পলিসি বাজারের উপর ৫ কোটি টাকা জরিমানা আইআরডিএআই-এর

পলিসি বাজারের উপর ৫ কোটি টাকা জরিমানা আইআরডিএআই-এর

বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা IRDAI দেশের বৃহত্তম বিমা ওয়েব এগ্রিগেটর কোম্পানি Policybazaar-এর উপর বড় জরিমানা আরোপ করেছে। সংস্থাটি বিমা আইন ১৯৩৮ এবং ইন্স্যুরেন্স ওয়েব এগ্রিগেটর নিয়ম, ২০১৭-এর অধীনে ১১টি গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য কোম্পানিটিকে মোট ৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে।

এই জরিমানার মধ্যে ১ কোটি টাকা অতিরিক্ত জরিমানা প্রিমিয়াম পরিশোধে বিলম্বের জন্য। বিমা গ্রাহকদের স্বার্থের প্রতি অবহেলা এবং স্বচ্ছতার অভাবের কারণে IRDAI-এর এই পদক্ষেপকে শিল্প মহলে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

শীর্ষ ULIP র‍্যাঙ্কিং নিয়ে স্বচ্ছতার অভাব

IRDAI-এর তদন্তে দেখা গেছে যে Policybazaar তাদের ওয়েবসাইটে কিছু ইউনিট লিঙ্কড ইন্স্যুরেন্স প্ল্যান (ULIPs)-কে শীর্ষ র‍্যাঙ্কিং দিয়েছে, যেখানে এর পিছনে কোনও প্রমাণযোগ্য বা স্বাধীন ডেটা দেখানো হয়নি।

জুন ২০২০-তে হওয়া তদন্তের সময় ওয়েবসাইটটিতে বাজাজ অ্যালিয়ান্স, এডেলওয়াইজ টোকিও, HDFC, SBI লাইফ এবং ICICI-এর ULIP প্ল্যানগুলিকে শীর্ষ ৫-এ দেখানো হয়েছিল।

IRDAI অনুসারে, Policybazaar-এর কাছে অন্যান্য বিমা কোম্পানিরও পণ্য ছিল, কিন্তু শুধুমাত্র কিছু নির্বাচিত কোম্পানির পণ্যগুলিকে ওয়েবসাইটে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। এতে গ্রাহকদের সীমিত বিকল্প দেখানো হয়েছিল এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা ছিল না।

হেলথ প্ল্যানের রেটিংয়েও পক্ষপাত

ওয়েবসাইটে হেলথ ইন্স্যুরেন্সের সাথে যুক্ত প্ল্যানগুলিকেও "শীর্ষ" এবং "সেরা" এর মতো শব্দ দিয়ে দেখানো হয়েছে। IRDAI-এর তদন্তে পাওয়া গেছে যে Policybazaar-এর ২৩টি হেলথ বিমা কোম্পানির সাথে চুক্তি ছিল, কিন্তু শুধুমাত্র ১২টি কোম্পানির প্ল্যানগুলিকে ওয়েবসাইটে রেটিংয়ের সাথে প্রদর্শন করা হয়েছে।

এই ধরনের উপস্থাপনার কারণে গ্রাহকরা সম্পূর্ণ তথ্য পান না এবং তারা সীমিত বিকল্প থেকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। এটি সরাসরি বিমা গ্রাহকদের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে।

প্রিমিয়াম স্থানান্তরে ব্যাপক বিলম্ব

আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হল Policybazaar পলিসিধারকদের থেকে নেওয়া প্রিমিয়ামের অর্থ বিমা কোম্পানিগুলির কাছে পৌঁছে দিতে দেরি করেছে। বিমা আইনের ধারা 64VB অনুসারে, প্রিমিয়াম পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিমাকারীদের কাছে এই অর্থ স্থানান্তর করতে হয়।

IRDAI-এর রিপোর্টে ৬৭টি পলিসিতে ৩০ দিনের বেশি দেরি, ৮,৯৭১টি পলিসিতে ৫ থেকে ২৪ দিনের দেরি এবং ৭৭,০৩৩টি পলিসিতে ৩ কার্যদিবসের পরে প্রিমিয়াম স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এই অবহেলার কারণে পলিসিধারকদের কভারেজ প্রভাবিত হতে পারত এবং বিমা সুরক্ষায় ঝুঁকিও তৈরি হতে পারত।

টেলিমার্কেটিং নিয়মগুলির প্রতি অবজ্ঞা

টেলিমার্কেটিং সম্পর্কিত প্রক্রিয়াতেও কোম্পানির পক্ষ থেকে গাফিলতি দেখা গেছে। নিয়ম অনুসারে, টেলিফোনে করা প্রতিটি বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত যাচাইকারী অর্থাৎ অথোরাইজড ভেরিফায়ার (AV)-এর নিশ্চিতকরণ জরুরি।

IRDAI জানতে পেরেছে যে কোম্পানিটি ৪ লক্ষেরও বেশি টেলিমার্কেটিংয়ের মাধ্যমে পলিসি বিক্রি করেছে, যার মধ্যে ৯৭,৭৮০টি পলিসি কোনও AV ছাড়াই প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এর থেকে এটা জানা যায়নি যে কোন প্রতিনিধি বিক্রি করেছে এবং গ্রাহককে কী তথ্য দেওয়া হয়েছে।

ডেটা রেকর্ড রাখার ক্ষেত্রেও ত্রুটি

ওয়েব এগ্রিগেটর নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি পলিসির সাথে তার বিক্রয়ের সাথে সম্পর্কিত সম্পূর্ণ রেকর্ড রাখা জরুরি, যাতে প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রককে এই বিষয়ে জানানো যায়।

কিন্তু Policybazaar অনেক ক্ষেত্রে এই ডেটা রেকর্ড করেনি। এতে কেবল গ্রাহক পরিষেবা প্রভাবিত হয়নি, একই সাথে নিয়ন্ত্রকের নজরদারি প্রক্রিয়াতেও বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

অনুমোদন ছাড়া অন্য কোম্পানিতে পরিচালক পদ

তদন্তে আরও জানা গেছে যে কোম্পানির কিছু প্রধান ম্যানেজমেন্ট কর্মী অর্থাৎ KMP IRDAI-এর পূর্ব অনুমতি ছাড়াই অন্যান্য কোম্পানিতে পরিচালক পদ গ্রহণ করেছেন। এটিও একটি সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করা হয়। বিমা ক্ষেত্রে কর্মরত কোনও ওয়েব এগ্রিগেটর কোম্পানির IRDAI-এর অনুমোদন ছাড়াই অন্য কোনও কর্পোরেট বা বিমা কোম্পানির সাথে সরাসরি সম্পর্ক রাখা উচিত নয়।

এই পদক্ষেপের পরে বাজারে Policybazaar-এর মূল সংস্থা PB Fintech-এর শেয়ারের উপরেও প্রভাব পড়তে পারে। বিনিয়োগকারী এবং বিশ্লেষকরা এখন কোম্পানির কার্যক্রম এবং স্বচ্ছতা নিয়ে আরও সতর্ক হয়ে গেছেন।

তবে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিমা ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব এবং গ্রাহক স্বার্থ রক্ষার অগ্রাধিকার স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

Leave a comment