বিহারে এনডিএ জোটের দুই সঙ্গীর মধ্যে বিবাদ: ২০২৫ নির্বাচনের আগে সঙ্কট?

বিহারে এনডিএ জোটের দুই সঙ্গীর মধ্যে বিবাদ: ২০২৫ নির্বাচনের আগে সঙ্কট?

ঐক্যর সমস্ত দাবীর পরেও রাজ্যে এনডিএ-র দুই সহযোগী দল, লোজপা (রামবিলাস) এবং হিন্দুস্তানি আওয়াম मोर्चा (হাম), পারস্পরিক বিবাদের কোনো সুযোগ ছাড়ছে না।

পাটনা: বিহারের রাজনীতিতে এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স)-এর घटक দলগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ নতুন কিছু নয়, কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের পর, যত বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে, এই বিতর্ক ততই তীব্র হচ্ছে। এবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (হাম)-এর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতনরাম মাঝি এবং লোজপা (রামবিলাস)-এর সভাপতি চিরাগ পাসোয়ান।

‘অভিজ্ঞতার অভাব’-এর উপর মাঝির আক্রমণ

হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা জিতনরাম মাঝি সম্প্রতি চিরাগ পাসোয়ানকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে তাঁর ‘অভিজ্ঞতার অভাব’ রয়েছে এবং বিহারের রাজনীতির সূক্ষ্মতা বুঝতে তাঁর সময় লাগবে। মাঝি বলেন, বিহারের মতো রাজনৈতিকভাবে জটিল রাজ্যে কেবল জনপ্রিয়তা দিয়ে কাজ হবে না, বরং অভিজ্ঞতাও জরুরি।

লোজপা (রা)-এর সাংসদের তীব্র পালটা জবাব

মাঝির এই মন্তব্যের পালটা জবাব দিতে গিয়ে চিরাগ পাসোয়ানের ভগ্নিপতি এবং সমস্তিপুর থেকে সাংসদ অরুণ ভারতী বুধবার তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে মাঝির নাম না নিয়ে বলেন, বিহার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার আগে পদত্যাগ করার অভিজ্ঞতা, সত্যিই চিরাগ পাসোয়ানের নেই।

অরুণ ভারতী এখানে মাঝির ২০১৫ সালের সেই ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের দাবি করা সত্ত্বেও, বিধানসভায় ফ্লোর টেস্টের আগেই পদত্যাগ করেছিলেন। ভারতী ব্যঙ্গ করে বলেন, সম্ভবত মাঝি সেই ‘অভিজ্ঞতা’র কথা বলছেন, যা চিরাগের নেই।

এনডিএ-তে টানাপোড়েন, জোট নিয়ে প্রশ্ন

বিহারের এনডিএ-র মধ্যে লোজপা (রা) এবং হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার মধ্যে এই বাগযুদ্ধ নতুন নয়। লোজপা (রা) দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের এনডিএ-তে ‘সমান অধিকার’ পাওয়ার কথা বলছে, যেখানে হাম পার্টিও তাদের আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে সোচ্চার। এমন পরিস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই দুই দলের মধ্যেকার টানাপোড়েন বিজেপির জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

চিরাগের নীরবতা, কিন্তু ইঙ্গিত স্পষ্ট

যদিও চিরাগ পাসোয়ান নিজে এই বিতর্ক নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি, তবে ২৯ জুন রাজগীরে অনুষ্ঠিত একটি দলীয় অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বিহার থেকে নয়, বিহারের জন্য নির্বাচন লড়ব’। তাঁর এই মন্তব্যকে লোজপা (রা)-এর কর্মীরা আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকার ঘোষণা হিসেবে দেখছেন। দলের সাংসদ অরুণ ভারতীও ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে চিরাগ শাহাবাদ অঞ্চলের কোনো বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

অরুণ ভারতী তাঁর পোস্টে লিখেছেন যে দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা দেখাচ্ছে, রাজ্যের সাধারণ মানুষ চিরাগ পাসোয়ানের নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি স্তরে এই দাবি উঠছে যে, এখন চিরাগ পাসোয়ানকে বিহারের রাজনীতিতে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে হবে’।

এনডিএ-র ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন

একদিকে বিজেপি ২০২৫ বিধানসভা নির্বাচনের আগে জোটকে ঐক্যবদ্ধ দেখাতে চাইছে, অন্যদিকে, জোটসঙ্গীদের এই বিবাদ এনডিএ-র ঐক্য নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করছে। মাঝি ও চিরাগের এই কথার লড়াই জোটের কৌশলগত চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিহারে সামাজিক সমীকরণ খুবই জটিল, এবং যদি এনডিএকে ২০২৫ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরতে হয়, তাহলে লোজপা (রা) এবং হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা-র মতো দলগুলির মধ্যে সংলাপকে শক্তিশালী করতে হবে। অন্যথায় বিরোধীরা এর সুবিধা পেতে পারে।

Leave a comment