রাজস্থানের বারান জেলায় জমি সংক্রান্ত পুরোনো বিবাদের জেরে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়া মা-ছেলেকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ, এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। পুলিশ খুনের মামলা নথিভুক্ত করে সন্দেহভাজনদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
বারান: বৃহস্পতিবার রাজস্থানের বারান জেলা থেকে এমন একটি ঘটনা সামনে এসেছে যা গোটা এলাকাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়া মা-ছেলেকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, এটি কোনো সাধারণ সড়ক দুর্ঘটনা নয়, বরং পুরোনো জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার পর পরিবার ও গ্রামবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, এদিকে পুলিশ মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।
সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার পথে মা-ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু
জানা গেছে, কোটরি গ্রামের বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী সঞ্জয় মীনা তার মা ৫৫ বছর বয়সী রুক্মিণীবাঈ-এর সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে বারান আদালতে যাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার রুক্মিণীবাঈকে একটি পুরোনো বিবাদের মামলায় সাক্ষ্য দিতে হতো। সকাল প্রায় ১০টায় যখন তারা দু'জন NH-27-এর ভুল ভুলাইয়া মোড়ের কাছে পৌঁছান, তখনই একটি দ্রুতগামী গাড়ি তাদের বাইকে সজোরে ধাক্কা মারে।
ধাক্কা এতটাই জোরালো ছিল যে মা-ছেলে দু'জনেই রাস্তায় পড়ে যান এবং গাড়িটি তাদের একাধিকবার পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর আশপাশের লোকজন চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ দুটি হাসপাতালের মর্গে রাখে এবং পরে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
জমি সংক্রান্ত বিবাদ আরও দুটি প্রাণ কেড়ে নিল
পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোটরি গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের জমি সংক্রান্ত বিবাদ রয়েছে। এক পক্ষ রামকুমার মীনার, আর অন্য পক্ষ পুরুষোত্তম মীনার পরিবারের সঙ্গে জড়িত। এই দুজনের মধ্যে বহু বছর ধরে জমি নিয়ে উত্তেজনা চলছিল।
জানা গেছে, এই বিবাদের জেরে কয়েক বছর আগে মুকুট মীনা নামের এক যুবকও মারা গিয়েছিলেন। সে সময়ও মারামারিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর মুকুট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর থেকে দুই পরিবারের মধ্যে শত্রুতা আরও গভীর হয়। এখন এই বিবাদ মা-ছেলের জীবন কেড়ে নিয়ে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
ডিএসপি ওমেন্দ্র সিং শেখাওয়াত জানিয়েছেন যে অভিযোগকারী সুখবীর মীনা একটি রিপোর্ট দায়ের করেছেন। তার মতে, কিছুদিন আগে তাদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে ঢুকে মারধর করা হয়েছিল। এই মামলার শুনানি ও সাক্ষ্য বৃহস্পতিবার আদালতে হওয়ার কথা ছিল, যেখানে রুক্মিণীবাঈ একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন।
অভিযোগকারী অভিযোগ করেছেন যে পুরুষোত্তম মীনা, শিশুপাল এবং চন্দ্রপ্রকাশ পুরোনো শত্রুতার জেরে এই ষড়যন্ত্র করেছেন। তাদের ছেলে বিনোদ ওরফে মনু, নীরজ লশকরি, দেশরাজ বৈরওয়া এবং গোলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তারা গাড়ি দিয়ে বাইককে ধাক্কা মেরে মা-ছেলেকে হত্যা করেছে। পুলিশ রিপোর্ট নথিভুক্ত করে প্রধান অভিযুক্তদের খোঁজ শুরু করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কিছু সন্দেহভাজনকেও আটক করা হয়েছে।
হত্যার পর পরিবারে ক্ষোভ
ঘটনার খবর পাওয়ামাত্রই পরিবার এবং গ্রামবাসীরা বড় সংখ্যায় হাসপাতালে পৌঁছান এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিবারের সদস্যরা অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করতে হয়।
পুলিশের জন্য এই মামলাটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ ঘটনাটি কেবল দুটি পরিবারের মধ্যেকার পুরোনো শত্রুতাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলেনি, বরং পুরো এলাকায় উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি করেছে। বর্তমানে পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।