আইওয়্যার বাজারের বৃহৎ কোম্পানি, লেন্সকার্ট, পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির (wearable technology) ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। কোম্পানিটি মুম্বাই-এর ডিপ-টেক স্টার্টআপ আজ्ञা লেন্সে বিনিয়োগ করেছে। এই অংশীদারিত্ব এমন এক সময়ে হয়েছে যখন লেন্সকার্ট শেয়ার বাজারে তাদের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (IPO) নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোম্পানিটি এখন প্রথাগত চশমার পাশাপাশি স্মার্ট গ্লাসের মতো আধুনিক পণ্যগুলির উপরও মনোযোগ দিচ্ছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং এক্সআর প্রযুক্তিতে প্রবেশ করবে লেন্সকার্ট
লেন্সকার্টের এই চুক্তিটি তাদের আজ्ञা লেন্সের উন্নত প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার দেবে। আজ्ञা লেন্স এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি (XR) প্রযুক্তি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে দক্ষতা অর্জন করেছে। কোম্পানিটি ২০২৩ সালে তাদের মিক্সড রিয়েলিটি হেডসেট ‘আজ্ঞা এক্সআর’-এর জন্য সিইএস ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডও জিতেছে। শুধু তাই নয়, আজ्ञা দেশকে সবচেয়ে উন্নত পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি পণ্য প্রস্তুতকারক হিসাবেও পরিচিত।
স্মার্ট গ্লাসের বাজার দ্রুত বাড়ছে
স্মার্ট গ্লাসের বিশ্বব্যাপী বাজার বর্তমানে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এবং আগামী বছরগুলিতে এটি ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রিপোর্ট অনুসারে, এই বাজারটি বছরে ১০.৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। মেটা, অ্যাপল এবং গুগল-এর মতো বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি ইতিমধ্যেই এই বাজারে রয়েছে। এখন লেন্সকার্টও এই দৌড়ে যোগ দিয়েছে।
অডিও গ্লাস থেকে লেন্সকার্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল
লেন্সকার্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও পীযূষ বংশল জানিয়েছেন, আজ्ञা লেন্সে বিনিয়োগ স্মার্ট গ্লাসের দিকে লেন্সকার্টের যাত্রার পরবর্তী পদক্ষেপ। তিনি আরও জানান, ডিসেম্বর ২০২৪-এ কোম্পানিটি অডিও গ্লাস ‘ফোনিক’ লঞ্চ করেছিল এবং এখন তারা আরও উন্নত স্মার্ট গ্লাসের বিকাশের দিকে কাজ করছে।
আজ্ঞা লেন্সের প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা লেন্সকার্টকে সুবিধা দেবে
২০১৪ সালে শুরু হওয়া আজ्ञা লেন্স একটি ডিপ-টেক স্টার্টআপ, যা ইমারসিভ প্রযুক্তিতে কাজ করে। কোম্পানিটি এআই ভিশন, এক্সআর স্ট্যাক এবং স্পেশিয়াল কম্পিউটিং-এর সাহায্যে উন্নত পরিধানযোগ্য ডিভাইস তৈরি করে। লেন্সকার্ট আশা করছে যে ফ্রেম ডিজাইন এবং অপটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ তাদের শক্তিকে আজ्ञার প্রযুক্তির সঙ্গে একত্রিত করে তারা এমন স্মার্ট গ্লাস তৈরি করতে পারবে যা সাধারণ মানুষের জন্য সহজ এবং উপযোগী হবে।
দেশ এবং বিদেশে ২৫০০-এর বেশি স্টোর
লেন্সকার্টের বিশ্বজুড়ে ২,৫০০-এর বেশি স্টোর রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২,০০০টি ভারতে অবস্থিত। কোম্পানিটি টাইটান আইপ্লাস, স্পেক্সমেকার, ভিশন এক্সপ্রেস এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ওয়ারবি পার্ক-এর সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় রয়েছে।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ
এর আগে, লেন্সকার্ট প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ করে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে। কোম্পানিটি কম্পিউটার ভিশন স্টার্টআপ ট্যাঙ্গো আই-কে অধিগ্রহণ করেছে। ২০২২ সালে জাপানের ব্র্যান্ড ওনডেজ-কেও লেন্সকার্ট গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যার চুক্তি প্রায় ৪০ কোটি ডলারের ছিল। ২০২৩ সালে, লেন্সকার্টের সহযোগী সংস্থা নেসো ব্র্যান্ডস ফরাসি ব্র্যান্ড লে পেটিট লুনেটিয়ারে ৪০ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করেছে।
আইপিও-র আগে কোম্পানির দ্রুত বিস্তার
লেন্সকার্ট এই মুহূর্তে তাদের আইপিও-র প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোম্পানির প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। সম্প্রতি, ফিডেলিটি লেন্সকার্টের মূল্যায়ন ৬.১ বিলিয়ন ডলারে নির্ধারণ করেছে, যা আগে ছিল ৫.৬ বিলিয়ন ডলার। কোম্পানিটি ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যায়নে তালিকাভুক্ত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
কোম্পানিকে পাবলিক লিমিটেডে পরিবর্তন করা হয়েছে
আইপিও-র প্রস্তুতির অংশ হিসাবে, লেন্সকার্টের মূল কোম্পানিকে প্রাইভেট লিমিটেড থেকে পাবলিক লিমিটেডে পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিটি অর্থবর্ষ ২০২৪-এ দারুণ পারফর্ম করেছে। তাদের মোট আয় ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৫,৪২৭.৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
ক্ষতি কমাতে সাফল্য
লেন্সকার্ট খরচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাদের ক্ষতিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে। অর্থবর্ষ ২০২৩-এ কোম্পানির ক্ষতি যেখানে ৬৩ কোটি টাকা ছিল, সেখানে ২০২৪ সালে তা কমে মাত্র ১০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
স্মার্ট গ্লাসের চাহিদা তিনগুণ বেড়েছে
গত দুই বছরে স্মার্ট গ্লাসের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে, তাদের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ তিনগুণ বেড়ে ২০ কোটি ইউনিটের বেশি হয়েছে।
লেন্সকার্টের নজর এখন প্রযুক্তি-সংযুক্ত নতুন গ্রাহকদের উপর
এখন লেন্সকার্টের নজর उन গ্রাহকদের উপর যারা কেবল চশমা নয়, বরং প্রযুক্তি-সংযুক্ত এমন পণ্য চান যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও স্মার্ট করে তুলতে পারে। স্মার্ট গ্লাসের নতুন রেঞ্জ এই দিকে কোম্পানির জন্য একটি নতুন সূচনা হতে পারে।