দক্ষিণেশ্বর মেট্রো বিভ্রাটে সোমবার সকালেই বিপাকে যাত্রীরা

দক্ষিণেশ্বর মেট্রো বিভ্রাটে সোমবার সকালেই বিপাকে যাত্রীরা

সপ্তাহের প্রথম কর্মব্যস্ত দিনের শুরুতেই ভরসার পরিবহণ মেট্রো রেলে বড়সড় বিভ্রাট। সোমবার সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে দক্ষিণেশ্বর থেকে ছাড়ার কথা ছিল প্রথম মেট্রো। কিন্তু থার্ড লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সেই মেট্রো নির্ধারিত সময়ে রওনা হয়নি। পরিবর্তে দমদম স্টেশন থেকে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রথম মেট্রো শহিদ ক্ষুদিরামের উদ্দেশে ছাড়ে। দক্ষিণেশ্বর থেকে প্রথম মেট্রো পরে ৭টা ৫৪ মিনিটে ছাড়ে।

অফিসযাত্রীদের সকালের দৌড়ে ধাক্কা

সোমবার সকাল, অফিস ও স্কুলের ভিড় শুরু হওয়ার সময় মেট্রোর এই দেরি যাত্রীদের নাজেহাল করে তোলে। দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরামমুখী বহু যাত্রী, যারা প্রতিদিন সময়মতো পৌঁছতে প্রথম মেট্রো ধরেন, তাঁদের যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দমদমে ওঠা যাত্রীদেরও ততক্ষণে সময়সূচি গুলিয়ে যায়। যাতায়াতের বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে অনেকেই বাস ও ট্যাক্সির ভিড়ে আটকে পড়েন।

যাত্রী রমা সেনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ

বেলগাছিয়া থেকে এসপ্ল্যানেডগামী অফিসযাত্রী রমা সেন বলেন, “প্রতিদিনই প্রথম মেট্রো ধরে অফিসে যাই, যাতে যানজট এড়িয়ে সময়মতো পৌঁছনো যায়। কিন্তু আজ যখন সাড়ে সাতটায় স্টেশনে পৌঁছলাম, দেখি কোনও মেট্রো নেই। বাধ্য হয়ে বাসে উঠতে হলো, আর তাতেই অফিসে দেরি হলো।” তাঁর মতো আরও বহু যাত্রী অভিযোগ করেন, গত দুই মাসে একাধিকবার দমদম–শহিদ ক্ষুদিরাম লাইনে পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।

মেট্রোর ব্যাখ্যা ও আশ্বাস

কলকাতা মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক রূপায়ণ মিত্র জানিয়েছেন, “থার্ড লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় দক্ষিণেশ্বর থেকে প্রথম মেট্রো ছাড়তে পারেনি। তবে দমদম থেকে ৭টা ৩০ মিনিটে পরিষেবা শুরু হয় এবং কিছুক্ষণ পরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।” যদিও অফিসিয়াল ব্যাখ্যা মিললেও যাত্রীদের ক্ষোভ কোনও অংশে কমেনি।

প্রতিদিনের ভরসা কি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে?

কলকাতার যাতায়াত ব্যবস্থায় মেট্রো বরাবরই সময়মতো, দ্রুত এবং আরামদায়ক পরিষেবার জন্য পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তিগত সমস্যা, রক্ষণাবেক্ষণজনিত কারণে বারবার পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। যাত্রীরা বলছেন, ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে মেট্রো একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই ঘনঘন বিঘ্ন সেই আস্থায় ফাটল ধরাচ্ছে।

থার্ড লাইনের সমস্যার নেপথ্যে কী?

রেল সূত্রে খবর, থার্ড লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া বিরল ঘটনা হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি, তার ছিঁড়ে যাওয়া, সিগন্যালের ত্রুটি ইত্যাদি কারণে এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের মান ও পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবও এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জরুরি পরিস্থিতিতে যাত্রীদের বিকল্প পথের অসুবিধা

দক্ষিণেশ্বর থেকে শহরের কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য মেট্রো ছাড়া বাস বা ট্রেনের উপর নির্ভরশীল হওয়া অনেক যাত্রীর কাছে সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর। ব্যস্ত সময়ে বাসে প্রচণ্ড ভিড়, রাস্তার যানজট, এবং ট্রেনের অনিয়মিত সময়সূচি যাত্রীদের আরও বিপদে ফেলে। সোমবারের ঘটনায়ও বহু যাত্রী নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেননি।

অতীতের বিভ্রাটের খতিয়ান

যাত্রী সংগঠনের দাবি, গত দু’মাসে দমদম–শহিদ ক্ষুদিরাম রুটে অন্তত পাঁচবার বড়সড় বিভ্রাট হয়েছে। কখনও সিগন্যালের সমস্যা, কখনও রেক্টিফায়ারের ত্রুটি, আবার কখনও মেট্রো রেক নষ্ট হওয়ায় পরিষেবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থেকেছে। এই ধারাবাহিক বিঘ্নই যাত্রীদের হতাশা বাড়াচ্ছে।

সমাধানের পথে মেট্রো কর্তৃপক্ষ

মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে থার্ড লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পাওয়ার সাপ্লাই সিস্টেমে উন্নত প্রযুক্তি আনার পরিকল্পনা চলছে। জরুরি পরিস্থিতিতে বিকল্প রেক প্রস্তুত রাখা ও দ্রুত পরিষেবা পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ দল তৈরি করা হবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

শেষকথা—যাত্রীদের প্রত্যাশা অটুট

কলকাতাবাসীর কাছে মেট্রো শুধু এক পরিবহণ নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশ। সেই ভরসা অটুট রাখতে পরিষেবার মান এবং সময়নিষ্ঠতা বজায় রাখা এখন মেট্রো কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। সোমবারের ঘটনা সেই দায়িত্বের গুরুত্ব আরও একবার সামনে নিয়ে এল।

Leave a comment