হিন্দুধর্মে তীজ ব্রতগুলির একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। প্রতিটি তীজ নিজের মধ্যে একটি বিশেষ অনুভূতি এবং ঐতিহ্য বহন করে। এদের মধ্যে অন্যতম হল কজরী তীজ, যা প্রতি বছর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে পালিত হয়। এই তীজ বিশেষভাবে মহিলাদের জন্য। তা বিবাহিত মহিলা হোক বা অবিবাহিত কন্যা, কজরী তীজ তাদের জীবনে সৌভাগ্য, সুখ এবং সমৃদ্ধি কামনার সঙ্গে জড়িত।
২০২৫ সালে কজরী তীজের উৎসব ১২ই আগস্ট পালিত হবে। এই দিনটি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত নয়, এর মধ্যে সাংস্কৃতিক এবং আবেগপূর্ণ গভীরতাও লুকানো থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কজরী তীজ কেন বিশেষ, এর পূজা কিভাবে করা হয় এবং এতে কী বিশেষত্ব রয়েছে।
কজরী তীজের উৎসব কোথায় কোথায় পালিত হয়
কজরী তীজ মূলত উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়। উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান এবং বিহারে এই উৎসব খুব জনপ্রিয়। গ্রামীণ এলাকায় এর রং আরও গভীর হয়। মহিলারা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন, দোলনায় দোলেন, লোকগান গান এবং সম্মিলিতভাবে ব্রত ও পূজা করেন।
মহিলারা কেন এই ব্রত রাখেন
কজরী তীজের ব্রত বিবাহিত এবং অবিবাহিত উভয় মহিলাদের জন্য বিশেষ। বিবাহিত মহিলারা তাদের স্বামীর দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য এবং অখণ্ড সৌভাগ্যের জন্য এই ব্রত রাখেন। অন্যদিকে, অবিবাহিত কন্যারা কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গী পাওয়ার ইচ্ছায় এই ব্রত করেন।
এই দিনে মহিলারা নির্জলা ব্রত রাখেন অর্থাৎ সারাদিন জল পান করা থেকে বিরত থাকেন। সারা দিন ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর পূজা করা হয় এবং সন্ধ্যায় চাঁদ দেখে ব্রত ভাঙা হয়।
কজরী তীজের পূজার পদ্ধতি
কজরী তীজের দিন মহিলারা সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠেন। স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরেন এবং পূজার প্রস্তুতি করেন। পূজার স্থানে নিম গাছের ডাল লাগানো হয়। ভগবান শিব ও মা পার্বতীর মূর্তি বা ছবি চৌকির উপর স্থাপন করা হয়।
তাদের ফুল, ফল, মিষ্টি এবং বিবাহের সামগ্রী যেমন চুড়ি, টিপ, সিঁদুর, মেহেন্দি ইত্যাদি অর্পণ করা হয়। পূজার সময় মহিলারা কজরী তীজের ব্রতকথা শোনেন। সন্ধ্যায় যখন চাঁদ ওঠে, তখন তাদের অর্ঘ্য দেওয়া হয় এবং তার পরে ব্রত ভাঙা হয়।
কজরী গানে মুখরিত হয় আঙিনা
কজরী তীজে শুধু পূজা-পাঠই নয়, লোক ঐতিহ্যেরও বিশেষ স্থান রয়েছে। এই দিনে মহিলারা ঐতিহ্যবাহী কজরী গান গান। এই গানগুলি শ্রাবণের বৃষ্টি, প্রেম এবং বিরহের অনুভূতিতে পরিপূর্ণ থাকে। গ্রামের মহিলারা দলবদ্ধভাবে দোলনায় দোলেন এবং গানের মাধ্যমে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
কজরী তীজের এই সঙ্গীতময় দিকটি এই উৎসবকে আরও বিশেষ করে তোলে। এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংযোগের মাধ্যমও বটে।
ব্রতে কি খাওয়া হয়
কজরী তীজের ব্রত নির্জলা হয়, তাই সারাদিন কিছু খাওয়া যায় না। সন্ধ্যায় চাঁদকে অর্ঘ্য দেওয়ার পরে ব্রত খোলা হয়। এই দিনে মহিলারা পুরি, ক্ষীর, মিষ্টি রুটি এবং ঘরে তৈরি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি খান। যব, গম, ছোলা এবং চাল থেকে তৈরি জিনিস বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এই খাবার সাত্ত্বিক হয় এবং পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে গ্রহণ করা হয়। অনেক বাড়িতে বিশেষভাবে এই দিনে ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করা হয় এবং উৎসবের আনন্দ উপভোগ করা হয়।
কজরী তীজ এবং নারী ঐতিহ্যের সম্পর্ক
কজরী তীজ শুধু পূজা-পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি সামাজিক ঐতিহ্যও। এই উৎসব নারী শক্তি, ভক্তি ও ত্যাগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে নারীদের সামাজিক ভূমিকা, পারিবারিক দায়িত্ব এবং সাংস্কৃতিক সংযোগ প্রতিফলিত হয়।
প্রতি বছর কজরী তীজ একটি নতুন উদ্দীপনা, নতুন সংকল্প এবং নতুন আনন্দ নিয়ে আসে। এই উৎসব মহিলাদের একত্রিত করে, তাদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ দেয় এবং জীবনে আধ্যাত্মিকতার রং যোগ করে।
কজরী তীজ সম্পর্কিত বিশ্বাস
- যে মহিলারা সত্যিকারের মন দিয়ে এই ব্রত পালন করেন, তারা সুখের দাম্পত্য জীবন লাভ করেন
- মাতা পার্বতীর কৃপায় ঘরে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে
- অবিবাহিত কন্যারা কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গী পাওয়ার বিশ্বাসও এর সঙ্গে যুক্ত
- ঐতিহ্যবাহী গান এবং দোলনার মাধ্যমে এই উৎসব জীবনে আনন্দ এবং ভারসাম্য নিয়ে আসে
কজরী তীজের এই উৎসব প্রতি বছর মহিলাদের জীবনে একটি নতুন বিশ্বাস, আশা এবং সাংস্কৃতিক চেতনা নিয়ে আসে। পূজা, ব্রত এবং লোক সংস্কৃতির এই সংমিশ্রণ এটিকে বিশেষ করে তোলে।