বক্স অফিসে ঝড় তুলল মহাবতার নরসিংহ

বক্স অফিসে ঝড় তুলল মহাবতার নরসিংহ

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যানিমেটেড ছবি মহাবতার নরসিংহ বক্স অফিসে দাপট দেখাচ্ছে। পুরাণের অনন্য কাহিনিকে পর্দায় জীবন্ত করে দর্শকদের মন জয় করেছে এই চলচ্চিত্র। ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট থেকে শুরু করে গল্পের আবহ—সবকিছুই যেন দর্শকদের নিয়ে যাচ্ছে এক প্রাচীন যুগে, যেখানে দেবতা আর অসুরের লড়াই ইতিহাস হয়ে বেঁচে আছে।

হিরণ্যকশিপু—অসুর না ভক্ত?

শাস্ত্রে হিরণ্যকশিপুকে এক মহাশক্তিধর অসুর রাজা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তবে তাঁর জীবনের এক অজানা দিক হচ্ছে, তিনি আসলে ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত। কিন্তু ভাই হিরণ্যাক্ষের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তিনি ধীরে ধীরে নিজের ভক্তি থেকে সরে এসে অহংকারে অন্ধ হয়ে পড়েন। এই অহংকারই তাঁকে দেবতাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়।

ব্রহ্মার বর আর অমরত্বের খেলা

হিরণ্যকশিপু ব্রহ্মার কাছ থেকে এমন এক বর লাভ করেছিলেন, যাতে কোনও মানুষ বা পশু, দিন বা রাত, ভূমি বা আকাশে, অস্ত্র বা বর্ম দিয়ে তাঁকে হত্যা করা যাবে না। এই বর তাঁকে প্রায় অজেয় করে তোলে। তিনি স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল শাসন করতে শুরু করেন এবং নিজের পুজো বাধ্যতামূলক করে তোলেন। ফলে ভগবান বিষ্ণুর ভক্তদের ওপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন।

প্রহ্লাদের অবিচল ভক্তি

হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত। পুত্রের এই ভক্তি অসহ্য হয়ে ওঠে অসুর রাজার কাছে। একাধিকবার চেষ্টা করেন প্রহ্লাদকে বিষ্ণুভক্তি থেকে সরাতে, এমনকি হত্যার চেষ্টাও করেন। কিন্তু প্রতিবারই ঈশ্বরের কৃপায় প্রহ্লাদ বেঁচে যান, যা আরও বাড়িয়ে তোলে হিরণ্যকশিপুর ক্রোধ।

নরসিংহ অবতারের আবির্ভাব

শেষমেষ, ব্রহ্মার বর ভঙ্গ না করেই বিষ্ণু নরসিংহ রূপে অবতীর্ণ হন—অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক সিংহ। সন্ধ্যার সময়, প্রাসাদের দোরগোড়ায়, খালি হাতে হিরণ্যকশিপুকে বধ করেন তিনি। এর ফলে বরও রক্ষা পেল, আবার অধর্মেরও অবসান ঘটল। এই ঘটনাই পুরাণে ‘অখণ্ড ধর্মের জয়’ হিসেবে বর্ণিত।

পুরাণ থেকে সিনেমার পর্দা

মহাবতার নরসিংহ ছবিতে এই পুরো কাহিনিকে আধুনিক প্রযুক্তি ও অ্যানিমেশনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। দর্শকরা শুধু ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতাই পাচ্ছেন না, বরং শিখছেন ভক্তি, ন্যায় ও অহংকারের পতনের চিরন্তন পাঠ। বক্স অফিসের সাফল্য প্রমাণ করছে—এই পৌরাণিক কাহিনি আজও সমান প্রাসঙ্গিক।

Leave a comment