দৃষ্টিহীন আয়রনম্যান নিকেত শ্রীনিবাস দলালের অকাল প্রয়াণ: শোকস্তব্ধ ক্রীড়া জগৎ

দৃষ্টিহীন আয়রনম্যান নিকেত শ্রীনিবাস দলালের অকাল প্রয়াণ: শোকস্তব্ধ ক্রীড়া জগৎ

ভারতের প্রথম দৃষ্টিহীন আয়রনম্যান এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা, নিকেত শ্রীনিবাস দলালের অকাল প্রয়াণে সারা দেশে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

স্পোর্টস নিউজ: ভারতের প্রথম দৃষ্টিহীন ট্রায়াথলেট এবং লক্ষ লক্ষ যুবকের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ নিকেত শ্রীনিবাস দলালের মঙ্গলবার সকালে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঔরঙ্গাবাদ (ছত্রপতি সম্ভাজীনগর)-এর একটি হোটেলে ১লা জুলাই সকালে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তাঁর এভাবে আকস্মিক প্রস্থান সমগ্র দেশের ক্রীড়া জগৎ এবং সমাজের জন্য এক বিরাট ধাক্কা।

আগুন কেড়ে নিল স্বস্তি, হোটেলে মিলল মৃত্যু

ঘটনার সূত্রপাত অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আসলে, ৩০শে জুন রাতে নিকেতের বাড়িতে হঠাৎ আগুন লাগে। আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে তাঁর বন্ধুরা সতর্কতা হিসেবে রাত ২:৩০টায় তাঁকে কাছেই একটি হোটেলে থাকতে পাঠান, যাতে তিনি সুরক্ষিত থাকতে পারেন। কিন্তু কে জানত যে সেই রাতটিই তাঁর জীবনের শেষ রাত হয়ে উঠবে। ১লা জুলাই সকাল প্রায় ৮টায় হোটেল কর্মীরা নিকেতের মৃতদেহ পার্কিংয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। 

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নিকেত হোটেলের দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিলেন, যার ফলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। আপাতত পুলিশ এটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে ধরে তদন্ত করছে, তবে গোটা শহর এবং ক্রীড়া জগতে এই ঘটনা গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে।

দৃষ্টিহীনতা সত্ত্বেও আয়রনম্যান হওয়ার কাহিনী

নিকেত দলাল কেবল একজন খেলোয়াড় ছিলেন না, তিনি ছিলেন সাহস এবং প্রত্যাশার অন্য নাম। ২০১৫ সালে গ্লুকোমার কারণে তিনি তাঁর চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তাঁর জীবন বদলে দেয়, কিন্তু তিনি হার মানেননি। খেলাধুলার প্রতি তাঁর আবেগ অটুট ছিল। তিনি কেবল জাতীয় স্তরের সাঁতার প্রতিযোগিতায় পদক জেতেননি, বরং বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ট্রায়াথলন 'আয়রনম্যান 70.3'-এ অংশ নিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছেন।

২০২০ সালে তিনি ১.৯ কিলোমিটার সাঁতার, ৯০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং ২১.১ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করে আয়রনম্যানের খেতাব জেতেন। তিনি ভারতের প্রথম এবং বিশ্বের পঞ্চম দৃষ্টিহীন অ্যাথলিট ছিলেন যিনি এই অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করেন।

পরিবারে শোকের ছায়া

নিকেত দলাল তাঁর মা লতা দলালকে রেখে গেছেন, যিনি নিজেও ঔরঙ্গাবাদের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র ছিলেন। ছেলের অকাল মৃত্যুতে মা গভীর শোকাহত। সেই সঙ্গে শহরজুড়ে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় মানুষ, ক্রীড়া প্রেমী এবং নিকেতের হাজার হাজার অনুরাগী সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে স্মরণ করছেন এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা

নিকেত দলাল প্রমাণ করেছিলেন যে শারীরিক অক্ষমতা মানুষের উড়ানকে আটকাতে পারে না। তিনি তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও সাহস দিয়ে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন, বিশেষ করে সেই সমস্ত মানুষদের, যারা কোনো কারণে নিজেদের দুর্বল মনে করেন। একটি সাক্ষাৎকারে নিকেত বলেছিলেন, চোখ দিয়ে দেখা জরুরি নয়, স্বপ্নকে অনুভব করা জরুরি। এই মনোভাবই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করত।

Leave a comment