মুম্বাই ও পালঘরে দুটি মর্মান্তিক ঘটনা: শিশু নির্যাতন ও বিল্ডারের আত্মহত্যা

মুম্বাই ও পালঘরে দুটি মর্মান্তিক ঘটনা: শিশু নির্যাতন ও বিল্ডারের আত্মহত্যা

মুম্বাইয়ের মানখুর্দ এলাকা থেকে একটি অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং হৃদয় বিদারক ঘটনা সামনে এসেছে। এখানে এক পিতা তাঁর মাত্র ৫ বছর বয়সী মেয়েকে নির্মমভাবে মারধর করার পাশাপাশি তার গালে সিগারেট দিয়ে দাগ দিয়েছে। অভিযুক্তের পরিচয় রাজেশরাম ওরফে ভগবান হিসাবে জানা গেছে। এই নিষ্ঠুরতার প্রকাশ ঘটে, যখন অভিযুক্তের স্ত্রী তার স্বামীর এই কুকর্মের ভিডিও এক পরিচিত ব্যক্তিকে পাঠান, যিনি তৎক্ষণাৎ মানখুর্দ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।

ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, শিশুটিকে শুধু নির্মমভাবে মারা হচ্ছিল না, বরং তাকে সিগারেট দিয়ে পোড়ানোও হচ্ছিল। ঘটনাটি সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে অভিযান চালায় এবং তদন্ত শুরু করে।

ঘুমোচ্ছিলো না, তাই মারা হল

পুলিশের এক মহিলা অফিসার যখন শিশুটির সঙ্গে কথা বলেন, তখন সে যে কারণ জানায়, তা আরও বেশি হতবাক করার মতো ছিল। নিষ্পাপ মেয়েটি জানায়, তার বাবা তাকে শুধুমাত্র এই কারণে মেরেছিল এবং পুড়িয়েছিল যে, সে সময়ে ঘুমোচ্ছিল না। শিশুটির শরীরে পোড়া এবং মারধরের অনেক চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা দেখে স্বয়ং পুলিশ অফিসারও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

পুলিশ অভিযুক্ত পিতার বিরুদ্ধে গুরুতর ধারায় মামলা রুজু করেছে এবং তাকে দ্রুত গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া চলছে। এই ঘটনা এখন শিশু অধিকার সংগঠন এবং সমাজের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে একটি নিষ্পাপ শিশু নিজের বাড়িতেই অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

পালঘরে বিল্ডারের আত্মহত্যা

মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার নালাসোপারা থেকে আরও একটি বেদনাদায়ক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে আর্থিক সংকট এবং মানসিক চাপে জর্জরিত এক বিল্ডার জয়প্রকাশ চ্যাভান নিজের বাড়িতে ফাসিঁ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছে, যেখানে দুই পুলিশ কর্মী এবং এক রিয়েল এস্টেট এজেন্টের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জয়প্রকাশ চ্যাভানকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছিল এবং মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছিল, যার ফলে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি এই পদক্ষেপ নেন। সুইসাইড নোটে লেখা হয়েছে যে, তাকে অপমান করা হতো এবং তার উপর নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল।

সুইসাইড নোটের তদন্তে পুলিশ

পুলিশ মৃতদেহটিকে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। আধিকারিকরা সুইসাইড নোটের সত্যতা যাচাই করছেন এবং তাতে আনা অভিযোগগুলি গভীরভাবে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন। যদিও, এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

এই ঘটনা শুধু একটি আত্মহত্যা নয়, বরং পুলিশ এবংসিস্টেমের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। যখন কোনও নাগরিকের ন্যায়বিচারের আশা থাকে না এবং সে নিজেকে শেষ করতে বাধ্য হয়, তখন এটি সম্পূর্ণব্যবস্থার জন্য একটি সতর্কবার্তা।

মুম্বাই এবং পালঘরের এই দুটি ঘটনা সমাজে ক্রমবর্ধমান সংবেদনহীনতা এবংতন্ত্রের দুর্বলতাকে उजागर করে। একদিকে যেখানে একটি নিষ্পাপ শিশু তার বাবার পাশবিকতার শিকার হয়, সেখানে অন্য দিকে একজন ব্যবসায়ী সামাজিক এবং পুলিশি চাপে আত্মহত্যা করেন। উভয় ক্ষেত্রেই প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনাগুলি রোধ করা যায়।

Leave a comment