নবান্ন নিরাপত্তা:হাওড়ার ক্ষেত্রমোহন ব্যানার্জি লেনে নবান্নের দেড়শো মিটার দূরে বহুতল তৈরির পরিকল্পনা আটকে দিল কলকাতা পুলিশের ১৭ দফা শর্ত। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে লালবাজার জানিয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ের কোনও জানলা বা ব্যালকনি নবান্নের দিকে মুখ করা যাবে না। এমনকি ছাদও ১০ ফুট উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা থাকতে হবে। প্রোমোটারের পক্ষ থেকে এই শর্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে, যেখানে ৪ নভেম্বর ফের শুনানি হবে।

‘হাই সিকিউরিটি জোন’-এর ফাঁদে প্রোমোটার
হাওড়ার ক্ষেত্রমোহন ব্যানার্জি লেন নবান্ন থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দূরে পড়ায়, এলাকাটি ২০১৯ সালে ‘হাই সিকিউরিটি জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে লালবাজার। সেই থেকেই ওই জমিতে বহুতল নির্মাণে একের পর এক বাধা। প্রোমোটার ও জমির মালিক পাঁচ বছর ধরে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। পুরোনো বাড়ি ভাঙতেও লেগেছিল আদালতের অনুমতি।
১৭ দফা শর্তে কড়া নজর লালবাজারের
লালবাজারের দাবি, নবান্নের নিরাপত্তা রক্ষায় বহুতলের নকশায় নানা বিধিনিষেধ মানতেই হবে।
প্রধান শর্তগুলো হল—
নবান্নমুখী জানলা বা ব্যালকনি নিষিদ্ধ।
ছাদে অন্তত ১০ ফুট উঁচু দেওয়াল দিতে হবে।
ফ্ল্যাট বিক্রির আগে ক্রেতার অতীত রেকর্ড যাচাই করতে হবে।
কোনও ভাবেই বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
সিসিটিভি লাগাতে হবে পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী।
‘বিল্ডিং রুলসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ দাবি আইনজীবীদের
প্রোমোটারের পক্ষে সওয়ালকারী আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী বলেন, কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং রুলস অনুযায়ী ঘরে জানলা থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ পুলিশ বলছে, জানলা করা যাবে না—এমন কোনও আইন দেশে নেই। তাঁর কথায়, নিরাপত্তার নামে এভাবে নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।

হাইকোর্টে তীব্র সওয়াল-জবাব
বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তর এজলাসে দু’দিন ধরে হয়েছে দীর্ঘ শুনানি। আগামী ৪ নভেম্বর কলকাতা পুলিশের তরফে পাল্টা যুক্তি পেশ করা হবে। আদালত সূত্রে খবর, বিচারক জানতে চেয়েছেন, নিরাপত্তা রক্ষার নামে কতটা নাগরিক অধিকার খর্ব করা যায়—সেই দিকও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রশ্ন তুলছে প্রশাসনিক যুক্তি
আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা নবান্নে কাজ করেন ঠিকই, কিন্তু নিরাপত্তার নামে আশপাশের বাসিন্দাদের স্বাধীনতা এমনভাবে সীমিত করা নজিরবিহীন। কেউ মন্ত্রীর বাড়ির পাশের ফ্ল্যাটে জানলা রাখতে পারছেন না—এমনটা আগে হয়নি। তাই এই মামলার রায় ভবিষ্যতের প্রশাসনিক নীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

নবান্নের আশপাশে নিরাপত্তা বাড়াতে কঠোর লালবাজার। হাওড়ার ক্ষেত্রমোহন ব্যানার্জি লেনে বহুতল নির্মাণে দিয়েছে ১৭ দফা শর্ত। জানলা, ব্যালকনি থেকে ছাদ—সবই নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলেছে কলকাতা পুলিশ। নিরাপত্তার যুক্তি ঘিরে আদালতে চলছে তীব্র টানাপোড়েন।












