ওড়িশায় অনুষ্ঠিত হতে চলা সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষার আগে একটি বড়সড় কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে এসেছে। এই ষড়যন্ত্রে এজেন্টরা প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে প্রশ্নপত্র আগেই ফাঁস করে দেওয়া হবে, যাতে তারা কোনো পরিশ্রম ছাড়াই পরীক্ষায় পাস করতে পারে। এর জন্য প্রতিটি প্রার্থীর কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হচ্ছিল।
Odisha: ওড়িশায় অনুষ্ঠিত হতে চলা সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষার আগে একটি বড় কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে এসেছে। পুলিশ এই ঘটনায় মোট ১১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যার মধ্যে ১১৪ জন প্রার্থী এবং ৩ জন এজেন্ট রয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই প্রার্থীদের পরিশ্রম ছাড়াই পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য এজেন্টরা গোপন প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রতিটি প্রার্থীর কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা আদায়ের বিষয়টি সামনে এসেছে, যার মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা অগ্রিম এবং বাকি ১৫ লক্ষ টাকা চাকরি পাওয়ার পর নেওয়ার কথা ছিল।
কীভাবে কেলেঙ্কারি ফাঁস হলো
বেরহামপুর পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পায় যে ওড়িশা পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড অর্থাৎ OPRB দ্বারা আয়োজিত সাব-ইন্সপেক্টর পরীক্ষায় বড় ধরনের কারচুপি করা হচ্ছে। এর পর পুলিশ অন্ধ্রপ্রদেশ সীমানার কাছে তিনটি এসি স্লিপার বাস থামিয়ে তল্লাশি চালায়। বাসগুলোতে ১১৭ জন আরোহী ছিল, যার মধ্যে ১১৪ জন প্রার্থী এবং ৩ জন এজেন্ট।
তদন্তে জানা গেছে যে এই প্রার্থীরা ভুবনেশ্বরের বারমুণ্ডা থেকে বাসে চড়ে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়নগরম যাচ্ছিল। সেখানে তাদের পরীক্ষার গোপন প্রশ্নপত্র পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এজেন্টরা বলেছিল যে প্রশ্নপত্র আগেই ফাঁস করে দেওয়া হবে যাতে প্রার্থীরা সহজে পরীক্ষায় পাস করতে পারে।
এজেন্টদের ষড়যন্ত্রমূলক নেটওয়ার্ক
পুলিশ জানিয়েছে যে গ্রেপ্তার হওয়া এজেন্টরা এই চক্রের সদস্য ছিল এবং তারা বড় এজেন্টদের নির্দেশে কাজ করছিল। এটি একটি সংগঠিত চক্র, যা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে আছে। তদন্তে আরও জানা গেছে যে আরও অনেক এজেন্ট এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত। পুলিশ তাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং শীঘ্রই তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
গ্রেপ্তার ও আইনি পদক্ষেপ
এই ঘটনায় বেরহামপুর পুলিশ জেলার গোলান্থরা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারার পাশাপাশি ওড়িশা পাবলিক এক্সামিনেশন (অন্যায় পদ্ধতি প্রতিরোধ) আইন ২০২৪-এর ধারা ১১(১) এবং ১২(১) এর অধীনেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সমস্ত ১১৭ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করে আদালতে পেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে। এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে এবং তাদের শাস্তি দিতে আরও তদন্ত চলছে।
আইনমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন বলেছেন যে সরকার পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় আগেই পরিবর্তন এনেছিল এবং শাস্তির কঠোরতা বাড়িয়েছিল। এতদসত্ত্বেও কিছু দুষ্টু চক্র বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত। মন্ত্রী বলেছেন যে এই কেলেঙ্কারিতে যে বা যারা জড়িত থাকবে, সে কোনো সংস্থা, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা সরকারি কর্মচারী যেই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরীক্ষা স্থগিত, হেল্পলাইন চালু
এর আগে ওড়িশা পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডও পরীক্ষায় অনিয়মের তথ্য জানিয়েছিল। এরপর ৫-৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে চলা CPSE-২০২৪ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বোর্ড সাধারণ মানুষ এবং পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য ৯০৪০৪৯৩২২৩ হেল্পলাইন নম্বরও জারি করেছে, যেখানে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের তথ্য জানানো যাবে।