আজ, অর্থাৎ ২৫শে জুলাই, শেয়ার বাজার বড়সড় পতন দিয়ে দিনের कारोबार শেষ করেছে। শুরু থেকেই বাজারে বিক্রির চাপ ছিল এবং দিনের শেষে সেই চাপ আরও বাড়ে। বিশেষ করে ফিনান্সিয়াল কোম্পানি এবং অটো সেক্টরের শেয়ারগুলিতে ব্যাপক দুর্বলতা দেখা যায়, যার ফলে বাজার একেবারে ভেঙে বন্ধ হয়।
আজ বিএসই সেনসেক্স ৭২১ পয়েন্ট পড়ে ৮১,৪৬৩.০৯-এ বন্ধ হয়েছে। অন্যদিকে, নিফটি ২২৫ পয়েন্টের পতনের সাথে ২৪,৮৩৭-এর স্তরে বন্ধ হয়েছে। উভয় প্রধান সূচকে প্রায় ০.৯০% পতন দেখা গেছে।
লেনদেনের শুরু থেকেই বিক্রির দাপট
আজ বাজার দুর্বলতা নিয়ে শুরু হয়েছিল। খোলার মুখেই সেনসেক্স প্রায় ৩০০ পয়েন্ট নীচে খোলে এবং নিফটিও ২৪,৯৫০-এর নীচে নেমে যায়। প্রথম কয়েক ঘণ্টাতেই ব্যাঙ্কিং এবং অটো শেয়ারগুলির ওপর ভারী চাপ দেখা যায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়তে থাকে এবং মধ্যাহ্ন বিরতির পর বাজার আরও বেশি ভেঙে পড়ে।
কেন পড়ল বাজার? জানুন বড় কারণগুলি
- ফিনান্সিয়াল শেয়ারে পতন: আজ আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, বাজাজ ফিনান্স এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মতো প্রধান ফিনান্সিয়াল শেয়ারগুলিতে বড় পতন নজরে আসে। ব্রোকারেজ হাউসের রিপোর্টে ব্যাঙ্কিং সেক্টরের মার্জিন চাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ারগুলিতে মুনাফা তোলার জন্য বিক্রি শুরু করে।
- অটো কোম্পানিগুলির ওপর চাপ: অটো সেক্টরের প্রধান শেয়ার যেমন টাটা মোটরস, মারুতি সুজুকি, হিরো মটোকর্প, বাজাজ অটো ইত্যাদিতে পতন দেখা গেছে। জুলাই মাসের সেলস ডেটা নিয়ে অনুমান দুর্বল ছিল, পাশাপাশি ইভি নীতি নিয়ে সরকারের অস্পষ্টতাও এই পতনের একটা কারণ।
- গ্লোবাল মার্কেটের দুর্বল ইঙ্গিত: এশিয়ার এবং ইউরোপীয় বাজারেও আজ দুর্বলতা ছিল। ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী মিটিংয়ের আগে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারেও একটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা যায়। এর সরাসরি প্রভাব ভারতীয় শেয়ার বাজারে পড়েছে।
- ডলারের জোরালো ভাব এবং এফআইআই-এর বিক্রি: ডলারের বিপরীতে টাকার দাম দুর্বল হয়েছে, যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনুভূতি প্রভাবিত হয়েছে। এছাড়াও এফআইআই-এর তরফ থেকে ক্রমাগত বিক্রি দেখা যাচ্ছে, যার ফলে বাজার সাপোর্ট পাচ্ছে না।
সেনসেক্সের প্রধান পতনের সম্মুখীন হওয়া শেয়ারগুলি
আজ সেনসেক্সের ৩০টি শেয়ারের মধ্যে ২১টি লাল চিহ্ন নিয়ে বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান পতনের সম্মুখীন হওয়া শেয়ারগুলি হল:
- বাজাজ ফিনান্স: ৩.৯% পতন
- টাটা মোটরস: ৩.৫% পতন
- আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক: ২.২% পতন
- মারুতি সুজুকি: ২.০% পতন
- এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক: ১.৮% পতন
- কোটাক ব্যাঙ্ক: ১.৫% পতন
নিফটির সেরা লাভ করা শেয়ারগুলি
যদিও বাজার পতনের মধ্যে ছিল, কিছু শেয়ার ছিল যারা দৃঢ়তা দেখিয়েছে:
- আদানি এন্টারপ্রাইজ: ২.৪% বৃদ্ধি
- পাওয়ার গ্রিড: ১.৭% বৃদ্ধি
- এনটিপিসি: ১.২% বৃদ্ধি
- টাইটান: ১.০% বৃদ্ধি
- হিন্দুস্তান ইউনিলিভার: ০.৮% বৃদ্ধি
মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপের ওপরও দেখা গেল প্রভাব
মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপ শেয়ারগুলিতেও আজ দুর্বলতা দেখা গেছে। বিএসই মিডক্যাপ ইন্ডেক্স প্রায় ০.৬৫% পড়েছে, যেখানে স্মলক্যাপ ইন্ডেক্সে ০.৪৫% পতন নজরে এসেছে। ছোট বিনিয়োগকারীদের তরফেও সতর্কতা দেখা গেছে।
সেক্টোরাল ইন্ডেক্সের অবস্থা
- নিফটি ব্যাঙ্ক: ১.১% পড়েছে
- নিফটি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস: ১.২% পড়েছে
- নিফটি অটো: ০.৯% পড়েছে
- নিফটি মেটাল: ০.৬% পড়েছে
- নিফটি এফএমসিজি: সামান্য বৃদ্ধি
- নিফটি এনার্জি: দৃঢ়তার সাথে বন্ধ হয়েছে
এফআইআই এবং ডিআইআই কার্যকলাপ
আজকের ট্রেডিংয়ে ফরেইন ইনভেস্টরদের (FII) তরফে বিক্রি দেখা গেছে। অনুমান করা যায় যে এফআইআই আজকের সেশনে প্রায় ₹১,৫০০ কোটি টাকার নেট বিক্রি করেছে। অন্যদিকে ডোমেস্টিক ইনভেস্টররা (DII) ₹৯০০ কোটির কেনাকাটা করেছে, যা বাজারকে আংশিকভাবে সাপোর্ট করেছে।
টাকা এবং ক্রুড অয়েলের প্রভাব
আজ টাকার দামে আমেরিকান ডলারের বিপরীতে ১২ পয়সা দুর্বল হয়েছে। এর ফলে ইমপোর্ট করা কোম্পানিগুলোর ওপর প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে অটো এবং এফএমসিজি কোম্পানিগুলোর মার্জিনের ওপর। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুড অয়েলের দাম ৮৪ ডলার প্রতি ব্যারেলের কাছাকাছি ছিল, যে কারণে বাজারে অল্প অস্থিরতা দেখা যায়।
সপ্তাহের মাঝে পতনে বাড়ল চিন্তা
সপ্তাহের মাঝে এই পতন বিনিয়োগকারীদের কিছুটা সতর্ক করে দিয়েছে। বুধবার আসা এই বড় পতনের পর এখন দেখার বিষয় এটাই যে বৃহস্পতিবার বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা।