স্বাধীনতার গননায় ধন্দ এ বছর ৭৮ নাকি ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবস পালিত হবে?

স্বাধীনতার গননায় ধন্দ এ বছর ৭৮ নাকি ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবস পালিত হবে?

১৫ অগস্ট দরজায় কড়া নাড়ছে। স্বাধীনতার রঙে রাঙাতে প্রস্তুত গোটা দেশ। পতাকার রঙে মোড়া শহর, গ্রামে গ্রামে প্রভাতফেরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর স্কুলে স্কুলে জাতীয় সঙ্গীতের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। কিন্তু এই আনন্দের মধ্যেই অনেকের মনে এক প্রশ্ন— ২০২৫ সালে ভারত ঠিক কততম স্বাধীনতা দিবস পালন করছে? ৭৮তম নাকি ৭৯তম?

স্বাধীনতার সূচনা: ১৯৪৭-এর ঐতিহাসিক সকাল

১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট— ইতিহাসে চিরস্মরণীয় এক সকাল। ২০০ বছরের দীর্ঘ ব্রিটিশ শাসন ভেঙে ভারতীয়রা পেল স্বাধীনতার স্বাদ। অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামীর রক্ত ও ত্যাগে লেখা সেই দিনটিই দেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়েছিল। তাই ১৯৪৭ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল উদযাপনের ধারাবাহিকতা।

গণনার সরল সমীকরণ— আসল বিভ্রান্তির শুরু এখানেই

অনেকেই সাধারণ অঙ্কে হিসাব কষে ফেলেন— ২০২৫ থেকে ১৯৪৭ বিয়োগ করলেই পাওয়া যায় ৭৮। তাই তাঁরা ধরে নেন এ বছর ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু এখানেই হচ্ছে ভুল। কারণ এই অঙ্কে আমরা কেবল স্বাধীনতার বছর সংখ্যা পাচ্ছি, উদযাপনের সংখ্যা নয়। স্বাধীনতার প্রথম দিনই প্রথম স্বাধীনতা দিবস ছিল, তাই গণনা এক বছর পরে থেকে নয়, ১৯৪৭ থেকেই শুরু হয়েছিল।

প্রথম থেকে বর্তমান— ক্যালেন্ডারে স্বাধীনতা দিবসের যাত্রা

গণনা করলে দেখা যাবে—

প্রথম স্বাধীনতা দিবস: ১৯৪৭

দশম স্বাধীনতা দিবস: ১৯৫৬

২০তম স্বাধীনতা দিবস: ১৯৬৬

৫০তম স্বাধীনতা দিবস: ১৯৯৬

৭০তম স্বাধীনতা দিবস: ২০১৬

এই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালে এসে আমরা পৌঁছে গেছি ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস-এ। অর্থাৎ এ বছর দেশ ৭৯তম বার পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা উদযাপন করবে।

বার্ষিকী বনাম উদযাপন— পার্থক্যটা বোঝা জরুরি

এখানেই লুকিয়ে আছে বিভ্রান্তির আসল কারণ। ‘বার্ষিকী’ মানে হল কোনো ঘটনার পর এক বছর পূর্ণ হলে তার প্রথম বার্ষিকী। তাই ১৯৪৮ সালে হয়েছিল প্রথম স্বাধীনতার বার্ষিকী, যা আসলে ছিল দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস। এই হিসেবে ২০২৫ হবে স্বাধীনতার ৭৮তম বার্ষিকী, কিন্তু উদযাপন হবে ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস।

জনমানসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া— স্কুল থেকে সোশ্যাল মিডিয়া পর্যন্ত আলোচনার ঝড়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এই হিসাব বোঝাচ্ছেন। আবার সোশ্যাল মিডিয়ায়ও চলছে উল্টোপাল্টা মতামত। কেউ বলছেন ৭৮তম, কেউ বলছেন ৭৯তম— এমনকি অনেকে মজার ছলে বলছেন, “উৎসব হলেই সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ নাকি দেশের ভালোবাসা?” কিন্তু তথ্যের নিরিখে স্পষ্ট— এ বছর ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসই পালিত হবে।

স্বাধীনতার গুরুত্ব— সংখ্যা নয়, ত্যাগের ইতিহাসই আসল চাবিকাঠি

যদিও এই সংখ্যাগত বিভ্রান্তি আকর্ষণীয় আলোচনার জন্ম দেয়, তবে মূল তাৎপর্য সংখ্যায় নয়, স্বাধীনতার সংগ্রাম আর ত্যাগের ইতিহাসে। ৭৮ হোক বা ৭৯— স্বাধীনতা দিবস মানেই দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করা সেই অগণিত শহিদদের স্মরণ, এবং আগামী প্রজন্মকে সেই ইতিহাস শেখানোর অঙ্গীকার।

জাতীয় উৎসবের প্রস্তুতি— লালকেল্লা থেকে প্রতিটি প্রান্তিক গ্রাম পর্যন্ত

লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে পতাকা উত্তোলনের আয়োজন— সর্বত্র চলছে শেষ মুহূর্তের রিহার্সাল। সরকারি ভবন, স্কুল, বাজার, অফিস— সবখানেই উড়বে তেরঙা। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলের হাতেই থাকবে কাগজের বা কাপড়ের জাতীয় পতাকা।

Leave a comment