আগাম বর্ষা সূচনাতেই ছন্দে মৌসুমী বায়ু

আগাম বর্ষা সূচনাতেই ছন্দে মৌসুমী বায়ু
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু যেন এ বছর নিজের নির্ধারিত সময়কে হার মানিয়েছে। ২৪ মে-তেই কেরল, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, মিজোরাম ও পুদুচেরিতে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। একঝাঁক সজীবতা নিয়ে এগিয়ে চলেছে সে। এবার তার লক্ষ্য—পশ্চিমবঙ্গের আকাশ।

দু’-তিন দিনের মধ্যেই বঙ্গে বর্ষার পা!

আবহাওয়ার দফতরের পূর্বাভাস বলছে, পরবর্তী ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যেই বর্ষা সাব-হিমালয়ান পশ্চিমবঙ্গে ও দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করতে পারে। কৃষকদের মুখে হাসি, আবহবিদেরা খুশিতে উদ্বেল। এত দ্রুত বৃষ্টির আগমন বিরল নয়, তবে নিঃসন্দেহে বিশেষ কিছু বার্তা বহন করে।

বাঙালির অনুভবে বর্ষা এক আবেগ

বছরের আর পাঁচটা দিন নয়—বর্ষা মানেই বাঙালির মনে এক আলাদা নস্টালজিয়া। সাধারণত ১০ জুনের আশেপাশে রাজ্যে বর্ষা প্রবেশ করে। কিন্তু এ বার বর্ষার গতিপথ যেন সময়কে উপেক্ষা করেই ছুটছে। মিজোরামের পর এবার পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে ঢোকার অপেক্ষায়।

পাহাড়ি জেলাগুলোয় শুরু হবে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রথম ধাপে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে হালকা বৃষ্টির ইঙ্গিত মিলেছে। দক্ষিণবঙ্গেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রাক্‌-বর্ষা ছোঁয়ায় বৃষ্টির স্বাদ মিলবে, যদিও সেটি পরে রূপ নেবে নিয়মিত মৌসুমী বৃষ্টিতে।

বর্ষা আগমন কীভাবে আগাম? বলছেন আবহাওয়াবিদেরা

বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরের উষ্ণ জলতল এবং আরব সাগরের নিম্নচাপ এই আগাম বর্ষার প্রধান চালিকা শক্তি। জলতলের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা বায়ু প্রবাহকে দ্রুততর করে তুলছে, যার ফলে বর্ষার পথ প্রশস্ত হচ্ছে দ্রুত।

দক্ষিণ আরব সাগরের দিক থেকেও নিম্নচাপের সহায়তা

দক্ষিণ আরব সাগর থেকেও একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। এই দুই তরঙ্গ একত্রে বর্ষাকে সময়ের আগেই বঙ্গোপসাগরের বুকে টেনে এনেছে। বর্ষা যেন এক পলক অপেক্ষা না করেই বাংলায় নামার তোড়জোড়ে ব্যস্ত।

বর্ষা প্রথমে কোথায় নামবে? উত্তরবঙ্গ ও উপকূল নজরে

বর্ষার প্রথম ছোঁয়া লাগবে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহারে। এর সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, কলকাতা ও ঝাড়গ্রামেও স্যাঁতস্যাঁতে আবহ তৈরি হবে। কিছু এলাকায় বজ্রপাত-সহ হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছেই।

কৃষকদের চোখে স্বস্তি, তবে সাবধানতাও জরুরি

প্রাকৃতিক অনুগ্রহ হলেও, এই আগাম বর্ষা কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয়ও ডেকে আনতে পারে। বিশেষত ধানচাষে যদি জল জমে যায়, তবে চারার ক্ষতি হতে পারে। কৃষি দফতর ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা দিয়েছে—বৃষ্টির উপর সম্পূর্ণ ভরসা না রেখে বীজ রোপণ করতে হবে পরিকল্পনামাফিক।

বজ্রবিদ্যুৎ ও ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কা বর্ষার শুরুতে

আগত বর্ষা শুধু শান্ত বৃষ্টি নয়, সঙ্গে আনছে বজ্রবিদ্যুৎ ও দমকা হাওয়ার আশঙ্কা। বিশেষ করে বিকেল ও সন্ধ্যার দিকে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। শহরের আকাশে জমাট মেঘ দেখা যেতে পারে আকস্মিকভাবে।

বর্ষা আর এক পা দূরেই: বাংলার অপেক্ষার শেষ লগ্ন

বর্ষা আর থেমে নেই। তার আগমন ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে রাজ্যের আকাশ জুড়ে শোনা যাবে প্রথম বৃষ্টির সুর, মাটির গন্ধে মিলবে অদ্ভুত প্রশান্তি। তবে এই প্রেমিক বৃষ্টি যেন বিপদের দূত হয়ে না ওঠে—এটাই সকলের কামনা।

Leave a comment