বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে এবং এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৫ই অগাস্ট লাল কেল্লা থেকে বড় ঘোষণা করেছেন। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে সরকার ১৯ শতকের সমাজ সংস্কারক জ্যোতিবা ফুলের দ্বিতীয় জন্মবার্ষিকী জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করবে।
নয়াদিল্লি: বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি বড় রাজনৈতিক চাল দিয়েছেন। ২০২৫ সালের ১৫ই অগাস্ট লাল কেল্লার প্রাচীর থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী সমাজ সংস্কারক জ্যোতিবা ফুলের ২০০তম জন্মবার্ষিকী জাতীয় স্তরে পালনের ঘোষণা করেছেন।
এটি কেবল ঐতিহাসিক গুরুত্বের সিদ্ধান্ত হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে না, রাজনৈতিকভাবেও এই পদক্ষেপ সরাসরি ওবিসি (Other Backward Classes) ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জ্যোতিবা ফুলের ২০০তম জন্মবার্ষিকীর भव्य आयोजन
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে বলেন: আগামী সময়ে আমরা মহান সমাজ সংস্কারক জ্যোতিবা ফুলের ২০০তম জন্মবার্ষিকী পুরো দেশে পালন করব। ফুলের নীতি এবং 'পিছিয়ে পড়াদের অগ্রাধিকার' আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। ফুলেকে জাতিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং মহিলাদের শিক্ষার সমর্থনে পরিচিত। তাঁর স্ত্রী সাবিত্রীবাঈ ফুলেকে মহিলা শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়।
মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেবল সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে একটি পদক্ষেপ নয়, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ওবিসি সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা। জ্যোতিবা ফুলের মালি জাতি থেকে এসেছিলেন, যাদের বিহার এবং উত্তর ভারতে কুশওয়াহা এবং কোয়েরি-র মতো মধ্যবর্তী জাতিগুলোর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এই শ্রেণী বিহারের রাজনীতিতে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি ফুলের জন্মবার্ষিকীকে জাতীয় উৎসবে পরিণত করে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে যে দলের ফোকাস ওবিসি ভোটব্যাঙ্কের উপর। এই সেই বর্গ, যারা বিহারের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে বড় ভূমিকা রেখেছে।
মোদীর বার্তা: 'পিছিয়ে পড়াদের অগ্রাধিকার'
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন যে তাঁর সরকার স্বচ্ছ নীতির মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া এবং বঞ্চিত শ্রেণীকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন: তারা দলিত, পীড়িত, শোষিত বা বঞ্চিত যেই হোক না কেন, সরকারের তাদের জন্য জন-সমর্থক হওয়া উচিত। আমাদের পরিকল্পনা কেবল কাগজে নয়, বরং জমিতেও বাস্তবায়িত হচ্ছে।
মোদী আরও বলেন যে তাঁর সরকার 'স্যাচুরেশন' (Saturation)-এর উপর জোর দেয়। অর্থাৎ, যে কোনও প্রকল্পের সুবিধা প্রতিটি যোগ্য ব্যক্তির কাছে পৌঁছনো উচিত এবং কোনও অভাবী মানুষ যেন পিছিয়ে না থাকে।
নির্বাচনী কৌশল এবং ওবিসি সমীকরণ
বিহারে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপির এই উদ্যোগ কেবল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
- বিহারের রাজনীতিতে ওবিসি-র অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ফুলের প্রভাব বিশেষভাবে সেই জাতিগুলোর উপর রয়েছে, যারা কৃষিকাজ এবং বাগান পরিচর্যার সঙ্গে যুক্ত।
- এই জাতিগুলোর সমর্থন নির্বাচনে নির্ণায়ক হতে পারে।
বিজেপি এর আগে ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরের ঐতিহ্যকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার কৌশল নিয়েছে। এখন ফুলের জন্মবার্ষিকী পালনের ঘোষণাও সেই পথের পরবর্তী পদক্ষেপ। মোদী আরও বলেন যে তাঁর সরকার কেবল প্রকল্পের ঘোষণা করে না, বরং তাদের প্রভাব নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে। তিনি একে 'সামাজিক ন্যায়বিচারের বাস্তব রূপ' বলে অভিহিত করেছেন।