**রতন টাটা-র মৃত্যু: ভারত এক মহান উদ্যোগপতি হারালো**
মুম্বই, ০৯ অক্টোবর ২০২৪: ভারতের বিখ্যাত উদ্যোগপতি এবং টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান রতন টাটা বুধবার রাতে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। ৮৬ বছর বয়সী রতন টাটার দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্য ভালো ছিল না, এবং গত কয়েক মাস ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, এবং উদ্যোগ জগৎ এক মহান নেতাকে হারিয়েছে।
রতন টাটার জীবন পরিচয়
রতন টাটার জন্ম ২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৭ সালে মুম্বইয়ে। তিনি টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জমশেদজী টাটার পরিবারের সদস্য ছিলেন। রতন টাটা প্রাথমিক শিক্ষা মুম্বই থেকে লাভ করেন এবং পরে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় (আমেরিকা) থেকে আর্কিটেকচারে ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি হার্ভার্ড ব্যবসায়িক বিদ্যালয় থেকে উন্নত ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিতে পড়াশোনা করেন।
রতন টাটা ১৯৬২ সালে টাটা গ্রুপে যোগদান করেন এবং প্রাথমিক বছরগুলিতে বিভিন্ন টাটা কোম্পানির সাথে কাজ করেন। ১৯৯১ সালে তিনি টাটা সন্সের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং কোম্পানির বিশ্বব্যাপী প্রসার ঘটেছে। রতন টাটার নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ টেটলি (ব্রিটেনের চা কোম্পানি), জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার (ব্রিটেনের প্রধান অটোমোবাইল কোম্পানি) এবং করাস (স্টীল কোম্পানি) এর মতো বড় অধিগ্রহণ করে।
রতন টাটার সাফল্য
রতন টাটার নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ কেবলমাত্র অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়নি, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিও সচেতন হয়ে ওঠে। ২০০৮ সালে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি 'টাটা ন্যানো' চালু করেন, যা ভারতীয় অটোমোবাইল শিল্পে এক বিপ্লব নিয়ে আসে। তাঁর নেতৃত্বে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) এবং টাটা মোটরস এর মতো কোম্পানিগুলি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের পরিচয় তৈরি করে।
রতন টাটার আমলে টাটা গ্রুপের রাজস্ব ৪০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লাভ ৫০ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি একজন সংবেদনশীল এবং দূরদর্শী নেতা ছিলেন, যিনি সর্বদা তাঁর কর্মী এবং সমাজের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁকে পদ্মভূষণ (২০০০) এবং পদ্মবিভূষণ (২০০৮) এর মতো উচ্চ ভারতীয় নাগরিক সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।
তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিক্রিয়া
রতন টাটার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী, উদ্যোগ জগতের প্রধান ব্যক্তিত্ব এবং দেশ-বিদেশের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর শোকবার্তায় বলেছেন, "রতন টাটার মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি একজন দূরদর্শী উদ্যোগপতি ছিলেন, যিনি ভারতকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি দিয়েছেন। তাঁর অবদান সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।"
রতন টাটার মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান ঘটেছে। তাঁর সরলতা, নম্রতা এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। ভারতীয় উদ্যোগ জগৎ এবং সমাজের প্রতি তাঁর অবদান কখনোই ভোলা যাবে না।