রাজস্থান সরকার একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে মহাত্মা গান্ধী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে এখন হিন্দি মিডিয়ামের ক্লাসও শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Bhajan Lal: রাজস্থানের ভজনলাল শর্মা সরকার রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন দিশা দেখানোর জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন মহাত্মা গান্ধী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে হিন্দি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্যও পড়াশোনার সুবিধা থাকবে। এর সরাসরি সুবিধা পাবে সেই শিশুরা যারা মাতৃভাষা হিন্দিতে পড়তে চায়, কিন্তু তাদের এলাকায় হিন্দি মাধ্যমের স্কুল না থাকার কারণে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
শিক্ষায় সমতার দিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে শিক্ষা ক্ষেত্রে সমতা ও অন্তর্ভুক্তিকরণ বাড়বে। মহাত্মা গান্ধী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, যা এতদিন শুধুমাত্র ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রদের জন্য চলত, এখন দুটি শিফটে চলবে। প্রথম শিফটে ইংরেজি মাধ্যমের ক্লাস হবে, আর দ্বিতীয় শিফটে একই ক্যাম্পাসে হিন্দি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হল গ্রামীণ এবং আধা-শহুরে অঞ্চলে বসবাসকারী সেই শিক্ষার্থীদের সুবিধা দেওয়া, যাদের হিন্দি মাধ্যমে পড়াশোনা করার সুযোগ কম ছিল।
কেন এই পদক্ষেপ নিতে হল?
ভূতপূর্ব কংগ্রেস সরকার ২০১৯ সালের পর রাজ্যে ৩,৭৩৭টি মহাত্মা গান্ধী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল খুলেছিল। এই স্কুলগুলি স্থাপনের সময় অনেক জায়গায় পুরনো হিন্দি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বা সেগুলিকে ইংরেজি মাধ্যমে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এর ফলস্বরূপ, অনেক এলাকায় হিন্দি মাধ্যমে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের হয় দূরের স্কুলে যেতে হয়েছে, না হয় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছে। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা বিভাগ গভীরভাবে বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে যেখানে হিন্দি মাধ্যমের স্কুল নেই, সেখানে মহাত্মা গান্ধী স্কুলগুলি দুটি শিফটে চলবে।
শিক্ষামন্ত্রী বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন
রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী মদন দিলাওয়ার জানিয়েছেন যে মাতৃভাষায় শিক্ষাকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 'প্রত্যেকটি শিশুর নিজের পছন্দের ভাষায় শিক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে। আমরা চাই না যে কোনও ছাত্র শুধুমাত্র এই কারণে স্কুল ছেড়ে দিক যে তার এলাকায় তার পছন্দের মাধ্যমের স্কুল নেই।' তিনি আরও বলেন, যেসব গ্রাম পঞ্চায়েতে শুধুমাত্র ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় রয়েছে, সেখানে হিন্দি মাধ্যমের পড়াশোনা এখন সেই স্কুল ক্যাম্পাসেই চলবে।
আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে
পূর্ব শিক্ষামন্ত্রী বাসুদেব দেবনানীও এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন যে এখন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মাতৃভাষায় পড়ানোর একটি শক্তিশালী বিকল্প পাবেন। তিনি অভিভাবকদের কাছে আবেদন করেছেন, তাঁরা যেন নিকটবর্তী মহাত্মা গান্ধী স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সন্তানদের হিন্দি মাধ্যমে ভর্তি করান। রাজ্য সরকার নির্দেশ জারি করেছে যে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিতে শীঘ্রই হিন্দি মাধ্যমে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য পুনরায় দরজা খুলছে
১লা জুলাই থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। যেসব শিশুরা এখনও স্কুলে ভর্তি হয়নি, অথবা যারা মাধ্যমের কারণে আগে স্কুলে যেতে পারেনি, তাদের জন্য এটি একটি নতুন সুযোগ। শিক্ষা বিভাগ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে এই পরিবর্তনের ফলে কোনও স্কুলের শিক্ষার মানের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না, বরং এর ফলে উভয় মাধ্যমের ছাত্ররাই উপকৃত হবে।
কিছু নির্বাচিত অঞ্চলে এই নতুন মডেল লাগু হবে
শিক্ষামন্ত্রী আরও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের সমস্ত মহাত্মা গান্ধী স্কুলের জন্য প্রযোজ্য হবে না। শুধুমাত্র সেই অঞ্চলগুলিতে এই মডেল লাগু করা হবে, যেখানে হিন্দি মাধ্যমের কোনও বিকল্প নেই। এর মানে হল যেখানে আগে থেকেই হিন্দি মাধ্যমের স্কুল রয়েছে, সেখানে মহাত্মা গান্ধী স্কুলগুলি দুটি শিফটে চলবে না।
কারা উপকৃত হবে?
- গ্রামীণ অঞ্চলের সেই শিক্ষার্থীরা যারা মাতৃভাষায় পড়তে চায়।
- সেই অভিভাবকরা যারা তাদের সন্তানদের জন্য ইংরেজি মাধ্যমের চেয়ে হিন্দিকে বেশি প্রাধান্য দেন।
- শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে থাকা অঞ্চল যেখানে ইংরেজি মাধ্যম চালু হওয়ার পর ড্রপআউটের হার বেড়ে গিয়েছিল।