মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রবিবার আচমকাই ভেঙে পড়ে ছাদের চাঙড়। বিকট শব্দে ভেঙে পড়া ওই চাঙড় এক ব্যক্তির মাথার উপর গিয়ে পড়ে। মুহূর্তে হইচই পড়ে যায় হাসপাতাল চত্বরে। রোগী ও পরিজনেরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আহত জাকির আলি, মাথায় ১৫টি সেলাই
আহত ব্যক্তির নাম জাকির আলি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি মালদার চাচোল এলাকার বাসিন্দা। তাঁর সদ্যোজাত শিশু বর্তমানে মালদা মেডিক্যাল কলেজের মাতৃমা বিভাগে ভর্তি। এদিন সেই বিভাগের নীচে জাকির তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলেন। আচমকাই ছাদের একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ে তাঁর মাথার উপর। গুরুতর জখম হন তিনি। বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন এবং তাঁর মাথায় লেগেছে ১৫টি সেলাই।
অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন বন্ধু, ভাগ্যগুণে বেঁচে গেলেন
ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল জাকিরের সঙ্গে থাকা বন্ধুর। চাঙড়টি তাঁর সামান্য পাশ ঘেঁষে পড়ে, ফলে তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার ঠিক কয়েক সেকেন্ড আগে জাকিরের বন্ধু তাঁর অবস্থান পরিবর্তন না করলে, আরও বড় বিপদ ঘটতে পারত।
রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি? তদন্তে নেমেছে কর্তৃপক্ষ
ঘটনার পরই মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কী কারণে ছাদের অংশ ভেঙে পড়ল, তা নিয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। যদিও, হাসপাতাল চত্বরে যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাঁদের একাংশের মতে, বহুদিন ধরেই ছাদে চাঙড়ের অবস্থান নড়বড়ে ছিল।
বিরোধীদের তোপ 'কাটমানি দিয়ে করা নিম্নমানের কাজ'
সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে মুখ খুলেছেন বিরোধীরা। দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেন, হাসপাতালের বিল্ডিং ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এই রাজ্যে কাটমানির বিনিময়ে সমস্ত নির্মাণ কাজ হয়। আর সেই সমস্ত কাজই হয় নিম্নমানের। সেই কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবাদে সরব সাধারণ মানুষ, দাবি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা
এই ঘটনার জেরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন— যে হাসপাতালে প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন, সেই ভবনেরই যদি ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে পড়ে, তবে নিরাপত্তা কোথায়? দ্রুত মেরামতির পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ আরও কঠোরভাবে করা হোক, এই দাবি উঠছে সর্বত্র।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন
এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কীভাবে একটি সরকারি হাসপাতালের ছাদ এমন দুর্বল অবস্থায় পৌঁছল, তা নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসক মহল থেকে রোগীর পরিজনেরাও।
একটুখানি অসতর্কতা, বড় বিপদের ইঙ্গিত
একটি সরকারি হাসপাতালের ছাদ ভেঙে পড়া নিছক একটি দুর্ঘটনা নয়— বরং তা হল অব্যবস্থার জ্বলন্ত নিদর্শন। জাকির আলির মতো বহু মানুষ প্রতিদিন এমন দুর্বল পরিকাঠামোর মধ্যে জীবন বাজি রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন। প্রশাসন কি এবার জেগে উঠবে?