অফিস টাইমেই যাত্রীর সিংহভাগ, সেন্ট্রাল জ়োনে রীতিমতো নাভিশ্বাস
সকাল আটটা থেকে এগারোটা এবং বিকেল পাঁচটা থেকে আটটা—এই ছ’ঘণ্টা যেন মুম্বইয়ের সেন্ট্রাল রেলের কর্মীদের কাছে দুঃস্বপ্ন! রেলের পরিসংখ্যান বলছে, দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সময়েই গোটা জ়োনের প্রায় ৭৫ শতাংশ যাত্রী যাতায়াত করেন। লোকাল ট্রেনের প্রতিটি কামরায় এমন ভিড় যে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, ভিতরে প্রবেশ করাই অসম্ভব হয়ে ওঠে। বহু যাত্রী চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গুরুতর আহত কিংবা প্রাণ হারান এই সময়েই।
দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসল রেল, উঠছে স্বয়ংক্রিয় দরজার পরিকল্পনা
সম্প্রতি একাধিক যাত্রী চলন্ত লোকাল ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হওয়ায় কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে সেন্ট্রাল রেল। ঘোষণা করা হয়েছে, ভিড় সামাল দিতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী দিনে চালু হবে স্বয়ংক্রিয় দরজা সহ লোকাল ট্রেন। সেই সঙ্গে পুরনো এক পরিকল্পনা ফের কার্যকর করার তোড়জোড় শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
'যাত্রী কমাও বা ট্রেন বাড়াও'—অফিস শিফট বদলের প্রস্তাব রেলের
এই ভিড় কমানোর উপায় হিসেবে রেল কর্তৃপক্ষ দুই রাস্তায় হাঁটছে—এক, ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, এবং দুই, যাত্রী সংখ্যা হ্রাস। দ্বিতীয় পথটি শুনে চমকে উঠতে পারেন অনেকেই, তবে সেন্ট্রাল রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক স্বপ্নিল নীলা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, 'সব অফিসের সময় যদি এক হয়, তাহলে ট্রেনেও একসঙ্গে ভিড় হবেই। সেই ভিড় এড়াতে অফিস টাইমে বদল আনা জরুরি।'
৮০০টি অফিসকে চিঠি, টাইম স্লট ভাগ করে ভিড় কমানোর রেল-পরিকল্পনা
সেন্ট্রাল রেল ইতিমধ্যেই মুম্বই শহরতলির প্রায় ৮০০টি সরকারি অফিসকে চিঠি পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অফিস টাইম সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে তিন ভাগে ভাগ করা হোক। কেউ আসবেন ৯টায়, কেউ ১০টায়, আবার কেউ ১১টায়। ছুটিও ভাগ করে দেওয়া হোক সেইমতো। তাতে অফিস টাইমে ট্রেনের ওপর চাপ অনেকটাই কমবে বলে রেলের ধারণা।
২০২৩-এও উঠেছিল প্রস্তাব, বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবার ফের উদ্যোগ
২০২৩ সালেও একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছিল রেল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে মৃত্যুর পরিসংখ্যান এখন ভয়াবহ। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই সেন্ট্রাল রেলওয়েতে ৩,৫৮৮ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন লোকাল ট্রেনে—দিনে গড়ে প্রায় ১০ জন। এই ভয়াবহতা রোধেই এবার রেল যেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রবীণদের জন্য আলাদা কামরা, সহানুভূতির নজির রাখতে চাইছে সেন্ট্রাল রেল
শুধু ভিড় নিয়ন্ত্রণেই নয়, সেন্ট্রাল রেল নজর দিয়েছে প্রবীণ নাগরিকদের সুবিধাতেও। ঘোষণা করা হয়েছে, প্রতিটি লোকাল ট্রেনে চালু হবে একটি করে ‘প্রবীণ কামরা’। যাতে প্রবীণরাও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন।
হাওড়া-শিয়ালদহে কম নয় ভিড়, তবু অন্য পথে হাঁটছে পূর্ব রেল
যদিও মুম্বইয়ের মতো নয়, তবে অফিস টাইমে হাওড়া এবং শিয়ালদহেও ভিড়ের চিত্র চোখে পড়ার মতো। সেই প্রসঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, পূর্ব রেল কি সেন্ট্রাল রেলের মতো ব্যবস্থা নিতে পারবে না? জবাবে পূর্ব রেলের মুখপাত্র দীপ্তিময় দত্ত বলেন, ‘আমাদের এখানেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তবে তা স্থানীয় প্রয়োজন অনুযায়ী।’
শিয়ালদহে চালু অতিরিক্ত ট্রেন, মহিলা কামরার সংখ্যাও বেড়েছে
গত একমাসে শিয়ালদহ ডিভিশনে পূর্ব রেল ১০টি নতুন লোকাল ট্রেন চালু করেছে ভিড় সামলাতে। পাশাপাশি, মহিলা যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে প্রতি লোকাল ট্রেনে মহিলা কামরার সংখ্যা বাড়িয়ে তিনটি করা হয়েছে। অর্থাৎ, পূর্ব রেল প্রয়োজন বুঝে তার নিজস্ব উপায়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিচ্ছে।