হরিদ্বারে কাওাড় যাত্রা শুরুর আগে, সন্ত সমাজের তরফে আরও একবার আস্থা এবং ধর্মীয় মর্যাদাকে কেন্দ্র করে আওয়াজ তোলা হয়েছে। জুনা আখড়ার মহamandaleshwar স্বামী যতীন্দ্রানন্দ গিরি মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিকে চিঠি লিখে কাওাড় নির্মাণের প্রক্রিয়ায় যুক্ত কারিগরদের ধর্মীয় পটভূমি যাচাই করার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এটা নিশ্চিত করতে হবে যে কাওাড় নির্মাণ সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মানদণ্ড মেনে হয়, যাতে তীর্থযাত্রীদের আস্থার সঙ্গে কোনো আপোস না হয়। তিনি নির্মাণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে একটি প্রমাণীকরণ ব্যবস্থা চালু করারও সুপারিশ করেছেন।
এই প্রথমবার নয় যে এমন দাবি উঠেছে। উত্তরপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যে আগেও কাওাড় এবং তার সঙ্গে জড়িত সামগ্রী নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, যেখানে ভিন্ন ধর্মের দোকানদার বা নির্মাতাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এখন উত্তরাখণ্ডেও এই বিষয়টা ফের ধর্মীয় শুচিতা এবং অনুভূতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আলোচনায় এসেছে। যদিও, এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
কাওাড় যাত্রা শুরুর আগে সাধুদের তীব্র হুঁশিয়ারি
আসন্ন কাওাড় যাত্রার প্রাক্কালে, জুনা আখড়ার মহamandaleshwar স্বামী যতীন্দ্রানন্দ গিরি এবং স্বামী যশবীর মহারাজ উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিকে চিঠি লিখে কাওাড় নির্মাণ প্রক্রিয়ার উপর সরকারি নজরদারির দাবি জানিয়েছেন। সাধুরা চিঠিতে স্পষ্ট করেছেন যে, তীর্থযাত্রীদের আস্থার প্রতীক কাওাড় তখনই সুরক্ষিত থাকতে পারে, যখন এর নির্মাণে যুক্ত কারিগরদের ধর্মীয় ও সামাজিক পটভূমির গভীর তদন্ত হবে। তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মানকীকরণ (standardization) চালু করা হোক, যা কাওাড় নির্মাণকে পবিত্র, স্বচ্ছ ও বিতর্কহীন রাখবে।
সাধুদের প্রধান চিন্তা
স্বামী যতীন্দ্রানন্দ গিরি লিখেছেন যে, কাওাড় যাত্রা কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং কোটি কোটি তীর্থযাত্রীর আস্থার প্রতীক। এর নির্মাণে জড়িত কারিগরদের পটভূমির দিকে নজর রাখা জরুরি, কারণ যদি নির্মাণ প্রক্রিয়া সাধারণভাবে কোনো ধর্মীয় রীতিনীতির অবমাননা করে, তবে এর ফলে তীর্থযাত্রীদের অনুভূতিতে আঘাত লাগার ঝুঁকি বাড়ে। সাধুরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন যে, একটি মানসম্মত যাচাই ব্যবস্থা (standardized verification system) তৈরি করা হোক, যা প্রতিটি কাওাড় নির্মাণের প্রক্রিয়া, কারিগরদের পটভূমি এবং সামগ্রীর গুণমান পরীক্ষা করতে পারে।
স্বামী যশবীর মহারাজ বলেছেন, তীর্থযাত্রীদের আস্থার প্রতীক কাওাড়কে পবিত্রতা ও মর্যাদার সঙ্গে তৈরি করতে হবে, অ-ধর্মীয় উপাদানগুলি যেন এটিকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে।
বিতর্কের মূল: থুতু জিহাদ এবং 'গো-হত্যা'র অভিযোগ
সম্প্রতি, সারা দেশে থুতু জিহাদ, গো-হত্যা এবং ধর্মীয় শপথের মতো বিতর্কগুলি আস্থাসংক্রান্ত আলোচনাকে তীব্রতা দিয়েছে। এই সুস্থ বিতর্কের ধারাবাহিকতায় সাধুরা কাওাড় নির্মাণকেও একটি বিবেচনার বিষয় করে তুলেছেন। হিন্দু সংগঠনগুলি আওয়াজ তুলেছে যে, যদি মুসলিম কারিগররা কাওাড় নির্মাণে জড়িত থাকেন, তবে এটিকে ধর্মীয়-শুদ্ধতা এবং স্বচ্ছতার কষ্টিপাথরে যাচাই করা হোক, যাতে কোনো প্রকার অভিযোগ বা সন্দেহের অবকাশ না থাকে।
কিছু সংগঠনের বক্তব্য, যদি নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা আসে, তবে এর প্রমাণীকরণ ও যাচাইকরণ জরুরি—অন্যথায়, এটি আস্থার প্রতি উপহাস হতে পারে।
সরকারি মাপকাঠি এবং প্রমাণীকরণ ব্যবস্থা
সাধুদের পত্রালাপ এবং সংগঠনগুলির দাবির সারমর্ম হল, কাওাড় যাত্রার পবিত্রতা ও শ্রদ্ধাকে রক্ষা করতে রাজ্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে:
• নির্মাণের মানদণ্ড স্থির করতে হবে, যা আকার, সামগ্রী এবং কারিগরদের পটভূমির মতো বিষয়গুলি পরীক্ষা করবে।
• যাচাই ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা কাওাড় নির্মাণের স্থানে পরিদর্শন ও প্রমাণীকরণ করতে পারবে।
• যদি নির্মাণে কোনো প্রকার ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অমিল পাওয়া যায়, তবে তা অবিলম্বে চিহ্নিত করতে হবে।
এছাড়াও, সাধুরা সম্প্রদায় ও ধর্মীয় সংগঠনগুলির কাছে আবেদন করেছেন যে, তাঁরা যেন সমাজে ওঠা এই সংবেদনশীল আস্থার বিষয়টিকে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করেন।
প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার জন্য মিশ্র অপেক্ষা
উত্তরাখণ্ডে এই বিষয়টি বেশ সংবেদনশীল বলে মনে করা হচ্ছে। বিজেপি সরকার বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধুদের দাবির বিষয়ে কোনো সরকারি মন্তব্য করেনি। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও কোনো সুস্পষ্ট বিবৃতি জারি করা হয়নি, যার ফলে এটা স্পষ্ট হচ্ছে না যে সরকার এই বিষয়ে কোনো সরকারি পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত কিনা।