মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপের ঝড়ে কমিশন ও অমিত শাহকে নিশানা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপের ঝড়ে কমিশন ও অমিত শাহকে নিশানা

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মঞ্চে বেনজির আক্রমণ

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে সরাসরি জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে তোপ দাগলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, বড়রা কোনো দলের হয়ে ‘ললিপপ খেলে’ মানায় না। এদিন তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে ‘পরিবারতন্ত্র’-এর অভিযোগ তুলে সরব হন। মমতা হুঙ্কার দিয়ে বলেন, বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়ব না তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৃহস্পতিবার মেয়া রোডের সভা থেকে মমতা আগাম ভোটের সুর বেঁধে দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি আক্রমণ

নির্বাচন কমিশনের কাছে মমতার আক্রমণ ছিল নিঃসন্দেহে সরস। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যানকে সম্মান করি। কিন্তু বড়রা যদি কোনও দলের হয়ে ললিপপ খান, তা মানায় না। তিনি আরও বলেন, গোটা ভারতবর্ষ থেকে ৫০০টি টিম দিয়ে বাড়ি বাড়ি সার্ভে চলছে, কার নাম বাদ দেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিজের এলাকার নাম সরাসরি না বলার পরামর্শ দিয়ে সতর্ক করেন, যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাদ না পড়ে।

বিজেপিকে ‘ললিপপ সরকার’ বললেন মমতা

মমতা তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক ব্যবধান তুলে ধরতে বলেন, ললিপপ সরকার বিডিও, এসডিও, ডিএম-দের ভয় দেখাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন আসে যায়, কিন্তু রাজ্য সরকার ভোট চলাকালীন তিন মাসের জন্যই দায়িত্বে থাকে। প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে আপনার দুর্নীতির তথ্য আছে। সব ফাঁস করে দেবো।

পরিবারতন্ত্র নিয়ে অমিত শাহকে নিশানা

মঞ্চ থেকে মমতা সরাসরি অমিত শাহকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “আপনার ছেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। রাজনীতি করলে তো তাঁর কিছুই নেই। এ তো হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার মামলা। এ কি পরিবারতন্ত্র নয়?” এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ নিয়ে মন্তব্য

গত কয়েকদিন ধরে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ ছবিটি নিয়ে রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। মমতা বলেন, “বাংলাকে বদনাম করার জন্য টাকা দিয়ে সিনেমা বানানো হচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, ছবির মাধ্যমে বাংলার ভাবমূর্তিকে বিকৃত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা মেনে নেওয়া যায় না।

জয়েন্ট ফলাফল প্রকাশে দেরি নিয়ে তোপ

মমতা বলেন, যাঁরা কোর্টে একসঙ্গে কেস করেন এবং পরে আমাদের নামে নিন্দা করেন, তাঁরা দু’নম্বরি। তিনি কিছু মামলাকারীর বিরুদ্ধে ‘ব্যাকডোর রাজনীতি’ করার অভিযোগও তোলেন। এছাড়া জয়েন্টের ফলাফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।

ছাত্রদের উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরলেন মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “২০১১ সালের পর রাজ্যের আয় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে সবুজ সাথী প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।” তিনি ছাত্রদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের খতিয়ানও তুলে ধরেন, যা রাজনৈতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

তৃণমূলের দৃঢ়তার বার্তা

মমতা তৃণমূলের সুপ্রিমো হিসেবে ভোট ও রাজনৈতিক কৌশলকে সামনে রেখেছেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, দল কোনো অবস্থাতেই বিরোধীদের সামনে সরে দাঁড়াবে না। দল ও ছাত্রসমাজকে শক্তভাবে একত্রিত রাখার বার্তা দিয়েছেন।

আগাম ভোটের সুর বেঁধে দেওয়া

মমতার বক্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আগাম বিধানসভা ভোটের সূচনা হিসেবে দেখছেন। তিনি সবই তুলে ধরেছেন—কমিশন, প্রতিপক্ষের দুর্নীতি, সিনেমার বিতর্ক, এবং ছাত্রদের উন্নয়ন প্রকল্প। এক কথায়, মঞ্চ থেকে বিজেপি ও কেন্দ্রকে নিশানায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের রণকৌশলও ঘোষণা করেছেন।

Leave a comment