কংগ্রেসের महासचिव প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কড়া প্রশ্ন তুলেছেন। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এক লক্ষেরও বেশি 'ভুয়া ভোট' দেওয়ার অভিযোগ করার পরেই এই বিষয়টির সূত্রপাত হয়।
Priyanka Gandhi: লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী কর্তৃক উত্থাপিত জালিয়াতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের ফ্যাক্ট চেক সেল কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইসিআই ফ্যাক্ট চেক তাঁর অভিযোগকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম 'এক্স'-এ পোস্ট করেছে যে রাহুল গান্ধী যদি তাঁর দাবিতে অনড় থাকেন, তাহলে তাঁকে ভোটার রেজিস্ট্রেশন নিয়ম ১৯৬০-এর নিয়ম ২০(৩)(বি)-এর অধীনে একটি ঘোষণা বা হলফনামায় স্বাক্ষর করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশন আরও স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে এই হলফনামা মহারাষ্ট্রের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে জমা দিতে হবে, যাতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন যে কিছু বিধানসভা কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন যে একটি বিধানসভা আসনে এক লক্ষেরও বেশি ভুয়া ভোট রয়েছে। তাঁর মতে, ভোটার তালিকায় এই ধরনের গরমিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
এই অভিযোগের পরে, নির্বাচন কমিশনের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট একটি বিবৃতি জারি করে রাহুল গান্ধীর দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেছে। একইসঙ্গে, কমিশন জানিয়েছে যে রাহুল গান্ধী যদি তাঁর অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হন, তাহলে তাঁকে ভোটার রেজিস্ট্রেশন নিয়ম ১৯৬০-এর ধারা ২০(৩)(B)-এর অধীনে একটি ঘোষণা বা হলফনামায় স্বাক্ষর করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে জমা দিতে হবে, যাতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর পাল্টা আক্রমণ – ‘তদন্ত কেন হচ্ছে না?’
এ বিষয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন:
‘আবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ দিনের মধ্যে হলফনামা পেশ করা যেতে পারে, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। হলফনামা কেন চাওয়া হচ্ছে? যদি জেনেশুনে কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলে তদন্ত হওয়া উচিত। আপনারা আমাদের ভোটার তালিকা দিচ্ছেন না কেন? তদন্ত করছেন না কেন? তার বদলে বলছেন হলফনামা সই করে দিন। এর থেকে বড় শপথ আর কী আছে যা আমরা সংসদে নিয়ে থাকি?’
প্রিয়াঙ্কা অভিযোগ করেছেন যে কমিশনের সরাসরি এই মামলার তদন্ত করা উচিত, কিন্তু তার বদলে অভিযোগকারীদেরই আনুষ্ঠানিকতায় জড়ানো হচ্ছে।
শিক্ষকের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মের তুলনা একটি স্কুলের পরিস্থিতির সঙ্গে করেছেন। তিনি বলেছেন:
‘যদি আপনি শিক্ষকের কাছে গিয়ে বলেন যে, ম্যাম, এখানে চিটিং হচ্ছে, তাহলে কি শিক্ষক আপনাকে চড় মারবেন নাকি বলবেন যে আমি বিষয়টি দেখছি? শিক্ষক প্রথমে খতিয়ে দেখবেন কী হচ্ছে। কিন্তু এখানে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করার বদলে অভিযোগকারীর কাছ থেকেই হলফনামা চাওয়া হচ্ছে এবং কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’
‘ভুয়া ভোট’-এর রাজনৈতিক তাৎপর্য
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিটি ভোটারের গুরুত্ব রয়েছে। তিনি বলেছেন: একটি বিধানসভায় যদি এক লক্ষেরও বেশি ভুয়া ভোট থাকে, তাহলে ভাবুন ফলাফলের ওপর এর কী প্রভাব পড়বে। যিনি নির্বাচন লড়েন, তিনি বোঝেন এটা কতটা গুরুতর। যদি ভুয়া ভোট আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে, তাহলে তারাই জয় নিশ্চিত করবে।
প্রিয়াঙ্কার এই বিবৃতি বিরোধীদের সেই উদ্বেগকে তুলে ধরে, যেখানে বলা হচ্ছে যে ভোটার তালিকায় কোনো গরমিল থাকলে তার সরাসরি প্রভাব নির্বাচনী ফলাফলে পড়তে পারে।
বিরোধীদের রণনীতি – INDIA জোট সিদ্ধান্ত নেবে
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে ভবিষ্যতে বিরোধীদের রণনীতি কী হবে, তখন তিনি বলেন যে INDIA জোটের নেতারা একসঙ্গে বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে তিনি এই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন যে এটি শুধু কংগ্রেসের বিষয় নয়, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকল দল এবং নাগরিকের জন্য উদ্বেগের বিষয়। প্রিয়াঙ্কা আরও বলেছেন যে এই পুরো বিষয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র নেতাদের প্রতিক্রিয়াও অনেক কিছু বলছে। তাঁর মতে, এই প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে স্পষ্ট যে বিষয়টি কতটা গুরুতর এবং কেন বিরোধীরা এর ওপর জোর দিচ্ছে।