চিরস্মরণীয় কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমারের জন্মদিন (৪ অগস্ট) সামনে রেখে শহর কলকাতা সাজছে সংগীতের আলোয়। মাসের শেষে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে গান গাইবেন তাঁর নাতনি মুক্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়। এই সন্ধ্যায় থাকবেন কিশোর-পুত্র অমিত কুমারও। বহু প্রতীক্ষিত এই পরিবেশনায় মুক্তিকার কণ্ঠে নতুন প্রজন্ম শুনবে সোনালি যুগের সুর।
নাতনি হিসেবে স্টেজে—তিনবারের অভিজ্ঞতা
এই প্রথম নয়, কলকাতায় এটি মুক্তিকার তৃতীয় স্টেজ পারফরম্যান্স। তাঁর কথায়, “প্রথমবার যখন গান গাইছিলাম, তখন জানার পর আমি কিশোর কুমারের নাতনি, শ্রোতারা যেন আরও গভীর আবেগে আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন।” শুদ্ধ আবেগ ও পারিবারিক সংগীতধারার উত্তরাধিকার বহন করেই নিজের পথ তৈরি করছেন তিনি।
কিশোর কুমারের উত্তরাধিকার, মুক্তিকার কাঁধে অনুচ্চ চাপ
নাতনি হিসেবে নিজেকে সব সময় এক অদৃশ্য তুলনার মধ্যে খুঁজে পান মুক্তিকা। “আমি জানি আমি কিশোর কুমার বা বাবার মতো কখনও হতে পারব না। তাই চাই মানুষ আমাকে শুধু মুক্তিকা হিসেবেই দেখুক।” শিল্পীর এই খোলামেলা স্বীকারোক্তিতে ফুটে ওঠে আত্মবিশ্বাস ও বাস্তবতা—যা নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার।
না প্লেব্যাক, ভালোবাসা স্টেজের, উপদেশ ঠাকুরদার
বাবা অমিত কুমারের ইন্ডাস্ট্রি-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা দেখে প্লেব্যাকের দুনিয়া থেকে দূরে থাকাই বেছে নিয়েছেন মুক্তিকা। তাঁর কথায়, “স্টেজ শো আমার সবচেয়ে আপন। ঠাকুরদা বাবাকে বলতেন—স্টেজে গেলে ভাববে পিকনিকে গেছ।” এই দর্শনেই বিশ্বাস করেন মুক্তিকা, এবং সেই আবহেই গান করেন মনের মতো।
এখনও আত্মবিশ্বাস খুঁজছেন নিজের সিঙ্গল নিয়ে
যদিও নিজের মিউজিক্যাল সিঙ্গল প্রকাশের ইচ্ছা আছে, মুক্তিকা জানালেন তিনি এখনো পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী নন। মাত্র দেড় বছর ধরে গান গাইছেন তিনি। “কিছুটা সময় নিতে চাই, নিজেকে তৈরি করে তারপর গান প্রকাশ করব,” বললেন ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে।
গানের জগতে প্রতিযোগিতা নয়, চাপ শুধুই পারিবারিক নামের
প্রতিযোগিতা নিয়ে মুক্তিকার স্পষ্ট বক্তব্য, “ইন্ডাস্ট্রিতে নেই, তাই বাইরের প্রতিযোগিতা অনুভব করি না। আমার আসল কম্পিটিশন নিজের সঙ্গেই। আর তুলনা? সেটা তো সব সময় ঠাকুরদার সঙ্গেই হয়। মুশকিল এখানেই।” এই সৎ উপলব্ধিই হয়তো তাঁকে আলাদা জায়গা করে দিচ্ছে শ্রোতামনে।
পুরোনো গানেই মন, বলিউড-হলিউডে বাঁধা শিকড়
পুরোনো দিনের গানই তাঁর প্রিয়। বাড়িতে মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছেন সংগীতের পরিবেশ। শোনেন সুনিধি চৌহান ও মোনালি ঠাকুরকেও, তবে পুরনো হিন্দি আর হলিউড গানই সবথেকে কাছের। তাঁর কথায়, “জেন জি হলেও গান তো সেই সোনালি যুগেরই শুনে বড় হয়েছি।
বাবার ‘ক্রিটিক’ থেকে উৎসাহদাতা হয়ে ওঠার গল্প
শুরুতে বাবা অমিত কুমার ছিলেন তাঁর সবচেয়ে বড় সমালোচক। পরে মা’র হস্তক্ষেপে বদল আসে সেই রূপে। এখন বাবাই সবসময় বলেন, “তুমি ভালো করছ।” বাবার গঠনমূলক সমালোচনা আর ঠাকুরদার শিক্ষার ছায়ায় গড়ে উঠছে মুক্তিকার গায়কী।
কলকাতা মানেই বিরিয়ানি, গান মানেই আবেগ
কলকাতা এলে মুক্তিকার মনে পড়ে শৈশবের স্মৃতি। স্কুলের বন্ধুরা যখন জানতে পারত, তিনি কিশোরের নাতনি—তাদের ব্যবহারই বদলে যেত। “কলকাতায় নামলেই বিরিয়ানির গন্ধ পাই,” বললেন তিনি হেসে। ‘জীবন কে হার মোড় পে’ অনুষ্ঠানেও থাকবে সেই স্বাদ আর সুরের মেলবন্ধন।