কালো জাদু: প্রেম বাঁচাতে গিয়ে তরুণীর বিপদ

কালো জাদু: প্রেম বাঁচাতে গিয়ে তরুণীর বিপদ

রাজস্থানের একটি ছোট গ্রামের এই সত্য ঘটনা, যেখানে ২২ বছর বয়সী পূজা (পরিবর্তিত নাম) এবং ২৫ বছর বয়সী রোহিত (পরিবর্তিত নাম) একে অপরের প্রতি অগাধ ভালোবাসতেন। তাঁরা দু'জন ভিন্ন জাতিভুক্ত ছিলেন, তাই পরিবারকে তাঁদের সম্পর্কের বিষয়ে রাজি করানো সহজ ছিল না। যখন পরিবার তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি হলো না, তখন পূজা তাঁর প্রেম বাঁচানোর জন্য অন্য পথ বেছে নিলেন— কালো জাদু।

তান্ত্রিকের খোঁজে প্রেমিকা

প্রেমে ভেঙে পড়া পূজাকে গ্রামের এক মহিলা পরামর্শ দিলেন যে, যদি সে কোনও তান্ত্রিকের সঙ্গে দেখা করে প্রেমিককে চিরকালের জন্য নিজের করে নিতে পারে, তাহলে তাঁরা দু'জন কখনও আলাদা হবে না। পূজা কিছু না ভেবেই এই পরামর্শ মেনে নিলেন এবং এক তান্ত্রিক বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। তান্ত্রিক পূজা-কে বললেন, একটি বিশেষ বশীকরণ তন্ত্র করলে রোহিত সম্পূর্ণরূপে তাঁর বশে চলে আসবে।

কালো জাদুর প্রথম রাত

পূজা তান্ত্রিকের কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করলেন। তিনি প্রথম রাতে শ্মশানে গিয়ে ভয়কে উপেক্ষা করে তান্ত্রিকের বলা সমস্ত টোটকা করলেন— একটি লাশের ছাই, মাটি এবং রোহিতের ছবি নিয়ে রাতে বিশেষ মন্ত্র জপ শুরু করলেন। তাঁর আশা ছিল, তাঁর হারানো প্রেম ফিরে আসবে। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি পরিবর্তন অনুভব করলেন— রোহিতের আচরণ আগের মতো রইল না, সে হঠাৎই পূজার সঙ্গে দেখা করতে এবং কথা বলতে শুরু করল। পূজা-র মনে হতে লাগল, কালো জাদু কাজ করতে শুরু করেছে।

প্রেমিকের পরিবর্তনশীল আচরণ

কিছুদিনের মধ্যেই রোহিতের আচরণ অদ্ভুতভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করল। সে সর্বক্ষণ পূজার কাছে থাকতে চাইত এবং নিজের বাড়ি, পরিবার ও বন্ধুদের থেকে দূরে থাকতে শুরু করল। সে প্রায়শই চুপচাপ ও অন্যমনস্ক থাকত, যেন গভীর কোনো উদ্বেগে রয়েছে। তাঁর মা-বাবার তাঁর অবস্থা দেখে চিন্তা হতে লাগল এবং তাঁরা তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন, কিন্তু মেডিকেল রিপোর্টে কিছুই ধরা পড়ল না। তখনই একদিন পাড়ার এক বৃদ্ধা মহিলা রোহিতকে দেখে বললেন, 'এর উপর কেউ তন্ত্র করেছে, তাই এর এই অবস্থা হয়েছে।'

সত্য সামনে এল, পর্দা ফাঁস

পরিবারের লোকেরা এক জ্যোতিষীর সাহায্য নিলেন যিনি জানালেন, রোহিতের উপর বশীকরণের প্রভাব পড়েছে এবং কোনো মেয়ে তাকে কালো জাদু দিয়ে বেঁধে রেখেছে। যখন রোহিতের সঙ্গে ধীরে ধীরে কথা বলা হলো, তখন সে পূজার নাম নিলো এবং জানালো যে, সে অনেকবার তাকে অদ্ভুত ধরনের পূজা করতে বলত, লাল সুতো পরতে বলত এবং তাবিজও দিত।

পরিবার এই বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলো। যখন পুলিশ পূজা-কে জিজ্ঞাসাবাদ করলো, তখন সে সব স্বীকার করে নিল— 'আমি শুধু তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, তাই এসব করেছি।'

তান্ত্রিক বাবা গ্রেপ্তার, পূজাকে সতর্কবার্তা

পুলিশ তান্ত্রিক বাবাকেও হেফাজতে নিলো, যিনি আগেও বহু লোককে কুসংস্কারে ফেলেছিলেন। পূজার বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর মামলা চলেনি, কারণ সে প্রথমবার এমনটা করছিল এবং তার উদ্দেশ্য ছিল কাউকে ক্ষতি করা নয়। যদিও, তাকে সামাজিক কাজে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, যাতে সে কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

সমাজ কী শিক্ষা পায়?

এই গল্প থেকে এটা স্পষ্ট যে, কুসংস্কারে ডুবে থাকা প্রেম একটি বিপজ্জনক মোড় নিতে পারে। প্রেম এবং সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে হলে, প্রয়োজন পারস্পরিক আলোচনা, বোঝাপড়া এবং বিশ্বাস— তন্ত্র, মন্ত্র এবং কালো জাদু নয়। আজকের আধুনিক যুগেও যদি আমরা প্রেমকে তান্ত্রিক এবং কালো জাদুর সাহায্যে বাঁচাতে চাই, তবে তা নিজেকে ধোঁকা দেওয়ার মতো।

এই গল্পটি কেবল পূজা ও রোহিতের নয়, বরং সেই সমস্ত তরুণ-তরুণীদেরও, যারা প্রেমের নামে যেকোনো সীমা অতিক্রম করতে প্রস্তুত। যখন সম্পর্ক কুসংস্কারের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তখন তাদের ভেঙে যাওয়া অনিবার্য। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন সঠিক চিন্তা, শিক্ষা ও উপলব্ধির। যদি আমরা প্রেমকে পবিত্র রাখতে চাই, তবে আমাদের কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

Leave a comment