ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে শুল্ক বিবাদ শীঘ্রই শেষ হতে পারে। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত সার্জিও গর ইঙ্গিত দিয়েছেন যে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। উভয় দেশের মধ্যে ২০২৪ সালে ১২৯.২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে, যেখানে ভারতের রপ্তানি বেশি। ওষুধ, রত্ন ও গয়না এবং বস্ত্র প্রধান রপ্তানি পণ্য।
Tariff Dispute: ভারত ও আমেরিকার মধ্যে শুল্ক নিয়ে চলমান বিবাদ এখন সমাধানের দিকে এগোচ্ছে। ভারতে নিযুক্ত আমেরিকার ভাবী রাষ্ট্রদূত সার্জিও গর বলেছেন যে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। বর্তমানে আমেরিকা ভারতের উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে, কিন্তু আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে। গর স্পষ্ট করেছেন যে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গভীর এবং বাণিজ্যিক মতপার্থক্য শীঘ্রই মিটে যাবে। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে ১২৯.২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছিল, যেখানে ভারত আমেরিকায় জেনেরিক ওষুধ, রত্ন ও গয়না, বস্ত্র এবং পেট্রোকেমিক্যালস-এর মতো পণ্য বিপুল পরিমাণে বিক্রি করেছে।
আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন
সার্জিও গর তাঁর নিয়োগ নিশ্চিতকরণের জন্য অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেছেন যে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বন্ধুত্ব অত্যন্ত দৃঢ়। তিনি বলেছেন যে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে অবিরাম আলোচনা চলছে এবং উভয় দেশ চুক্তির খুব কাছাকাছি। গর স্পষ্টভাবে বলেছেন যে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি বড় সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
রাশিয়ার তেল নিয়েও আলোচনা
সার্জিও গর রাশিয়ার তেল ক্রয় নিয়েও মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন যে ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকার হল ভারত রাশিয়ার তেলের উপর তাদের নির্ভরতা কমানো। তবে তিনি এও স্বীকার করেছেন যে এই ইস্যুতে বিতর্ক বেশিদিন চলবে না। গর বলেছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের নীতির সমালোচনা করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভালো বন্ধু। তিনি এও যোগ করেছেন যে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক চীনের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য।
কোথায় আটকে আছে চুক্তি
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে শুল্ক চুক্তি নিয়ে আলোচনা অনেক দিন ধরে চলছে। বিষয়টি শুরু হয়েছিল যখন আমেরিকা "পারস্পরিক শুল্ক" (Reciprocal Tariff) ঘোষণা করে। এরপর থেকেই আমেরিকা ভারতের উপর ৫০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। আমেরিকা চায় যে ভারত দুগ্ধজাত পণ্য এবং কৃষি খাতে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য বাজার খুলে দিক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। এই મુદ્দার উপর আলোচনা আটকে আছে।
ভারত আমেরিকাকে কী কী সরবরাহ করে।
- ভারত আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে ওষুধ, রত্ন-পাথর, পেট্রোকেমিক্যালস, কাপড় এবং অটো সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত পণ্য পাঠায়।
- ভারত প্রতি বছর প্রায় ৬৮,৫২০ কোটি টাকার ওষুধ আমেরিকায় সরবরাহ করে। আমেরিকান বাজারে বিক্রি হওয়া জেনেরিক ওষুধের ৪৭% অংশ ভারত থেকে আসে।
- রত্ন ও গয়নার ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের অন্যতম প্রধান দেশ। প্রতি বছর প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রত্ন ও গয়না বিদেশে পাঠানো হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩০% অর্থাৎ ৯.৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি শুধু আমেরিকায় হয়।
- ভারত ২০২৪ সালে আমেরিকায় প্রায় ৯.৬ বিলিয়ন ডলারের কাপড় ও বস্ত্র বিক্রি করেছে। এটি ভারতের মোট বস্ত্র রপ্তানির ২৮% অংশ।
- এছাড়াও পেট্রোকেমিক্যালস, টেক্সটাইলস এবং অটো সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত পণ্যও ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে আমেরিকায় যায়।
ভারত-আমেরিকার শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘকাল ধরে শক্তিশালী। দুই দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগও এই সম্পর্ককে আরও মজবুত করে। আমেরিকান সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে মোট বাণিজ্য ১২৯.২ বিলিয়ন ডলারের ছিল। এই সময়কালে আমেরিকা ভারতকে ৪১.৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করেছিল, যেখানে ভারত আমেরিকাকে ৮৭.৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করেছিল।