সিকারের বেরি গ্রামে ৩ কোটি টাকার মুররা জাতের ষাঁড় 'সিঙ্ঘম' মেলার আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। মালিক ডঃ মুকেশ দুধওয়ালের মতে, এই ষাঁড়টি বার্ষিক ১ কোটির বেশি আয় করে, যখন মেলার লোকশিল্পী এবং আধুনিক পশুপালন কৌশলও মানুষকে মুগ্ধ করছে।
সিকার: রাজস্থানের সিকার জেলার বেরি গ্রামে আয়োজিত পশু মেলায় এবার এক অভাবনীয় আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ হল, ৩ কোটি টাকা মূল্যের মুররা জাতের ষাঁড় ‘সিঙ্ঘম’, যা মেলায় পৌঁছাতেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর চমৎকার চেহারা, অমূল্য জেনেটিক্স এবং আয়ের বিশেষত্ব পশুপালক ও ব্যবসায়ীদের অবাক করে দিয়েছে।
এই ষাঁড়টি কেবল প্রদর্শনের জন্য নয়, বরং এটি বার্ষিক মালিকের জন্য কোটি কোটি টাকা আয়ের একটি উৎসও। মালিক ডঃ মুকেশ দুধওয়ালের মতে, ‘সিঙ্ঘম’ বছরে ১ কোটির বেশি টাকা আয় করে এবং এর বীর্য ও প্রজননের মাধ্যমে এই ব্যবসা চলে।
সিঙ্ঘম ষাঁড় থেকে বার্ষিক কোটি টাকার আয়
সিঙ্ঘম থেকে সারা বছরে আয় করার পদ্ধতিটি বেশ আকর্ষণীয়। এই ষাঁড়ের এক ফোঁটা বীর্যের দাম প্রায় ২৪০০ টাকা। একবার বের করা বীর্য থেকে ৭০০ থেকে ৯০০ ডোজ তৈরি হয়। এই ডোজগুলি অন্য গাভী ও মহিষদের প্রজননের জন্য বিক্রি করা হয়, যার ফলে মালিকের পকেটে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আসে।
মুররা জাতের ষাঁড়ের দাম তাদের গুণমান এবং জেনেটিক্সের উপর নির্ভর করে। ছোট ষাঁড়গুলির দাম ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়, অন্যদিকে উচ্চ মানের ষাঁড়গুলির দাম ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত যেতে পারে। এই কারণেই সিঙ্ঘমের মতো ষাঁড়গুলি পশুপালকদের জন্য বিনিয়োগ এবং আয়ের একটি বড় উৎস হয়ে উঠেছে।
সিঙ্ঘম ষাঁড়ের দুধ এবং পুষ্টির বৈশিষ্ট্য
সিঙ্ঘমের মা একবারে ২৪ লিটার দুধ দেয়, যা মুররা জাতের অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। উচ্চ মানের দুধের কারণে এই প্রজাতি দুগ্ধ ব্যবসার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্ঘমকে বিশেষ খাদ্য দেওয়া হয়, যার মধ্যে গ्वার (guar) এবং বিনোলা (cottonseed cake) ফিড অন্তর্ভুক্ত, যাতে তার শরীর ও স্বাস্থ্য उत्तम থাকে।
মুররা জাতের মহিষের দুধ উচ্চ ফ্যাট এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ, যা ডেয়ারি শিল্প এবং ক্রিম পণ্যের জন্য খুবই উপকারী। পশুপালকরা এই প্রজাতির মহিষকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, কারণ তাদের প্রজনন ক্ষমতা এবং দুধ উৎপাদন উভয়ই আয়ের উৎস।
সিঙ্ঘম মেলার শোভা আরও বাড়িয়ে তুলেছে
বেরি গ্রামের পশু মেলায় ‘সিঙ্ঘম’-এর পাশাপাশি ঘোড়া ও উটের নাচও দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। লোকশিল্পীদের পরিবেশিত গান ও নাচ মেলায় এক নতুন প্রাণ এনে দেয়। এছাড়াও, ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প এবং গ্রামীণ পোশাকের দোকানগুলিও মানুষকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করছে।
মেলা কেবল বিনোদনের কেন্দ্র নয়, বরং এটি কৃষক ও পশুপালকদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি, ঔষধ এবং কৃষি সরঞ্জামের তথ্যের একটি মঞ্চও। এই আয়োজন স্থানীয় বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান উভয়কেই উৎসাহিত করে। মুররা ষাঁড় 'সিঙ্ঘম' এবার মেলার শোভা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
মেলা পশুপালকদের জন্য শিক্ষা ও ব্যবসার সুযোগ
মুররা ষাঁড় 'সিঙ্ঘম' এবং অন্যান্য আকর্ষণের মাধ্যমে মেলা পশুপালকদের আধুনিক পশুপালন কৌশল এবং প্রজননের সুবিধা সম্পর্কে অবহিত করেছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আগামী সময়ে তাদের ব্যবসা এবং উৎপাদন উন্নত করার কৌশল শিখতে পারেন।
মেলা স্থানীয় অর্থনীতি এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের জন্যও লাভজনক প্রমাণিত হয়। পশুপালকরা কেবল মহিষ ও অন্যান্য পশুর কেনাবেচা করেন তাই নয়, আধুনিক সরঞ্জাম এবং পুষ্টি প্রযুক্তি সম্পর্কেও তথ্য অর্জন করতে পারেন। এভাবে মেলা একটি শিক্ষাগত এবং ব্যবসায়িক মঞ্চ হিসেবে কাজ করে।