অমিতাভের নায়িকা পরভিন ববি: খ্যাতির শীর্ষ থেকে রহস্যমৃত্যুর অন্ধকার অধ্যায়

অমিতাভের নায়িকা পরভিন ববি: খ্যাতির শীর্ষ থেকে রহস্যমৃত্যুর অন্ধকার অধ্যায়

গ্ল্যামার, বিতর্ক আর প্রেম—বলিউড অভিনেত্রী পরভিন ববির জীবনের তিনটি প্রধান অধ্যায়। একসময় অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর জুটিই ছিল দর্শকদের কাছে বক্স অফিসের গ্যারান্টি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একের পর এক ভাঙনের শিকার হন। মহেশ ভাটের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙন, কবীর বেদীর সঙ্গে ব্যর্থ প্রেম, মানসিক ভেঙে পড়া ও আর্থিক সংকট—সব মিলিয়ে জীবনের শেষভাগে নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরে তাঁকে। অবশেষে ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর প্রাণহীন দেহ। মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে এক যুগেরও বেশি, তবুও রহস্য থেকে গেছে আগের মতোই।

খ্যাতির সোনালি অধ্যায়

সত্তর ও আশির দশকে বলিউডে যেসব নায়িকা গ্ল্যামার এবং অভিনয়ে ছাপ ফেলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে পরভিন ববি ছিলেন অন্যতম। ‘দিওয়ার’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘শান’, ‘নমক হালাল’, ‘সুহাগ’—প্রতিটি ছবিতেই তিনি ছিলেন দর্শকের প্রিয়। বিশেষত অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর রসায়ন দর্শককে মুগ্ধ করেছিল। প্রায় ১৫টিরও বেশি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন এই জুটি, যা বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সফল জুটি হিসেবে আজও উল্লেখ করা হয়।

প্রেম ও সম্পর্কের জটিলতা

খ্যাতির পাশাপাশি প্রেমের কাহিনিও পরভিনের জীবনে ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মহেশ ভাটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তুমুল আলোচিত। শোনা যায়, মহেশ ভাট একসময় স্ত্রীকে ছেড়ে পরভিনের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছিলেন। তবে পরভিনের মানসিক অস্থিরতা ও ক্রমাগত ভাঙন এই সম্পর্ককে শেষ করে দেয়। কবীর বেদীর সঙ্গেও একসময় গভীর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হলেও বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি সেই সম্পর্ক। বারবার সম্পর্ক ভাঙন তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল।

মানসিক ভাঙন ও বিতর্ক

১৯৮৯ সালে শোনা যায়, পরভিন প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় ভুগছিলেন। যদিও তিনি কখনও এই অসুস্থতা স্বীকার করেননি। বরং দাবি করেছিলেন, ইন্ডাস্ট্রি তাঁর ইমেজ নষ্ট করতে চাইছে। IMDb-এর এক রিপোর্ট জানায়, ‘দোস্তানা’ ছবির শুটিং চলাকালীন তিনি চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুতে ভর্তি ছিলেন। অনেকেই বলেন, মানসিক ভাঙন তাঁর ক্যারিয়ারকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়।

সাহসী নায়িকা, গ্ল্যামারের প্রতীক

পরভিন ছিলেন সময়ের থেকে অনেকটা এগিয়ে। সাহসী পোশাক, ফ্যাশন সেন্স এবং পর্দায় আধুনিক ভাবনা তুলে ধরতে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়া। সেই সময়ের অন্যান্য নায়িকাদের তুলনায় অনেক বেশি সাহসী চরিত্রে তাঁকে দেখা যেত। ভারতীয় সিনেমায় তিনি ছিলেন ওয়েস্টার্ন কালচারের প্রতীক, যিনি নারী চরিত্রকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন।

একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতার দিনগুলি

ক্যারিয়ারের শেষভাগে এসে তাঁর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। খ্যাতি, অর্থ আর সম্পর্ক—সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যায়। প্রতিবেশিরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে তিনদিন ধরে তিনি দুধ বা খবরের কাগজ পর্যন্ত সংগ্রহ করেননি। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতেও তিনি হিমশিম খাচ্ছিলেন। গ্ল্যামারের আড়ালে এই নিঃসঙ্গতা তাঁর জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক অধ্যায় হয়ে ওঠে।

মৃত্যু ঘিরে রহস্য

২০০৫ সালের জানুয়ারির একদিন মুম্বইয়ের ফ্ল্যাট থেকে পরভিনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃত্যুর দু’দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। কারও মতে, পায়ে গ্যাংগ্রিনের কারণে মৃত্যু হয়, আবার কেউ বলেন মানসিক ভেঙে পড়া তাঁকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু আসল সত্য আজও অজানা। তাঁর মৃত্যু বলিউডের অন্যতম বড় রহস্য হিসেবে রয়ে গেছে।

বলিউডের গ্ল্যামার দুনিয়ায় আশির দশকে পরভিন ববি ছিলেন এক উজ্জ্বল নাম। অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে একাধিক সুপারহিট সিনেমা দিয়ে তিনি দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু এই সাফল্যের আড়ালে ছিল একাকীত্ব, প্রেমের ভাঙন, মানসিক অসুস্থতা এবং অবশেষে রহস্যমৃত্যু। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে মুম্বইয়ের ফ্ল্যাট থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়, যা আজও রহস্যে ঢাকা রয়ে গেছে।

Leave a comment