কলকাতা গণধর্ষণ মামলা: সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তের আবেদন

কলকাতা গণধর্ষণ মামলা: সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তের আবেদন

কলকাতা-য় এলএলবি-র এক ছাত্রীর গণধর্ষণের চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সত্যম সিং সোমবার, ৩০শে জুন, ২০২৫-এ এই আবেদনটি দাখিল করেন, যেখানে তিনি এই মামলার সিবিআই তদন্ত আদালতের তত্ত্বাবধানে করার আবেদন জানিয়েছেন।

ছাত্রীর উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা: কলকাতা-য় এক এলএলবি-র ছাত্রীর সাথে সংঘটিত গণধর্ষণের ঘটনা এবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সত্যম সিং এই গুরুতর মামলার সিবিআই-এর তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্তের আবেদন জানিয়ে সোমবার (৩০শে জুন, ২০২৫) একটি আবেদন পেশ করেছেন। আবেদনকারী আদালতকে অনুরোধ করেছেন, এই ঘটনার তদন্ত যেন একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করা হয় এবং একই সাথে নির্যাতিতাকে উপযুক্ত নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়।

এই ঘটনাটি ২৫শে জুন প্রকাশ্যে আসে, যখন সাউথ কলকাতা ল' কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী তার কলেজেরই দুই সিনিয়র ছাত্র এবং এক প্রাক্তন ছাত্রের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ আনেন। এই অভিযোগের পর কলকাতা এবং সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

তৃণমূল নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যও আবেদনে অন্তর্ভুক্ত

আবেদনে বিশেষভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক মদন মিত্রের সেই মন্তব্যের উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তারা कथितভাবে নির্যাতিতার সম্পর্কে অপমানজনক এবং অসংবেদনশীল মন্তব্য করেছিলেন। আবেদনকারীর যুক্তি, নেতাদের এমন মন্তব্যের কারণে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে এবং এর ফলে নির্যাতিতার আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে।

রাজনৈতিক দলগুলির বিক্ষোভ

এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতেও তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস পার্টি এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। রবিবার কংগ্রেস খিদিরপুর এলাকায় একটি র‍্যালি বের করে, যেখানে বিজেপি যুব মোর্চার কর্মীরা হাতিবাগানে প্রতিবাদ মিছিল করে। বিক্ষোভকারীরা পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেন।

রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রবিবার দলীয় কর্মীদের সাথে কলকাতা-য় একটি মিছিল করেন এবং 'আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা'র দাবিতে সোচ্চার হন। তিনি বলেন, যতক্ষণ না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে সরানো হবে, ততক্ষণ বাংলায় মহিলাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে না। মুখ্যমন্ত্রী অপরাধীদের সুরক্ষা দেন এবং নির্যাতিত মহিলাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

সুপ্রিম কোর্টে ন্যায়বিচারের আবেদন

আইনজীবী সত্যম সিং-এর দায়ের করা আবেদনে বলা হয়েছে, এই মামলায় রাজনৈতিক চাপ এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে নিরপেক্ষ তদন্ত কঠিন। তিনি যুক্তি দেন, যদি সিবিআই আদালতের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করে, তবে নির্যাতিতার ন্যায় পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, নির্যাতিতা এবং তার পরিবার ক্রমাগত হুমকি পাচ্ছেন, যা তাদের জীবনকে সংকটের মধ্যে ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্যা বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। বিরোধী দলগুলি রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে রাজ্য সরকারকে ঘেরাও করেছে। মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআইএম) এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও সরকারের গাফিলতির অভিযোগ করে বলেছে যে, বাংলায় মহিলাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।

তবে, রাজ্য সরকারের বক্তব্য, পুলিশ এই মামলার দ্রুত তদন্ত করছে এবং কোনো দোষীকে রেহাই দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে বলা হয়েছে, মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।

Leave a comment