বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিটির বিরুদ্ধেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ!
আর্থিক কেলেঙ্কারিতে মুখোমুখি এবার হাইকোর্টের নির্ধারিত বিচারপতির কমিটিই! রোজ়ভ্যালি কেলেঙ্কারির টাকা ফেরতের দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দিলীপ শেঠের নেতৃত্বাধীন অ্যাসেট ডিসপোজাল কমিটির (ADC) বিরুদ্ধেই এবার তদন্তে নামছে সিবিআই। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এমন নির্দেশে হতবাক সকলে। আদালতের সাফ বক্তব্য— ১৫ দিনের মধ্যে এই আর্থিক নয়ছয় নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
কোটি টাকার লেনদেন ঘিরে উঠছে প্রশ্ন, ক্ষুব্ধ আদালত
শুনানির সময় আমানতকারীদের আইনজীবীরা একাধিক ব্যাঙ্কের নথি আদালতের সামনে তুলে ধরেন। সেখানে দেখা যায়, ২৬ জুন আদালত ADC-র কাজকর্ম নিয়ে মন্তব্য করার পর মাত্র চার দিনের মধ্যে — অর্থাৎ ৩০ জুন — হঠাৎই ১.৮৮ কোটি টাকা স্থানান্তরিত হয়েছে ADC-র অফিস অ্যাকাউন্টে। শুধু তাই নয়, সেই অ্যাকাউন্ট থেকে সোজা ২ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে কমিটির চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্টে! আদালত এই আর্থিক লেনদেনকে সন্দেহজনক বলেই ধরে নিয়েছে এবং সিবিআইকে তদন্তে নামতে নির্দেশ দিয়েছে।
ইডি–ADC–CBI: সংঘাত না সমন্বয়?
এই তদন্ত নিয়ে আরেকটি জটিলতা দেখা দিয়েছে। কারণ, এই ADC-র সদস্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ইডির একজন অফিসারও রয়েছেন। ফলে সিবিআই কীভাবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে এই তদন্ত পরিচালনা করবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বহু আমানতকারী। আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যেই ইডিকে বলা হয়েছে, তারা যেন চলতি সপ্তাহেই রোজ়ভ্যালি সংক্রান্ত সমস্ত নথি সিবিআইকে হস্তান্তর করে।
প্রতিশ্রুতি তো অনেক, টাকা ফেরত কতজন পেলেন?
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ৩১ লক্ষ আমানতকারী তাঁদের দাবি নথিভুক্ত করেছেন। অথচ মাত্র ৭৪ হাজার জনের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। আদালত প্রশ্ন তোলে— যখন ৫৩১ কোটি টাকা হাতে আছে এবং আরও বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি রয়েছে, তখন কেন বাকি অর্থ ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না? বরং অভিযোগ উঠেছে, ওই কমিটি কিছু বাজেয়াপ্ত হোটেল সম্পত্তি বেচে দেওয়ার বদলে সেখানে ব্যবসা চালাচ্ছে কিছু 'নির্বাচিত' ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে!
আদালতের কড়া বার্তা: দায়িত্ব নয়, স্বজনপোষণের ছাপ!
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট বলা হয়েছে, হাইকোর্ট যে বিশ্বাসে এই কমিটিকে তৈরি করেছিল, তা রক্ষা করা হয়নি। আদালতের ভাষায়, এই কাজ করার সুযোগ ADC-কে ইডিই দিয়েছে। আদালতের প্রশ্ন— কেন এখনও টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া গতি পায়নি? কেন বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি বিক্রির পরিবর্তে হোটেল চালানো হচ্ছে?” সব মিলিয়ে আদালতের ক্ষোভ ও হতাশা এই মামলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।