৭ই জুলাই… ক্রিকেট ইতিহাসের সেই সোনালী দিন, যখন ভারত এমন এক রত্নকে পেল, যিনি প্রমাণ করলেন যে হিরো সেই নয়, যিনি সবচেয়ে বেশি কথা বলেন, বরং হিরো তিনিই, যিনি কঠিন পরিস্থিতিতে চুপচাপ জয় ছিনিয়ে আনেন।
ক্রীড়া সংবাদ: ভারতের সফলতম অধিনায়কদের মধ্যে অন্যতম মহেন্দ্র সিং ধোনি আজ (৭ই জুলাই) ৪৪ বছর বয়সে পা রাখলেন। ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই একমাত্র অধিনায়ক যিনি আইসিসি-র তিনটি বড় ট্রফি (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০০৭, ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০১১ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০১৩) জিতেছেন। তাঁর শান্ত স্বভাব, সাহসী সিদ্ধান্ত এবং মাটির কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিত্ব তাঁকে সকলের কাছে প্রিয় করে তুলেছে। ধোনির জন্মদিনে আসুন, তাঁর জীবন থেকে নেওয়া ১০টি অজানা ঘটনা জেনে নিই, যা তাঁর মহত্ত্বের আসল কারণ ব্যাখ্যা করে।
ফুটবল গোলকিপার থেকে ক্রিকেটের উইকেটকিপার হওয়ার যাত্রা
ধোনির ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার নয়। রাঁচির একটি স্কুলে তিনি ফুটবল দলের গোলকিপার ছিলেন। ভাগ্য মোড় নেয়, যখন তাঁর ক্রীড়া শিক্ষক ক্রিকেট দলে উইকেটকিপারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং ধোনিকে ট্রায়ালের জন্য ডাকেন। সেই দিনই মাহির ক্রিকেট বিশ্বে পথচলা শুরু হয়।
সচিন তেন্ডুলকরের থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা
মহেন্দ্র সিং ধোনি ক্রিকেট খেলার প্রথম পাঠ সচিন তেন্ডুলকরকে দেখে শিখেছিলেন। ছোটবেলায় তিনি সচিনের পোস্টার দেওয়ালে সাঁটতেন এবং তাঁর খেলা দেখার জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। সচিন আউট হয়ে গেলে, ধোনির খেলা দেখতে ভালো লাগত না এবং তিনি টিভি বন্ধ করে দিতেন।
রেলওয়ের চাকরি ছেড়ে ইতিহাস তৈরি
অনেকেই জানেন না, ক্রিকেটের আগে ধোনি রেলওয়েতে টিকিট কালেক্টর ছিলেন। খড়গপুর স্টেশনে কাজ করার সময়েও তাঁর মন ক্রিকেট মাঠেই পড়ে থাকত। অবশেষে তিনি চাকরি ছেড়ে নিজের স্বপ্নের পিছনে ছুটতে শুরু করেন।
লম্বা চুল এবং পারভেজ মুশাররফের প্রশংসা
ধোনি যখন টিম ইন্ডিয়াতে আসেন, তখন তাঁর লম্বা চুল আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। পাকিস্তান সফরে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে पदार्পণের সময় তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং স্টাইলিশ হেয়ারকাট সকলের নজর কাড়ে। পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশাররফও তাঁর হেয়ারস্টাইলের ভক্ত ছিলেন।
বাইকের প্রতি ভালোবাসা
ধোনির বাইক প্রেম সবারই জানা। প্রথম বেতন থেকে তিনি একটি সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনেছিলেন। আজ তাঁর ৫০টির বেশি বাইকের সংগ্রহ রয়েছে। রাঁচিতে তাঁর ফার্ম হাউসে একটি মিনি বাইক মিউজিয়ামও আছে। অবসর সময়ে ধোনি নিজের বাইকগুলি নিজেই পরিষ্কার করেন।
কেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর তকমা
যে কোনও চাপপূর্ণ ম্যাচে যখন পুরো দল অস্থির হয়ে ওঠে, ধোনির মুখ সবসময় শান্ত দেখা যেত। শেষ ওভারগুলিতেও তিনি স্বাভাবিক থাকতেন এবং মাঠে খেলোয়াড়দের সামলাতেন। তাঁর এই মনোভাবই তাঁকে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ বানিয়েছিল।
ট্রফির চেয়ে দলের অগ্রাধিকার
২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর পুরো দল যখন ট্রফির সাথে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিল, ধোনি তখন পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি মনে করতেন, জয় দলের হয়, ব্যক্তির নয়।
সাইকেলে চড়ে অনুশীলনে যাওয়া
একবার রাঁচিতে যানজটের কারণে ধোনি স্টেডিয়ামে যেতে পারেননি। মাহি কাছাকাছি একটি সাইকেল নিয়ে প্যাডেল করতে করতে অনুশীলনে পৌঁছে যান। এটাই তাঁর সারল্যকে ফুটিয়ে তোলে।
মা ছেলের খেলা দেখতেন না
ধোনির মা ছিলেন তাঁর সবচেয়ে বড় সমর্থক, কিন্তু তিনি লাইভ ম্যাচ দেখতেন না। তাঁর ভয় হত, যদি ধোনি আউট হয়ে যান। তিনি ছেলের সাফল্যের জন্য শুধু প্রার্থনা করতেন।
অধিনায়কত্ব ছাড়লেও, দায়িত্ব নয়
ধোনি ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব ছাড়লেও, দলের পথ দেখানোর দায়িত্ব সবসময় পালন করেছেন। তিনি তরুণদের জন্য পরামর্শদাতা ছিলেন এবং কঠিন সময়ে সবসময় দলের পাশে থেকেছেন।