উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি আমেরিকার প্রতি নরম মনোভাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন, তবে দেশের নাগরিকদের উপর দমন-পীড়ন এবং নিষ্ঠুর শাসনের ভয় এখনও বিদ্যমান।
ওয়ার্ল্ড আপডেট: উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর সঙ্গে দেখা করেছেন, যেখানে তাঁকে হাসিখুশি দেখা গেছে। এটি একটি বিরল সুযোগ ছিল যখন কিমের এ ধরনের ছবি প্রকাশ্যে আসে। কিম জং উন আমেরিকার প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছেন এবং আলোচনার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। যদিও, তাঁর শাসনের বাস্তবতা খুবই ভিন্ন এবং ভীতিকর।
চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা
কিম জং উন সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছেন। তিনি বোঝেন যে উত্তর কোরিয়ার জন্য চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার। সম্প্রতি তিনি আমেরিকার প্রতিও নরম মনোভাব দেখিয়েছেন এবং বলেছেন যে যদি তাঁদের উপর পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগের চাপ না দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা আলোচনা থেকে বিরত থাকবেন না।
চীনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার উদ্দেশ্য শুধু রাজনৈতিক সমর্থন পাওয়াই নয়, বরং আন্তর্জাতিক চাপ থেকে নিজের দেশকে রক্ষা করা এবং আমেরিকার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখাও। কিমের এই কৌশল উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা এবং তাঁর ক্ষমতার সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গৃহীত নিষ্ঠুর পদক্ষেপ
কিম জং উনের বিশ্বে একজন নিষ্ঠুর এবং স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে পরিচিতি আছে। তাঁর শাসনে নাগরিকদের স্বাধীনতা সীমিত এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তিনি পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনদের হত্যা করার মতো পদক্ষেপও নিয়েছেন। তাঁর চাচা জ্যাং সং থায়েক এবং এক সৎ ভাইয়ের হত্যার অভিযোগও রয়েছে।
ক্ষমতার জন্য কিম কোনো ধরনের দমন-পীড়ন ছাড়েননি। নাগরিকদের কণ্ঠরোধ করা, মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যান্য কঠোর শাস্তি প্রদানের কারণে মানুষ তাঁর ক্ষমতাকে ভয় পায়। তাঁর নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত এবং অমানবিক নীতিগুলি উত্তর কোরিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত ও ভীতিকর রাজ্যে পরিণত করেছে।
প্রতিরক্ষা প্রধানের হত্যার ভয়াবহ পদ্ধতি
কিম জং উন ২০১৫ সালে তাঁর নিষ্ঠুরতার একটি উদাহরণ দেখিয়েছিলেন যখন তিনি তাঁর প্রতিরক্ষা প্রধান হিয়ং ইয়ং-চোলকে একটি মিটিংয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে হত্যা করেছিলেন। হিয়ংকে অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট গান দিয়ে সকল কর্মকর্তার সামনে মেরে ফেলা হয়েছিল। এই ঘটনা দেশে কিমের প্রতি আতঙ্ক তৈরি করেছিল এবং এটি স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তিনি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যেকোনো স্তরে শৃঙ্খলা ও ভয়ের ব্যবহার করেন।
অদ্ভুত নিয়ম ও উদ্ভট অভ্যাস
কিমের শাসনে অদ্ভুত নিয়মগুলি সাধারণ বিষয়। তিনি সারা দেশে তাঁর নিজের মতো করে চুল কাটা বাধ্যতামূলক করেছেন। মহিলাদের তাঁর স্ত্রী রি সোল-জু-এর মতো বব হেয়ারকাট রাখতে হয়। বলা হয় যে কিম নিজে চুল কাটতে ভয় পান এবং এর জন্য নাপিতকেও ভয় পান।
তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অত্যন্ত কঠোর। বিদেশ ভ্রমণের সময় তিনি নিজের সঙ্গে ব্যক্তিগত শৌচাগার নিয়ে যান। এটি তাঁর উদ্ভট অভ্যাস এবং নিরাপত্তার উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বিদেশী সংস্কৃতির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা
কিমের শাসনে নাগরিকদের জীবন প্রায় বন্দীর মতো হয়ে গেছে। ইন্টারনেট এবং আধুনিক পরিষেবাগুলির ব্যবহার শুধুমাত্র সেনাবাহিনী এবং বিশেষ কর্মকর্তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিদেশীদের চলচ্চিত্র দেখা বা দক্ষিণ কোরীয় সঙ্গীত শোনার জন্য শাস্তি পর্যন্ত দেওয়া হয়।