইউনিকর্ন জন্ম দিয়ে দেশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে পৌঁছে দিয়েছে জিও।
বিশ্বের দ্রুততম ৫জি রোলআউট: এআই বিপ্লবের ভিত
ভারতে বিশ্বের দ্রুততম ৫জি রোলআউট ঘটিয়েছে জিও। এই সাফল্য কেবল দ্রুত ইন্টারনেট দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভারতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বিপ্লবের ভিত গড়ে তুলেছে। আম্বানি বলেন, "AI Everywhere for Everyone"—এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখেই আমরা দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সমান সুযোগ পৌঁছে দিতে চাই।
আর্থিক সাফল্য: সংখ্যাই প্রমাণ করছে জিও-র শক্তি
অর্থবর্ষ ২০২৫-এ জিও-র আয় দাঁড়িয়েছে ₹১,২৮,২১৮ কোটি (প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার), যা গত বছরের তুলনায় ১৭% বেশি। একই সময়ে EBITDA হয়েছে ₹৬৪,১৭০ কোটি (৭.৫ বিলিয়ন ডলার)। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে, জিও কেবল টেলিকম নয়, বরং বিপুল অর্থনৈতিক সম্পদ তৈরির এক প্রধান শক্তি।
শেয়ারবাজারে নামার প্রস্তুতি: আসছে জিও আইপিও
আম্বানি সভায় আরও ঘোষণা করেন, খুব শিগগিরই জিও শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হবে। লক্ষ্য ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জিও আইপিও বাজারে আনা। তিনি জানান, "সব প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার পরেই আমরা এই পদক্ষেপ নেব।" এই ঘোষণার পরেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: পাঁচটি প্রতিশ্রুতির রূপরেখা
জিও-র ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরে মুকেশ আম্বানি জানান, সংস্থার অগ্রযাত্রা ভরসা করছে পাঁচটি অঙ্গীকারের ওপর। এর মধ্যে প্রথম হলো প্রতিটি ভারতীয়কে মোবাইল ও হোম ব্রডব্যান্ড সংযোগের আওতায় আনা, আর দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি—দেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়া স্মার্ট ডিজিটাল পরিষেবা, যার অংশ জিও স্মার্ট হোম। জিও টিভি+ ও জিও টিভি ওএস, (৩) প্রতিটি ব্যবসা ও এন্টারপ্রাইজকে ডিজিটালভাবে ক্ষমতায়ন করা, (৪) ভারতে এআই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া এবং (৫) জিও-র নেটওয়ার্ক ভারতের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
ভারতের বাইরে জিও: বৈশ্বিক বাজারে স্বদেশি প্রযুক্তির ছাপ
সভায় সবচেয়ে বড় ঘোষণা আসে শেষের দিকে। মুকেশ আম্বানি জানান, জিও এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর অর্থ, ভারতীয় প্রযুক্তি ও সাশ্রয়ী ডিজিটাল সমাধান শিগগিরই বিদেশেও ছড়িয়ে পড়বে। এতে ভারতের প্রযুক্তি দক্ষতা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বমঞ্চে ভারতীয় কোম্পানির শক্ত অবস্থান স্পষ্ট হবে।
জিও-র ভবিষ্যৎ ভারত ও বিশ্বের ডিজিটাল মানচিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে
দশ বছরে জিও ভারতকে ডিজিটাল শক্তিধর দেশে পরিণত করেছে। এবার লক্ষ্য বিশ্ব। মুকেশ আম্বানির ঘোষণার মাধ্যমে স্পষ্ট হলো, জিও কেবল একটি টেলিকম পরিষেবা নয়, বরং এক নতুন যুগের প্রতীক। দেশের বাইরে পা রাখলে জিও-র প্রযুক্তি ও দৃষ্টি ভারতের তরুণ প্রজন্মের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি করবে। আর এই সাফল্য ভবিষ্যতের ভারতের এক অনন্য অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে।