সুভাষ কাপুরের ‘জলি এলএলবি ৩’ দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছে কোর্টরুম ড্রামা এবং কমেডির এক অনন্য সংমিশ্রণ। এবার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো – দুই জলির মুখোমুখি হওয়া। অক্ষয় কুমারের জলি মিশ্র এবং আরশাদ ওয়ারসির জলি ত্যাগী একই আদালতে একে অপরের সঙ্গে টক্কর দেয়।
- মুভি রিভিউ: জলি এলএলবি ৩
- অভিনয়শিল্পী: অক্ষয় কুমার, আরশাদ ওয়ারসি, সৌরভ শুক্লা, অমৃতা রাও, হুমা কুরেশি, গজরাজ রাও, সীমা বিশ্বাস এবং রাম কাপুর
- লেখক: সুভাষ কাপুর
- পরিচালক: সুভাষ কাপুর
- প্রযোজক: অলোক জৈন এবং অজিত আঁধারে
- মুক্তির তারিখ: 19 সেপ্টেম্বর 2025
- রেটিং: 3.5/5
এন্টারটেইনমেন্ট নিউজ: পরিচালক সুভাষ কাপুর ‘জলি এলএলবি ৩’ এর মাধ্যমে তার জনপ্রিয় কোর্টরুম ফ্র্যাঞ্চাইজিকে আরও শক্তিশালী করেছেন। এবার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো দুই জলির মুখোমুখি হওয়া। ছবিতে অক্ষয় কুমার জলি মিশ্র এবং আরশাদ ওয়ারসি জলি ত্যাগীর ভূমিকায় রয়েছেন, যারা একই আদালতে মুখোমুখি হন। এর ফলস্বরূপ হাসি, ব্যঙ্গ, আবেগ এবং সামাজিক বার্তার এমন এক সংমিশ্রণ তৈরি হয়েছে যা দর্শকদের পুরো ছবি জুড়ে ধরে রাখে।
আরশাদ এবং অক্ষয়ের একসাথে ফেরা
2013 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ‘জলি এলএলবি’ ছবিতে আরশাদ ওয়ারসি আইনজীবীর জলি চরিত্রে এত চমৎকার অভিনয় করেছিলেন যে দর্শকরা তাকে খুব পছন্দ করেছিলেন। 2017 সালের ‘জলি এলএলবি ২’ ছবিতে তার জায়গায় এসেছিলেন অক্ষয় কুমার। সেই সময় আরশাদ স্পষ্ট করেছিলেন যে প্রযোজকদের একজন বড় তারকা দরকার ছিল। এখন ‘জলি এলএলবি ৩’ ছবিতে উভয় অভিনেতাকে একসাথে দেখার সুযোগ মিলেছে, যা শুধু পুরনো বিতর্ককে পেছনে ফেলেই দেয়নি, বরং ছবির সবচেয়ে বড় শক্তিও প্রমাণিত হয়েছে।
ছবির গল্প
ছবির গল্পটি একটি কৃষক পরিবারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। একজন কৃষক তার জমি বাঁচানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু প্রভাবশালী শক্তি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের কারণে আত্মহত্যা করেন। তার বিধবা স্ত্রী সীমা বিশ্বাস ন্যায়বিচারের আশায় আদালতে যান। কোর্টরুমে প্রথমে জলি মিশ্র (অক্ষয় কুমার) এবং জলি ত্যাগী (আরশাদ ওয়ারসি) ভিন্ন ভিন্ন পক্ষে মুখোমুখি হন। কিন্তু পরে তাদের একসাথে কাজ করতে হয়, যার ফলে বিতর্ক আরও মজার হয়ে ওঠে।
গল্পের মূল বার্তা হলো – ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’, যা কৃষক ও সৈন্যদের গুরুত্বকে তুলে ধরে। ছবিতে কৃষকদের সমস্যার পাশাপাশি হাসি এবং ব্যঙ্গেরও কার্যকর মিশ্রণ রয়েছে।
অভিনয়
অভিনয়ের কথা বললে, অক্ষয় কুমার তার জলি মিশ্র চরিত্রে শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের সাথে উপস্থিত হন। আরশাদ ওয়ারসি বরাবরের মতো সাবলীল এবং স্বাভাবিক মনে হন। সীমা বিশ্বাস কৃষকের বিধবা স্ত্রীর চরিত্রে গভীর আবেগ নিয়ে আসেন এবং তার অভিনয় ছবির প্রাণ হয়ে ওঠে। সৌরভ শুক্লা জজ ত্রিপাঠীর ভূমিকায় কোর্টরুমে ভারসাম্য এবং বিনোদন উভয়ই প্রদান করেন। রাম কাপুর আইনজীবীর চরিত্রে প্রতিটি দৃশ্যে দৃঢ়তা দেখান এবং তার উপস্থিতি বিতর্ককে তীক্ষ্ণ করে তোলে।
গজরাজ রাও একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর চরিত্রে ছবির সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ প্যাকেজ। তার মুখের ভাবভঙ্গি এবং সংলাপ বলার ধরণ দর্শকদের দীর্ঘদিন মনে থাকে। শিল্পা শুক্লাও ছোট কিন্তু কার্যকর চরিত্রে ছাপ ফেলেন। তবে, অমৃতা রাও এবং হুমা কুরেশিকে কেবল নামমাত্র রাখা হয়েছে; তাদের চরিত্রগুলোতে গভীরতা নেই এবং গল্পের প্রতি তাদের কোনো অবদানও নেই।
পরিচালনা
পরিচালক সুভাষ কাপুর কোর্টরুম ড্রামাকে ব্যঙ্গ এবং হাস্যরসের সাথে নিপুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। অক্ষয় এবং আরশাদের যুগলবন্দীকে তিনি বজায় রেখেছেন এবং কৃষকদের সমস্যাগুলিকে সংবেদনশীলভাবে যুক্ত করেছেন। ক্যামেরা ওয়ার্ক এবং সংলাপ দর্শকদের কোর্টরুমের অংশ অনুভব করায়। তবে, আবেগপ্রবণ অংশগুলিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মেলোড্রামা এবং দুর্বল সঙ্গীত ছবির দুর্বলতা। তা সত্ত্বেও, পরিচালক সামাজিক বার্তা এবং বিনোদনের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে সফল হয়েছেন।
কিছু দৃশ্য অতি-নাটকীয়, এবং সেগুলোর বাস্তবতার ওপর ভরসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। নারী চরিত্রগুলির ভূমিকা দুর্বল এবং ছবির সঙ্গীতও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
দেখা উচিত নাকি নয়?
‘জলি এলএলবি ৩’ বিনোদন এবং সামাজিক বার্তা উভয়েরই একটি সংমিশ্রণ। অক্ষয় ও আরশাদের টক্কর, সীমা বিশ্বাসের আবেগপ্রবণ অভিনয়, রাম কাপুরের শক্তিশালী ওকালতি এবং গজরাজ রাওয়ের শক্তিশালী দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর চরিত্র – এই সবই ছবিটিকে দেখার মতো করে তোলে।