হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, নাগ পঞ্চমী উৎসব শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে পালিত হয়। এই দিনে নাগ দেবতার পূজা বিশেষভাবে করা হয়। ২০২৫ সালে এই উৎসবটি মঙ্গলবার, ২৯শে জুলাই তারিখে পড়বে। পঞ্চমী তিথি এই দিন সকাল ৫টা ২৪ মিনিটে শুরু হবে এবং রাত ১২টা ৪৬ মিনিটে শেষ হবে। এই তিথিকে শুভ মুহূর্ত মনে করে নাগ দেবতার পূজা-অর্চনা করা হয়।
শ্রাবণে নাগ পঞ্চমীর গুরুত্ব
শ্রাবণ মাস ভগবান শিবকে উৎসর্গ করা হয় এবং শিবের গলায় সর্প বিরাজ করে। এই কারণে নাগ পঞ্চমী শিব ভক্তির সঙ্গেও যুক্ত। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে সাপের পূজা করলে পরিবারের ওপর সর্পদোষের প্রভাব পড়ে না এবং সাপ সম্পর্কিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিশেষ করে মহিলারা তাদের পরিবার এবং ভাইদের দীর্ঘায়ু কামনা করে এবং এই দিনে ব্রত রাখে।
বারোটি প্রধান সাপের পূজা হয় এই দিনে
নাগ পঞ্চমীর দিনে ১২টি বিশেষ সাপের পূজা করার বিধান আছে। এই সাপগুলোর নাম হল অনন্ত, বাসুকী, শেষ, পদ্ম, কম্বল, কর্কোটক, অশ্বতর, ধৃতরাষ্ট্র, শঙ্খপাল, কালিয়া, তক্ষক এবং পিঙ্গল।
এই সাপগুলোকে স্মরণ করে তাদের জন্য জল, দুধ, ফুল, চন্দন এবং ধূপ-দীপ অর্পণ করা হয়। কোথাও কোথাও গ্রামীণ অঞ্চলে বাড়ির দেওয়ালে বা দরজায় গোবর দিয়ে সাপের মূর্তি তৈরি করে তার পূজা করা হয়।
কীভাবে নাগ পঞ্চমী পূজা করবেন
ব্রতের সংকল্প নিন
সকালে সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করুন। ব্রত রাখার সংকল্প নিন এবং ভগবান শিবের ধ্যান করুন।
নাগ দেবতার মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন
নাগ পঞ্চমীর দিনে ঘরের প্রধান দরজায় বা পূজার স্থানে নাগ দেবতার মাটি বা ধাতুর মূর্তি স্থাপন করুন। গ্রামে গোবর দিয়ে সাপ তৈরি করে তার পূজা করারও প্রচলন আছে।
নাগ দেবকে স্নান করান এবং ভোগ নিবেদন করুন
নাগ দেবতাকে পঞ্চামৃত (দুধ, দই, ঘি, মধু এবং চিনি) দিয়ে স্নান করান। এর পরে তাঁকে চন্দন, অক্ষত, কুশ, দূর্বা, ফুল এবং মিষ্টি অর্পণ করুন।
পূজার সামগ্রী প্রস্তুত রাখুন
পূজার জন্য ধূপ, দীপ, রোলি, মৌলি, জলের পাত্র, ফল, মিষ্টি এবং পঞ্চামৃত অবশ্যই রাখুন। নাগ দেবতার আরতি করুন এবং বিশেষ পূজা মন্ত্র উচ্চারণ করুন।
নাগ পঞ্চমীর পূজা মন্ত্র
এই দিনে বিশেষ মন্ত্র জপ করা শুভ বলে মনে করা হয়। নীচে দেওয়া মন্ত্রটি সাপের স্তুতির মন্ত্র:
सर्वे नागाः प्रीयन्तां मे ये केचित् पृथ्वीतले।
ये च हेलिमरीचिस्था येऽन्तरे दिवि संस्थिताः॥
ये नदीषु महानागा ये सरस्वतिगामिनः।
ये च वापीतडगेषु तेषु सर्वेषु वै नमः॥
নাগ কথার শ্রবণ করুন
নাগ পঞ্চমীর দিনে নাগ কথার পাঠ বা শ্রবণ করাও শুভ বলে মনে করা হয়। এই কথা সাপের উৎপত্তি, তাদের মহিমা এবং তাদের পূজার সঙ্গে জড়িত বিশ্বাসগুলি জানায়।
কোথায় কোথায় বিশেষ আয়োজন হয়
উত্তর ভারতের অনেক অংশে নাগ পঞ্চমীর বিশেষ গুরুত্ব আছে। উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্য প্রদেশ এবং রাজস্থানে এই দিনে মন্দিরগুলোতে বিশেষ আয়োজন হয়। উজ্জয়িনী, কাশী এবং নাগেশ্বরের মতো শিব মন্দিরগুলোতে নাগ দেবতার বিশেষ আরাধনা করা হয়।
গ্রামীণ ঐতিহ্যগুলোতে নাগ পূজার আলাদা রীতি
গ্রামীণ অঞ্চলে এই দিনে মহিলারা ঘরের দরজা বা দেওয়ালে গোবর দিয়ে সাপের মূর্তি তৈরি করেন। তারপর সেখানে দুধ ও মিষ্টি নিবেদন করে আরতি করা হয়। কিছু স্থানে নাগ দেবতার প্রতিমাকে মাটিতে সামান্য পুঁতে পূজা করা হয় এবং তাঁদের জল, ফুল ও চাল অর্পণ করা হয়।
এই দিনে কেন মাটি খোঁড়া হয় না
নাগ পঞ্চমীর দিনে মাটি খোঁড়াকে অশুভ মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে মাটির নিচে বসবাসকারী সাপেরা বাইরে আসে, এবং খোঁড়াখুঁড়ির ফলে তাদের কষ্ট হতে পারে। তাই জমিতে লাঙল দেওয়া হয় না এবং নির্মাণ কাজও বন্ধ থাকে।
ব্রত রাখার নিয়ম
নাগ পঞ্চমীতে মহিলারা সারাদিন উপবাস রাখেন। ফল খেয়ে সন্ধ্যার সময় নাগ দেবতার পূজা করার পরে ব্রত ভঙ্গ করা হয়।
নাগ পঞ্চমী ও লোক বিশ্বাস
লোক বিশ্বাস অনুসারে, নাগ পঞ্চমীতে পূজা করলে সাপের ভয় থাকে না এবং পরিবারে সুখ-শান্তি বজায় থাকে। অনেক পরিবারে এই দিনে দুধ, চাল ও গুড় দিয়ে তৈরি খাবার তৈরি করা হয় এবং অভাবীদের দানও করা হয়।