কলকাতা মেট্রো ভোগান্তি কর্মীসংকট ভিড়ে বিপর্যস্ত শহরের লাইফলাইন

কলকাতা মেট্রো ভোগান্তি কর্মীসংকট ভিড়ে বিপর্যস্ত শহরের লাইফলাইন

ভিড়ের ছবিতে সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম

সকাল থেকে রাত— দমদম, শিয়ালদহ, এসপ্ল্যানেড, টালিগঞ্জ কিংবা কালীঘাট, প্রায় প্রতিটি স্টেশনে একই ছবি। থিকথিকে ভিড়, যাত্রীদের ঠেলাঠেলি আর অসহায় অবস্থা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এই দৃশ্যের ছবি, যা যাত্রী দুর্দশার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরছে।

নতুন লাইন খোলার পরেই বাড়ল চাপ

কবি সুভাষ স্টেশনের ব্লু–লাইনে সংকট শুরু হয় সেটি ‘কোমা’–য় যাওয়ার পরে। একই দিনে গ্রিন ও পার্পল লাইনের সম্প্রসারণ এবং ইয়েলো লাইনের উদ্বোধন পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে। ফলে শুধু ব্লু–লাইনের ট্রেন দেরিতেই নয়, অন্যান্য ব্যস্ত স্টেশনেও বাড়ছে যাত্রীদের অসুবিধা।

প্রতিদিন আট লক্ষ যাত্রীর চাপ

সংস্থার হিসেব বলছে, শুধু ব্লু–লাইনেই প্রতিদিন যাতায়াত করছেন সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি যাত্রী। এসপ্ল্যানেড–শিয়ালদহ সংযোগ শুরু হওয়ার পর গ্রিন লাইনে যাত্রীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লক্ষ। ফলে প্রতিদিন প্রায় আট লক্ষ যাত্রী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

কর্মীসংকটই মূল কারণ

মেট্রো রেলওয়ে প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মী ইউনিয়নের দাবি, এই সংকটের আসল কারণ হল বিপুল সংখ্যক শূন্যপদ। অনুমোদিত মোটরম্যানের পদ ৫০৯ হলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ২৬০ জন। শুধু গ্রিন লাইনেই ৬০টি পদের মধ্যে কাজ করছেন ৪৫ জন। একই অবস্থা ট্রাফিক বিভাগেও— ৬০০-র বেশি পদ খালি পড়ে রয়েছে।

দীর্ঘদিনের ক্ষয়রোগে জর্জরিত ব্লু–লাইন

ইউনিয়নের যুগ্ম সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্তর কথায়, বহুদিন ধরেই কর্মী সংকটে ভুগছে কলকাতা মেট্রো। যখন মাত্র একটি লাইন চলত, সমস্যা এতটা প্রকট ছিল না। কিন্তু একের পর এক নতুন লাইন খোলার পর রেকের সংখ্যা বাড়তেই সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখন রাতারাতি কর্মী নিয়োগ করলেও পরিস্থিতি সামলানো সহজ হবে না বলেই আশঙ্কা।

অদক্ষ কর্মী নিয়োগেও বাড়ছে বিপদ

ট্রাফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা পরে পদোন্নতির মাধ্যমে সিনিয়র ট্রাফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়েছেন বটে, কিন্তু স্টেশন পরিচালনার পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা তাঁদের নেই। ফলে প্ল্যাটফর্মে ভিড় সামলানো বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়েই তৈরি হচ্ছে নতুন সমস্যা।

যাত্রীদের ‘নিও নর্মাল’ দেরি আর আতঙ্ক

পরিষেবা অব্যবস্থাপনা আর কর্মী সংকট মিলিয়ে ব্লু–লাইনে এখন ট্রেন দেরি হওয়াই নতুন স্বাভাবিক। বুকিং কাউন্টার থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত অস্বাভাবিক ভিড় দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা। শহরের লাইফলাইন মেট্রো এখন যাত্রীদের কাছে ভরসার বদলে ভয়ের কারণ হয়ে উঠছে।

Leave a comment