বিগত কয়েক মাসে ধীরে ধীরে বেড়েছে সোনার দাম। বর্তমানে সেই দাম এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে মধ্যবিত্ত বাঙালির স্বপ্নভঙ্গের পালা চলছে। বিশেষ করে বিয়ের মরশুমে গয়না উপহার দেওয়া বা নিজের জন্য কেনার বিষয়টি অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। পরিবারে আত্মীয়স্বজনের বিয়েতে যেসব সোনার গহনা উপহার দেওয়া হত, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে ঘরে ঘরে।
গয়নার বদলে এখন চেক বা ক্যাশ গিফ্ট! মূল্যবৃদ্ধিতে রীতিমতো কাঁপছে মধ্যবিত্ত
এই মুহূর্তে কলকাতায় পাকা সোনার দাম (২৪ ক্যারাট) কর বাদে প্রতি ১০ গ্রামে ৯৭,৭৫০ টাকা। খুচরো বাজারে এই সোনার দাম ৯৮,২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। ২২ ক্যারাট হলমার্কযুক্ত গয়নার দাম হয়েছে ৯৩,৪০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। অর্থাৎ, যাঁরা ভাবছেন গয়না কিনে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে যাবেন, তাঁদের এবার নতুন করে ভাবতে হবে।
রুপোতেও আগুন—খুচরো বাজারে দাম ছুঁল ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা প্রতি কেজিতে!
শুধু সোনাই নয়, রুপোর দামেও তীব্র ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খুচরো রুপোর দাম এই মুহূর্তে প্রতি কেজিতে ১,১২,০০০ টাকা। যাঁরা পুজো বা উপহার দেওয়ার জন্য রুপো ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্যও এটি এক বড় ধাক্কা। চাহিদা থাকলেও বিক্রি কমেছে বলে জানাচ্ছেন দোকানদাররা।
কর এবং মজুরি—এই দুইয়ে আসল দাম বাড়ছে আরও অনেকটা
উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই দামগুলোর সঙ্গে জিএসটি (৩%) এবং গয়না তৈরির মজুরি যুক্ত হলে ক্রেতার পকেট থেকে আরও মোটা অঙ্ক খসছে। গয়নার মজুরি আলাদা আলাদা দোকানে আলাদা রকম হয়। কোথাও ৫ শতাংশ, কোথাও আবার ১২ শতাংশ পর্যন্তও পড়ে যেতে পারে। ফলে ক্রেতাদের আগে থেকেই বাজেট বাড়িয়ে বাজারে যেতে হচ্ছে।
সোনার দামে এই ঊর্ধ্বগতি কি সাময়িক? বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়েছে বলেই তার প্রভাব পড়েছে কলকাতার বাজারেও। আমেরিকা-চীন উত্তেজনা, ইউরোপের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ক্রমাগত মন্দা-আশঙ্কার জেরে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। ফলে এই দাম আরও কিছুদিন স্থায়ী হতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।
লক্ষ্মীবারে লক্ষ্মীর মুখ দেখা কঠিন! সোনার স্বপ্ন এখন কেবল চোখেই
লক্ষ্মীবারে অনেকেই শুভ দিন বলে গয়না কিনে থাকেন। কিন্তু এবারের লক্ষ্মীবারে কলকাতার গয়নার দোকানগুলোতে তেমন ভিড় দেখা গেল না। সোনার দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় গয়না কেনার ইচ্ছে এখন বহু মানুষের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এই অবস্থায় সোনার প্রতি ‘লক্ষ্মীর টান’ কেবল স্মৃতিতেই থেকে যাচ্ছে।