পুলিশের প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে সরব চিকিৎসকরা
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলন ঘিরে ফের উত্তাল চিকিৎসক মহল। শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের অংশ নেওয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে পুলিশের মিথ্যা মামলা ও বারবার থানায় তলব করার প্রতিবাদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ। তাঁদের দাবি, প্রশাসন আসলে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। সোমবার সংগঠনের পক্ষ থেকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজকুমার ভার্মাকে ই–মেলে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, অবিলম্বে এই পুলিশি হেনস্থা বন্ধ করতে হবে।
গণআন্দোলনকে দমন করতে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে
যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক পূণ্যব্রত গুণ ও হীরালাল কোনার স্পষ্ট অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের ভয় দেখিয়ে ও অপমান করে প্রশাসন এক ধরনের থ্রেট কালচার প্রতিষ্ঠা করছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘ন্যায়বিচারকে উপহাস করা হচ্ছে, দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হচ্ছে।’ আন্দোলনের মূল স্লোগান এখন শুধু চিকিৎসকদের দাবি নয়, সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই। বুধবার লালবাজারে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার দাবিও জানিয়েছে সংগঠন।
গত বছরের মামলা টেনে এনে হয়রানি
চিকিৎসক সংগঠন জানিয়েছে, গত বছর দুর্গাপুজোর সময়ে ধর্মতলায় ডোরিনা ক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় তাঁদের অনশন কর্মসূচি চলাকালীন পুলিশের তরফে একাধিক মামলা রুজু করা হয়। সেই মামলার অজুহাতে আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকা চিকিৎসকদের বারবার থানায় তলব করা হচ্ছে। বউবাজার ও হেয়ার স্ট্রিট থানায় গিয়ে তাঁদের ঘন্টার পর ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসক সমাজের একাংশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানছে না রাজ্য সরকার
চিকিৎসক মঞ্চের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল যে আরজি কর নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রাজ্য সরকার যেন কোনও শক্তি প্রয়োগ না করে। কিন্তু বাস্তবে রাজ্য প্রশাসন আদালতের সেই নির্দেশ অমান্য করছে। ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ ডাক্তারদের পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ডাকা হচ্ছে, যা কেবল আইনবিরুদ্ধই নয়, বরং চিকিৎসা পরিষেবাকে ব্যাহত করছে। এর ফলে সাধারণ রোগীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
আন্দোলনের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর কৌশল
চিকিৎসক মঞ্চের বক্তব্য, এই পদক্ষেপ নিছক ভয় দেখানোর কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে পুরোনো থ্রেট কালচার ফেরানো হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। তাই আজ ও কাল চিকিৎসকদের থানায় হাজিরার সময়ে থানার বাইরে অবস্থান–বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সংগঠন। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মঞ্চ।
দুর্নীতির অভিযোগে তোপ চিকিৎসক মঞ্চের
চিকিৎসক সংগঠন অভিযোগ তুলেছে, রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা দুর্নীতিতে জর্জরিত। নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় অতিরিক্ত বিল, এমনকি চিকিৎসক বদলির ক্ষেত্রেও অর্থের লেনদেন চলছে বলে তাঁদের দাবি। যৌথ মঞ্চের বক্তব্য, স্বাস্থ্য পরিষেবার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গিয়েছে। এই চক্র ভাঙা জরুরি, নইলে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।
মেডিক্যাল কলেজে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ
প্রেস বিবৃতিতে যৌথ মঞ্চের দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ এখন প্রকাশ্যে রাজনৈতিক মঞ্চে পরিণত হয়েছে। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ সবাই কর্মীদের জোর করে রাজনৈতিক বৈঠকে হাজির থাকতে বাধ্য করছেন। ছাত্রছাত্রী ও রেসিডেন্ট ডাক্তারদের মিছিলে নামানো হচ্ছে, যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাম্পাসের পরিবেশকে কলুষিত করছে।
প্রাতিষ্ঠানিক গা–জোয়ারির বিরুদ্ধে লড়াই
যৌথ মঞ্চের মতে, এই প্রাতিষ্ঠানিক গা–জোয়ারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিক্ষা ও চিকিৎসাকে রাজনৈতিক মঞ্চে টেনে নামানোর ফলে মান ও মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে বলে বহুবার অভিযোগ করা হলেও প্রশাসন উদাসীন। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন এখন ন্যায়ের লড়াই, গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই এবং সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য–অধিকারের লড়াই হিসেবেই সামনে এসেছে।