সরকারি প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় করে বানিয়েছেন নিজের ভাণ্ডার!
‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের টাকা দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন কলকাতা পুরসভার এক চুক্তিভিত্তিক কর্মী। নাম উমেশ কুমার দাস। মুচিপাড়া থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে এই ব্যক্তি ঠকিয়ে যাচ্ছিলেন দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মহিলাদের, যাঁদের জন্যই রাজ্য সরকার এই কল্যাণমূলক প্রকল্প শুরু করেছিল।
ফর্মে ছিল ফাঁকি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই প্রতারণার ছক!
আবেদনকারীদের অজান্তেই বদলে যেত ব্যাঙ্কের তথ্য | ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর সুবিধা নিতে যাঁরা আবেদন করতেন, তাঁদের জমা দেওয়া ফর্মের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর পাল্টে দেওয়া হতো—এই অভিযোগই এখন সামনে এসেছে। সত্যিকারের আবেদনকারীর জায়গায় ঢুকিয়ে দেওয়া হতো প্রতারকদের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট নম্বর। ফলে প্রকৃত অর্থপ্রাপক না পেয়ে ঠকতেন, আর মাঝখান থেকে লাভবান হতেন অভিযুক্ত উমেশ ও তাঁর চক্র।
নজর ছিল গরিব, নিরক্ষর মহিলাদের উপরেই!
সুবিধার নামে লুকিয়ে ছিল শিকার বানানোর ফাঁদ | এই চক্রের মূল টার্গেট ছিলেন সমাজের পিছিয়ে পড়া গরিব মহিলারা—যাঁদের অনেকেই পড়াশোনা জানেন না বা ফর্ম ফিল আপে সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। সেই সুযোগটাই নিচ্ছিলেন অভিযুক্ত। কখনও ভুল দেখিয়ে, কখনও সাহায্যের নামে তথ্য চুরি করে তুলে নেওয়া হতো লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা।
একাই নয়, তদন্তে ইঙ্গিত চক্রবদ্ধ প্রতারণার
ঘটনার শিকড় ছড়িয়ে কলকাতার বাইরেও? পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, উমেশ কুমার দাস একা এই প্রতারণা চালাননি। তাঁর পিছনে সক্রিয় ছিল আরও কিছু সহযোগী এবং সম্ভবত পুরসভার ভিতর থেকেও কেউ এই কাজে তাকে সহায়তা করেছে। কে বা কারা সেই চক্রের মাথা, কাদের অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে, তা জানতেই তদন্ত চলছে জোরকদমে।
জিজ্ঞাসাবাদে বেরোচ্ছে একের পর এক তথ্য, তদন্তে তৎপর পুলিশ
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ট্রেসিং, পুরসভার লগ ফাইল খতিয়ে দেখা শুরু | ধৃত উমেশকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে বিস্তারিত জেরা করছে মুচিপাড়া থানার পুলিশ। তথ্য আদায়ের জন্য প্রয়োজনে সাইবার সেলের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ব্যাঙ্ক ট্রানজাকশনের রেকর্ড ঘেঁটে বের করার চেষ্টা চলছে—কার অ্যাকাউন্টে কবে টাকা গিয়েছে, কোন শাখা থেকে হয়েছে লেনদেন।
জনহিত প্রকল্পে এমন কেলেঙ্কারিতে প্রশাসনের মাথায় হাত!
সরকারের ভাবমূর্তিতেও লাগতে পারে আঁচ, তড়িঘড়ি ক্ষত মেরামতের চেষ্টা‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম গর্বের প্রকল্প। এই প্রকল্পের সাফল্যের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের বহু নারীর আর্থিক স্বনির্ভরতা। সেখানে যদি এমন প্রতারণা চলতে থাকে, তাহলে প্রশাসনের উপর থেকে মানুষের আস্থা নষ্ট হতে বাধ্য। তাই দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বার্তা দিতেই উঠে পড়ে লেগেছে প্রশাসন।
দরিদ্র নারীদের সুযোগ-সুবিধা যেন হয় সুরক্ষিত, দাবি সাধারণের
লক্ষ্মীর টাকায় ছলচাতুরি রুখতে চাই কড়া ব্যবস্থাএই ঘটনায় স্পষ্ট—সামান্য অসতর্কতা থেকেই বড়সড় চক্রান্ত সম্ভব। সরকারি প্রকল্পের টাকা যেন প্রকৃত প্রাপকের কাছেই পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করতে চাই আরও প্রযুক্তি-নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একই সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের পর্যাপ্ত মনিটরিং জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।