পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাক্ষাৎ শুধুমাত্র লোকদেখানো এবং স্বার্থের উপর ভিত্তি করে। পাকিস্তান ডলার এবং সমর্থনের বাধ্যবাধকতার কারণে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে, যখন আসল সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনী এবং কৌশলগত সংস্থাগুলো নেয়।
World Update: পাকিস্তান এবং আমেরিকার সম্পর্ক বোঝার জন্য যদি একটি শব্দ বেছে নিতে হয়, তবে সেটি হলো স্বার্থ। উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক কোনো বন্ধুত্ব বা বিশ্বাসের উপর নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধার উপর নির্ভরশীল। ডলারের প্রয়োজন হলেই পাকিস্তান আমেরিকার সামনে ঝুঁকে পড়ে এবং আমেরিকার জন্য পাকিস্তান একটি অস্থায়ী কৌশলগত সহযোগী হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সাক্ষাতের খবর এসেছে। এই সাক্ষাৎটি আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ ২০১৯ সালের জুলাই মাসের পর এই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী হোয়াইট হাউসে মুখোমুখি কথা বলবেন।
সাক্ষাতের পিছনে পাকিস্তানের বাধ্যবাধকতা
এই সাক্ষাতের উদ্যোগ আমেরিকার পক্ষ থেকে নয়, বরং পাকিস্তানের বাধ্যবাধকতার কারণে। পাকিস্তান আইএমএফ-এর কিস্তি, ডলারের অভাব এবং আন্তর্জাতিক চাপের সাথে লড়াই করছে। এমন সময়ে পাকিস্তানের কোনো বড় দেশের সমর্থনের প্রয়োজন হয়।
বন্ধুত্ব নাকি স্বার্থের রাজনীতি
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি প্রায়শই লোকদেখানো এবং স্বার্থের উপর ভিত্তি করে চলে। শাহবাজ শরিফ ট্রাম্পের সাথে দেখা করে এই বার্তা দিতে চান যে পাকিস্তান আমেরিকার পুরনো এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। কিন্তু বাস্তবতা হলো, উভয় দেশের সম্পর্ক সত্যিকারের বন্ধুত্বের উপর নয়, বরং নিজেদের সুবিধার উপর নির্ভরশীল।
আমেরিকা সময় সময় পাকিস্তানের সমালোচনা করে এসেছে। প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন পাকিস্তানকে এই বলে আখ্যা দিয়েছিলেন যে যারা তাদের বাড়ির উঠানে সাপ পোষে, সেই সাপ একদিন কামড়াতে পারে। আমেরিকা পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের আস্তানা হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং পাকিস্তান আমেরিকার বিরুদ্ধে ইসলামোফোবিয়ার অভিযোগ এনেছে। কিন্তু যখন ডলার, অস্ত্র বা রাজনৈতিক চাপের প্রয়োজন হয়, তখন উভয় দেশ আবারও একে অপরের সাথে হাত মেলায়।
সেনাবাহিনীর আসল প্রভাব
পাকিস্তানে আসল সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীর হয়। এর আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনিরও ট্রাম্পের সাথে দেখা করেছেন। এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে যে যদি পররাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীই নেয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎ কার জন্য? এর উত্তর এটাই যে, এই সাক্ষাৎ পাকিস্তানের জনগণকে দেখানোর জন্য।
আমেরিকার চোখে পাকিস্তান
আমেরিকার চোখে পাকিস্তান কেবল একটি কৌশলগত উপকরণ। আফগানিস্তান, ভারত বা চীনের সাথে জড়িত বিষয়গুলিতে আমেরিকার পাকিস্তানের প্রয়োজন হয়। ট্রাম্প হোক বা বাইডেন, পাকিস্তান তাদের জন্য স্থায়ী বন্ধু নয়, বরং একটি অস্থায়ী সহায়ক।
ডলারের জন্য পাকিস্তানের এই প্রদর্শনী এবং জনগণকে খুশি করা আমেরিকার কৌশলের অংশ নয়। পাকিস্তানের জন্য আমেরিকা একটি এটিএম মেশিন, যেখানে আমেরিকার জন্য পাকিস্তান কেবল একটি ভাড়ার বাড়ি।