‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ ১৫০০ কোটি টাকার বাজেটে তৈরি হয়ে ৯ দিনে বিশ্বজুড়ে ৩,300 কোটি টাকা আয় করেছে, এবং ভারতেও ৬৫ কোটির বেশি ব্যবসা করে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে।
জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ: বিশ্বজুড়ে সিনেমা হলগুলিতে ৪ঠা জুলাই মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ এমন কিছু করে দেখিয়েছে যা আগে খুব কম সিনেমাই করতে পেরেছে। ১৫০০ কোটি টাকার মেগা বাজেটে তৈরি এই বিজ্ঞান-ভিত্তিক থ্রিলার সিনেমাটি মাত্র ৯ দিনে ৩,300 কোটি টাকার ব্যবসা করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারতেও সিনেমাটি এখনও পর্যন্ত ৬৫.১৫ কোটি টাকা আয় করে প্রমাণ করেছে যে ডাইনোসর-এর জগতে দর্শকদের গভীর আগ্রহ আজও বজায় রয়েছে।
১৫০০ কোটিতে তৈরি সিনেমা, ৩,300 কোটির ব্যবসা
‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ ফ্র্যাঞ্চাইজির এটি অষ্টম সিনেমা, যেটি গ্যারেথ এডওয়ার্ডস-এর পরিচালনায় তৈরি হয়েছে। ১৫০০ কোটির বিশাল বাজেট সত্ত্বেও, সিনেমাটি মুক্তির মাত্র ৯ দিনের মধ্যেই বাজেটের দ্বিগুণ আয় করেছে। সিনেমার ভিএফএক্স কোয়ালিটি, দৃশ্যমান প্রভাব, এবং গল্পের গভীরতা কেবল বিদেশি দর্শককেই নয়, ভারতীয় দর্শকদেরও মুগ্ধ করেছে। এই সিনেমাটি সেই কয়েকটি হলিউড সিনেমার মধ্যে একটি, যা ভারতীয় বক্স অফিসেও দারুণ ব্যবসা করেছে, বিশেষ করে যখন সিনেমাটি বলিউডের বড় সিনেমার তুলনায় তেমন প্রচার ছাড়াই মুক্তি পেয়েছিল।
গ্যারেথ এডওয়ার্ডস-এর পরিচালনা, স্কারলেট জোহানসন-এর শক্তিশালী উপস্থিতি
এবার ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’-এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন গ্যারেথ এডওয়ার্ডস, যিনি এর আগে গডজিলা এবং রোগ ওয়ান: এ স্টার ওয়ার্স স্টোরি-র মতো ব্লকবাস্টার সিনেমা পরিচালনা করেছেন। সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী স্কারলেট জোহানসন, যিনি এবার ‘জোরা বেনেট’ নামক একজন জেনেটিক বিজ্ঞানীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। সিনেমার গল্পটি তিনটি বিশাল ডাইনোসরের জেনেটিক উপাদান খুঁজে বের করা এবং সেগুলি নিয়ে পরীক্ষার একটি মিশনের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই মিশনটি শুধু একটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান নয়, এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ এবং বিপদ-সংকুল যাত্রা যা দর্শকদের সিট থেকে উঠতে দেয় না।
ভারতে ‘রিবার্থ’-এর জাদু
ভারতে যদিও সিনেমাটির প্রচার সীমিত ছিল, তবে দর্শকদের আগ্রহ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। Sacnilk-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সিনেমাটি ৯ম দিনে ৬৫.১৫ কোটি টাকা আয় করেছে। এইভাবে, এই সিনেমাটি ভারতেও ২০২৫ সালের সবচেয়ে বেশি আয় করা বিদেশি সিনেমাগুলির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই এবং হায়দ্রাবাদ-এর মতো বড় শহরগুলিতে সিনেমাটির অগ্রিম বুকিং-এর হিড়িক লেগেছিল। বিশেষ করে মাল্টিপ্লেক্সে তরুণ এবং শিশুদের ভিড় আবারও প্রমাণ করেছে যে জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ড আজও একইভাবে প্রভাবশালী।
ফ্র্যাঞ্চাইজির এ পর্যন্ত যাত্রা
জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ, এই ঐতিহাসিক ফ্র্যাঞ্চাইজির অষ্টম ভাগ। এর শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে ‘জুরাসিক পার্ক’ দিয়ে, যা স্টিভেন স্পিলবার্গ-এর পরিচালনায় তৈরি হয়েছিল এবং একটি কাল্ট ক্লাসিক হয়ে ওঠে। এরপর
- ১৯৯৭ সালে The Lost World: Jurassic Park
- ২০০১ সালে Jurassic Park III
- ২০১৫ সালে Jurassic World
- ২০১৮ সালে Jurassic World: Fallen Kingdom
- ২০১৯ সালে Battle at Big Rock
- ২০২২ সালে Jurassic World: Dominion
- এবং এখন ২০২৫ সালে Jurassic World: Rebirth
এই সমস্ত সিনেমাগুলি মিলিতভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৪ বিলিয়ন টাকার বেশি বিশ্বব্যাপী আয় করেছে। এই সংখ্যাটি জুরাসিক ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বিশ্বের সবচেয়ে সফল সিনেমা সিরিজগুলির মধ্যে একটি করে তোলে।
সিনেমার বৈশিষ্ট্য কী?
‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’-এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর ভিএফএক্স এবং বাস্তবসম্মত ডাইনোসরের অ্যানিমেশন। সিনেমায় নতুন ডাইনোসরের প্রজাতি, অজানা প্রাণীদের জগৎ এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এমন মিশ্রণ দেখা গেছে যা দর্শকদের চমকে দেয়। এছাড়াও, স্কারলেট জোহানসন-এর অভিনয়, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এবং চিত্রনাট্য সিনেমাটিকে আরও বেশি প্রভাবশালী করে তোলে।
ভারতে হলিউড সিনেমার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা
ভারতে এখন কেবল বলিউড নয়, হলিউড সিনেমাগুলিকেও নিয়ে দারুণ উন্মাদনা দেখা যায়। বিশেষ করে যখন কোনও প্রতিষ্ঠিত ফ্র্যাঞ্চাইজির কথা আসে, তখন দর্শক তা মিস করেন না। মার্ভেল, ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস এবং এখন জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের মতো সিনেমাগুলি ভারতীয় বক্স অফিসে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ‘রিবার্থ’-এর সাফল্য প্রমাণ করে যে ভারতীয় দর্শক শুধুমাত্র হিন্দি সিনেমা পছন্দ করেন না, বরং ভালো এবং প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ বিদেশি সিনেমাগুলিকেও মন খুলে গ্রহণ করেন।