আইসিসি পরোয়ানা এড়াতে ইউরোপ ঘুরলেন নেতানিয়াহু: দীর্ঘ হল নিউইয়র্কের উড়ানপথ

আইসিসি পরোয়ানা এড়াতে ইউরোপ ঘুরলেন নেতানিয়াহু: দীর্ঘ হল নিউইয়র্কের উড়ানপথ

আইসিসি-র গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিমান নিউইয়র্ক যাওয়ার সময় ইউরোপকে এড়িয়ে গেছে। আয়ারল্যান্ড এবং স্পেন গ্রেপ্তারের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, যার ফলে তাঁর যাত্রাপথ স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড নিউজ: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যখন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন, তখন তাঁর বিমান একটি অস্বাভাবিক পথ ধরে গিয়েছিল। সাধারণত, তেল আবিব থেকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য ইসরায়েলি বিমান ইউরোপের উপর দিয়ে উড়ে যায়, কিন্তু এবার নেতানিয়াহু এমন একটি পথ বেছে নিয়েছিলেন যা সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই পরিবর্তন কোনো সাধারণ কারণে নয়, বরং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত অর্থাৎ আইসিসি-র গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে ঘটেছে।

আইসিসি-র পরোয়ানা

২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে গাজা যুদ্ধের সময় কথিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ইসরায়েল এই অভিযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে সেগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কিন্তু আদালতের আদেশ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।

দীর্ঘ এবং অস্বাভাবিক যাত্রা

নেতানিয়াহুর সরকারি বিমান “উইংস অফ জিয়ন” এবার ইউরোপের বেশিরভাগ অংশকে এড়িয়ে গেছে। এই পথটি কেবল গ্রিস এবং ইতালির পাশ দিয়ে গেছে, যা স্বাভাবিক পথের চেয়ে প্রায় ছয়শো কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল। এই সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে দেখায় যে নেতানিয়াহু এবং তাঁর দল যেকোনো ঝুঁকি এড়াতে চেয়েছিলেন।

ইউরোপীয় দেশগুলির অবস্থান

আইসিসি-র সদস্য দেশগুলির মধ্যে নেতানিয়াহুকে নিয়ে স্পষ্ট মতভেদ দেখা গেছে। আয়ারল্যান্ড এবং স্পেন আগেই জানিয়েছিল যে নেতানিয়াহু যদি তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন, তাহলে তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করবে। অন্যদিকে, ফ্রান্স ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা গ্রেপ্তার করবে না, অন্যদিকে ইতালি এ বিষয়ে অনিশ্চিত অবস্থান নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর বিমান ইউরোপের একটি বড় অংশকে এড়িয়ে চলে গেছে।

ফ্রান্সের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল

খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল ফ্রান্সের কাছে তাদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল। তবে এ বিষয়ে প্যারিসের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট জবাব আসেনি। কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে যে ফ্রান্স অনুমতি দিলে কি নেতানিয়াহুর বিমান স্বাভাবিক পথে নিউইয়র্ক যেত?

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলি সরকার আইসিসি-র অভিযোগ এবং পরোয়ানা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বক্তব্য যে, গাজায় পরিচালিত অভিযান কেবল হামাসের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ছিল। ইসরায়েলের যুক্তি হলো, এই ধরনের পরোয়ানা কেবল দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা এবং এগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইসিসি-র সদস্য নয় এবং তারা বরাবরই এই আদালতের বিচারিক ক্ষমতাকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। এই কারণেই নেতানিয়াহুকে নিউইয়র্কে গিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ইউরোপের মতো অঞ্চলে ভবিষ্যতের যাত্রা তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

Leave a comment