আজকের দিনে এয়ারপোর্ট কিংবা হাওড়া স্টেশন যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ক্রমেই বেশি ভরসা করছেন মেট্রোর ওপর। এয়ার কন্ডিশন্ড কামরায় বসে স্বস্তিতে পৌঁছে যাওয়া যায় শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সাধারণ যাত্রার পাশাপাশি লং ট্যুরে বেরনো বা কাজের জন্য বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকেই এখন ভরসা করছেন মেট্রো পরিষেবার ওপর। সস্তা ভাড়া, নিরাপদ ভ্রমণ এবং দ্রুত যাতায়াত—সব মিলিয়ে মেট্রো এখন শহরবাসীর প্রথম পছন্দ।
তবে ভ্রমণের আনন্দে এবার নতুন চিন্তার কারণ দেখা দিচ্ছে ভারী লাগেজ।
মেট্রোতে চড়ে এয়ারপোর্ট বা হাওড়া পৌঁছনোর স্বপ্ন অনেকটাই সহজ হয়েছে ঠিকই, তবে যাত্রীদের সঙ্গে থাকা বড় বড় ব্যাগের জন্য গুনতে হতে পারে অতিরিক্ত ভাড়া। মেট্রোর একাধিক আধিকারিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কোনও বাধা না দিলেও যদি অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ বহন করা হয়, তবে আলাদা ভাড়া ধার্য করা হতে পারে। যাত্রা যাতে আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়, সেটাই মেট্রোর উদ্দেশ্য—তবে সেই আরামের সঙ্গেই এবার বাড়তি খরচ যোগ হতে পারে।
মেট্রোর কামরায় লাগেজ রাখার নির্দিষ্ট জায়গার অভাবও সমস্যাকে জটিল করছে।
কলকাতার মেট্রো কামরাগুলি মূলত শহরের মধ্যে যাতায়াতের জন্য তৈরি। ফলে যাত্রীদের বড় ব্যাগ বা একাধিক লাগেজ রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। সাধারণভাবে সবাই নিজেদের ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে বসেন। এতদিন পর্যন্ত যেহেতু মেট্রো মূলত শহরের মধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই ভ্রমণকারীদের বড় লাগেজের প্রয়োজনও পড়েনি। কিন্তু এয়ারপোর্ট বা হাওড়া স্টেশনের সংযোগ শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে।
মেট্রোর পরিধি শহরের বাইরে প্রসারিত হওয়ায় যাত্রার ধরণেও আসছে পরিবর্তন।
নতুন রুট চালু হওয়ার পর অনেকে কলকাতা থেকে সরাসরি লং ট্যুর বা অফিসিয়াল কাজের জন্য বাইরে যাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের হাতে থাকছে বড় বড় ট্রলিব্যাগ ও ভারী স্যুটকেস। ফলে যাত্রার ধরণ বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেট্রোর ভাড়ার কাঠামোতেও যে পরিবর্তন আসতে চলেছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের অন্য শহরের নজিরও কলকাতায় লাগেজ চার্জ নিয়ে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
উত্তর-মধ্য রেলওয়ে (North Central Railway) ইতিমধ্যেই লাগেজ চার্জ চালু করেছে। যদিও রেল বোর্ড এটি এখনও দেশের সব জোনে বাধ্যতামূলক করেনি। গত সপ্তাহে বেঙ্গালুরু মেট্রোতে লাগেজ চার্জ নেওয়া নিয়ে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল। সেখান থেকেই অনুমান জোরদার হচ্ছে, খুব শিগগিরই কলকাতা মেট্রোতেও একই নিয়ম চালু হতে পারে।
যদিও আপাতত যাত্রীদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
প্রতিদিন হাওড়া থেকে শুরু করে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত একাধিক যাত্রী তাঁদের লাগেজ নিয়ে মেট্রো ব্যবহার করছেন। এখনও পর্যন্ত এর জন্য আলাদা কোনও ভাড়া ধার্য করা হয়নি। তবে স্ক্যানিং অবশ্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে বড় ব্যাগ নিয়ে যাত্রার সময় নিরাপত্তা পরীক্ষায় কিছুটা সময় লাগলেও অতিরিক্ত ভাড়ার ঝামেলা নেই। তবে ভবিষ্যতে নিয়ম বদলাতে পারে বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন আধিকারিকরা।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য—যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক ও নিরাপদ যাত্রা।
প্রশাসনের দাবি, কাউকে আটকানো বা অযথা সমস্যা তৈরি করার উদ্দেশ্য নেই। যাত্রীদের ভ্রমণ যাতে সহজ হয়, সেটাই প্রধান লক্ষ্য। তবে ভারী লাগেজ সঙ্গে নিয়ে যাত্রার ক্ষেত্রে যদি অন্যদের অসুবিধা হয় বা ভিড় বাড়ে, তখনই অতিরিক্ত ভাড়া ধার্য করার কথা ভাবা হচ্ছে। আপাতত যাত্রীদের উচিত নিজেদের লাগেজ সীমিত রাখা এবং নিয়ম মেনে চলা।