ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু E1 বসতি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন এবং স্পষ্টভাবে বলেছেন যে কোনও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হবে না। এই পদক্ষেপ ওয়েস্ট ব্যাঙ্ককে দুটি অংশে বিভক্ত করবে এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে প্রায় শেষ করে দেবে।
E1 প্রকল্প: ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলে আসা বিবাদ আবারও সামনে এসেছে। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে কোনও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র (Palestinian State) গঠিত হবে না। নেতানিয়াহু এই মন্তব্যটি করেছেন যখন তিনি বিতর্কিত E1 বসতি সম্প্রসারণ প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। এই প্রকল্পটি কেবল ওয়েস্ট ব্যাঙ্ককেই দুটি ভাগে ভাগ করবে না, বরং পূর্ব জেরুজালেমকেও (East Jerusalem) বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
E1 প্রকল্প কী এবং কেন এটি বিতর্কিত
জেরুজালেমের পূর্বে প্রায় ১২ বর্গ কিলোমিটার জমিতে নির্মিত এই প্রকল্পটিকে "East 1" বা "E1" বলা হয়। এটি মা'আলে আদুমিমের (Ma’ale Adumim) কাছে অবস্থিত। এই অঞ্চলে হাজার হাজার নতুন বাড়ি তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে, পাশাপাশি নতুন রাস্তা এবং পরিকাঠামো (Infrastructure) নির্মাণ করা হবে। এর জন্য প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হওয়ার অনুমান করা হচ্ছে।
আসলে, এই প্রকল্পটি নতুন নয়। ২০১২ এবং ২০২০ সালে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলির তীব্র আপত্তির কারণে এটি স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর এটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেছেন।
নেতানিয়াহুর স্পষ্ট বক্তব্য
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, "কোনও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না। আমরা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের ভূমি এবং আমাদের সুরক্ষা রক্ষা করব।" এই মন্তব্যটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইজরায়েল সম্প্রতি কাতারে হামাস নেতাদের নিশানা করার চেষ্টা করেছিল। এই প্রকল্পটি পুনরায় শুরু করলে ইজরায়েল এবং তার মিত্রদের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।
ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং পূর্ব জেরুজালেমের উপর প্রভাব
যদি E1 প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়, তবে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক (West Bank) দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে। এর ফলে উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চল একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে পূর্ব জেরুজালেমের উপর, যা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কল্পনায় রাজধানী হিসেবে বিবেচিত হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পূর্ব জেরুজালেম ইজরায়েলের দখলে আরও দৃঢ়ভাবে চলে আসবে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য এর দাবি প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
জাতিসংঘ এবং অনেক দেশ মনে করে যে এই পদক্ষেপের পরে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান, যেখানে ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয়ই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সহাবস্থান করত, তা এখন প্রায় শেষ হয়ে যাবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির প্রশ্ন
এই বিতর্কিত প্রকল্প এবং নেতানিয়াহুর মন্তব্যের পরে এখন বিশ্বের নজর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (UN General Assembly) উপর। অনেক পশ্চিমা দেশ ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা আসন্ন অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
অবৈধ বসতিগুলির উপর আন্তর্জাতিক আইনের অবস্থান
ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে নির্মিত ইজরায়েলি বসতিগুলিকে আন্তর্জাতিক আইন অবৈধ বলে মনে করে। চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন (Fourth Geneva Convention) অনুযায়ী, কোনও দখলদার শক্তি তার নাগরিকদের দখলকৃত এলাকায় বসতি স্থাপনের অনুমতি দিতে পারে না।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UN Security Council) বেশ কয়েকটি প্রস্তাবে স্পষ্ট বলেছে যে এই বসতিগুলির কোনও আইনি বৈধতা নেই।
ইজরায়েলের যুক্তি কী
যদিও ইজরায়েল এই যুক্তি মানতে অস্বীকার করে। তাদের মতে, চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে প্রযোজ্য নয় কারণ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগে এই অঞ্চলটি কোনও স্বীকৃত রাজ্যের সার্বভৌমত্বের অধীনে ছিল না। ইজরায়েল আরও দাবি করে যে এটি "জনসংখ্যার স্থানান্তর" (Population Transfer) নয় কারণ ইজরায়েলি নাগরিকরা সেখানে তাদের ইচ্ছানুযায়ী বাস করে।
দ decadesold
ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত নতুন নয়। এটি কয়েক দশক ধরে চলা একটি বিবাদ যেখানে ভূমি, ধর্মীয় তাৎপর্য এবং রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিষয়। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে হয়। এতে প্রস্তাব করা হয়েছে যে পূর্ব জেরুজালেম, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজা উপত্যকায় (Gaza Strip) একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হবে, যা ইজরায়েলের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে। কিন্তু E1 প্রকল্প এবং নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্য এই সম্ভাবনাকে প্রায় শেষ করে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।