মোহাম্মদ শামি: আদালত হাসিন জাহানকে ৪ লক্ষ টাকা খোরপোশ দিতে নির্দেশ

মোহাম্মদ শামি: আদালত হাসিন জাহানকে ৪ লক্ষ টাকা খোরপোশ দিতে নির্দেশ

কলকাতা হাইকোর্ট মঙ্গলবার ভারতীয় ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ শামি-কে নির্দেশ দিয়েছে যে তিনি তাঁর স্ত্রী হাসিন জাহান এবং মেয়ের জন্য চলমান আইনি বিবাদের সময় প্রতি মাসে চার লক্ষ টাকা খোরপোশ (maintenance) হিসেবে পরিশোধ করবেন।

স্পোর্টস নিউজ: ভারতীয় ক্রিকেট দলের ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ শামি এবং তাঁর স্ত্রী হাসিন জাহানের গল্প কোনো ফিল্মি স্ক্রিপ্টের থেকে কম নয়। একসময় ছিল যখন তাঁদের দু'জনের ভালোবাসার উদাহরণ দেওয়া হতো, কিন্তু আজ এই সম্পর্ক ঘৃণা এবং আইনি লড়াইয়ের রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট শামি-কে প্রতি মাসে ৪ লক্ষ টাকা খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যার মধ্যে ১.৫ লক্ষ টাকা হাসিন জাহানের জন্য এবং ২.৫ লক্ষ টাকা তাঁদের মেয়ে আয়রার ভরণপোষণের জন্য ধার্য করা হয়েছে।

হাসিন ও শামির প্রথম সাক্ষাৎ

হাসিন ও শামির সাক্ষাৎ হয় ২০১২ সালে একটি আইপিএল ম্যাচের সময়, যখন হাসিন কলকাতা নাইট রাইডার্সের জন্য চিয়ারলিডারের কাজ করছিলেন। শোনা যায়, প্রথম দেখাতেই শামি তাঁর প্রেমে পড়েন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়, তারপর প্রেম বাড়ে এবং প্রায় দু'বছর ডেটিং করার পর ৬ জুন ২০১৪ তারিখে তাঁরা মুরাদাবাদের একটি ফাইভ স্টার হোটেলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই বিয়েতে বেশি লোক উপস্থিত ছিলেন না, তবে তাঁদের সম্পর্ক বেশ আলোচনায় ছিল। বিয়ের পর হাসিন জাহান মডেলিং এবং চিয়ারলিডিংয়ের কাজ ছেড়ে দেন এবং শামির পরিবার ও তাঁর ট্যুরে তাঁর সঙ্গে দেখা যেতে শুরু করেন।

এই জুটির সুখের ছবিটা ভেঙে যায় যখন ২০১৮ সালে হাসিন শামি-র বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, এমনকী ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ আনেন।

হাসিন ও শামির সম্পর্কে কখন ফাটল ধরে?

মার্চ ২০১৮-তে হাসিন যাদবপুর থানায় শামি এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেন, যেখানে তিনি তাঁর নাবালিকা মেয়ের প্রতি অবহেলা এবং তাঁর উপর মারধরের অভিযোগ করেন। এই অভিযোগগুলি ক্রিকেট ভক্তদেরও হতবাক করেছিল, কারণ শামির নাম সবসময় একজন পরিশ্রমী এবং অনুশাসিত খেলোয়াড় হিসেবে নেওয়া হতো।

হাসিন আদালতে বলেছিলেন যে তাঁর মাসিক খরচ প্রায় ৬.৫ লক্ষ টাকা, যেখানে শামির বার্ষিক আয় ৭.৫ কোটি টাকার বেশি। তাই শামি-কে তাঁর এবং মেয়ের দেখাশোনার জন্য একটি বড় পরিমাণ অর্থ দিতে হবে। এর জবাবে শামিও বেশ কিছু গুরুতর কথা জানান। তিনি দাবি করেন যে হাসিন জাহান তাঁর প্রথম বিয়ের কথা গোপন করেছিলেন। শামির মতে, এটি হাসিনের দ্বিতীয় বিয়ে ছিল এবং তাঁর আগের বিয়ে থেকে দুটি মেয়েও ছিল। শামি বলেছিলেন যে হাসিন এই মেয়েদের তাঁর বোনের মেয়ে হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন, তবে তারা আসলে তাঁর নিজের সন্তান ছিল।

হাসিনের প্রথম স্বামী সাইফুদ্দিন মিডিয়াতে বলেছিলেন যে তাঁদের বিয়ে ২০০২ সালে হয়েছিল এবং ২০১০ সালে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সাইফুদ্দিন জানান যে হাসিন ছোটবেলা থেকেই মডেলিং এবং নিজের পরিচিতি তৈরির আকাঙ্খা রাখতেন, কিন্তু তাঁর শ্বশুরবাড়িতে মহিলাদের কাজ করার অনুমতি ছিল না, তাই তাঁরা আলাদা হয়ে যান।

এই বিতর্কের মাঝে শামি অভিযোগ করেন যে হাসিন কেবল টাকার জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন এবং এটা একটা ষড়যন্ত্র। যদিও আদালত আর্থিক নথিগুলির বিশ্লেষণ করার পরে রায় দিয়েছে যে শামির আর্থিক অবস্থা ভালো এবং তিনি হাসিন এবং মেয়েকে ভালো খোরপোশ দিতে সক্ষম।

শামিকে খোরপোশ দিতে হবে

আগে জেলা আদালত শামি-কে প্রতি মাসে তাঁর মেয়ের জন্য ৮০,০০০ টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর জন্য ৫০,০০০ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু হাসিন এটিকে যথেষ্ট নয় বলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। এখন হাইকোর্ট প্রতি মাসে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার নতুন নির্দেশ জারি করেছে। এইসব কিছুর পরেও, শামির পেশাগত জীবনে তিনি দারুণভাবে ফিরে এসেছেন। আঘাত ও বিতর্ক কাটিয়ে তিনি টিম ইন্ডিয়াতে নিজের স্থান পুনরায় তৈরি করেছেন, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর এই বিবাদ এখনও শান্ত হয়নি।

শামি ও হাসিনের গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় যে পাবলিক ফিগার হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তিগত সম্পর্কের উত্থান-পতন ঘটে, এবং যখন বিবাদ আদালতে পৌঁছায়, তখন একটি পারফেক্ট কাপলের ছবিও সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যেতে পারে।

এই প্রেমের গল্পের শুরুটা যত ফিল্মি ছিল, তার শেষটা ততটাই তিক্ত বলে মনে হয়। ভবিষ্যতে দেখা যাক, আদালতে চলমান এই মামলার নিষ্পত্তি কবে হয় এবং এর ফল কী হয়। আপাতত, হাসিন জাহান ও শামির লড়াই সোশ্যাল মিডিয়া এবং খবরে আবারও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, এবং তাঁদের মেয়ে আয়রার ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে।

Leave a comment