পাকিস্তানের নতুন দাবি চুপ আমেরিকা

পাকিস্তানের নতুন দাবি চুপ আমেরিকা

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে ফের চরম জল্পনা। রবিবার ইসলামাবাদে এক সাংবাদিক বৈঠকে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার সাফ জানিয়ে দিলেন— “আমেরিকাকে আমরা কোনও দিনই মধ্যস্থতার দায়িত্ব দিইনি।” তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি সম্পর্কিত আলোচনায় পাকিস্তান অন্য কোনও দেশের সঙ্গে বসেনি, এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হয়েছে। এই মন্তব্য সামনে আসতেই কূটনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

ট্রাম্পের পুরনো দাবির মুখে প্রশ্নবাণ

মার্কিন রাজনীতির বিতর্কিত মুখ ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বারবার দাবি করেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করতে মূল ভূমিকা ছিল তাঁর। এমনকি একাধিক জনসভা ও সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, নেপথ্যে আমেরিকার কূটনৈতিক চাপ কাজ করেছে। তবে নয়াদিল্লি শুরু থেকেই সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বক্তব্য কার্যত ট্রাম্পের কথার বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাই এখন আলোচনায়, ট্রাম্প কি রাজনৈতিক সুবিধার জন্য মিথ্যা দাবি করেছিলেন?

দিল্লির অবস্থান আরও দৃঢ়

ভারত বরাবরই জানিয়ে এসেছে, সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তা দুই দেশের সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার ফল। কোনও তৃতীয় দেশের হস্তক্ষেপ সেখানে ছিল না। নয়াদিল্লির মতে, ভারত-পাক সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক বিষয়, বাইরের হস্তক্ষেপ এখানে কাম্য নয়। ইশাক দারের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসায় সেই অবস্থান আরও জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হল। কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, পাকিস্তানের এই স্বীকারোক্তি দিল্লির কূটনৈতিক জয় বলেই গণ্য করা যেতে পারে।

ওয়াশিংটনের নীরব কৌশল

অন্যদিকে, ইসলামাবাদের মন্তব্যে সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেয়নি আমেরিকা। ট্রাম্পের দাবি এবং পাকিস্তানের বক্তব্যের মধ্যে সরাসরি বিরোধ থাকা সত্ত্বেও ওয়াশিংটন আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের অতীত মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। তারা বরং দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের কূটনৈতিক অবস্থান নিরপেক্ষ রাখতেই বেশি মনোযোগী। তবে আমেরিকার এই নীরবতা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকেত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, পাকিস্তানের এই নতুন অবস্থান আসলে তাদের অভ্যন্তরীণ সংকট সামাল দেওয়ার কৌশল। সীমান্তে বারবার সংঘর্ষ, কাশ্মীর ইস্যু এবং অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত পাকিস্তান চাইছে বিশ্ববাসীকে বার্তা দিতে— ইসলামাবাদ এখনও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। ইশাক দারের মন্তব্য তাই শুধু ভারত নয়, পশ্চিমা বিশ্বের দিকেও এক ধরনের ইঙ্গিত যে, পাকিস্তান তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভর করছে না।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে জল্পনা

জাতিসংঘ বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও এই বিতর্ক নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও আসেনি। তবে কূটনৈতিক মহল মনে করছে, পাকিস্তানের মন্তব্য একদিকে ভারতের পক্ষে সুবিধাজনক হলেও, অন্যদিকে ইসলামাবাদের ভিতরে রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে। কারণ, এতদিন পাকিস্তান বারবার আমেরিকার নাম টেনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কূটনৈতিক সাফল্যের দাবি করেছিল। এখন সেই অবস্থান বদলে ফেলা সাধারণ মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটাই প্রশ্ন।

ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে

২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক চলেছে। ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি নিয়ে তাঁর দাবি পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর কথার পর একেবারেই কোণঠাসা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ট্রাম্পের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, বিদেশনীতি সম্পর্কিত মিথ্যা দাবি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নয়, আমেরিকার রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

নীরব আমেরিকা, সক্রিয় জল্পনা

সব মিলিয়ে পাকিস্তানের নতুন দাবি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ঝড় তুলেছে। ভারত নিজেদের অবস্থানে আরও দৃঢ়, পাকিস্তান নতুন করে অবস্থান বদল করেছে, আর আমেরিকা চুপ। এই ত্রিভুজ অবস্থার মধ্যে ভবিষ্যতে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বিতর্ক তৈরি হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একদিকে দিল্লি স্বস্তি পাচ্ছে, অন্যদিকে ইসলামাবাদ কূটনৈতিক চাপে। তবে আসল প্রশ্ন রয়ে গেল— ওয়াশিংটন কি শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের দাবিকে ভুল প্রমাণ করবে, নাকি এই নীরবতাই বজায় রাখবে?

Leave a comment