লোকসভার কংগ্রেস সাংসদ এবং বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী শুক্রবার (২৫ জুলাই, ২০২৫) ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী) সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি তাৎপর্যপূর্ণ এবং আত্মবিশ্লেষণমূলক বিবৃতি দিয়েছেন।
নয়াদিল্লি: লোকসভার কংগ্রেস সাংসদ এবং বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী) সম্প্রদায় নিয়ে করা একটি বিবৃতির পরে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর সাম্প্রতিক স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতিটি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)-এর কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। রাহুল গান্ধী স্বীকার করেছেন যে কংগ্রেসের শাসনামলে ওবিসি সম্প্রদায়ের স্বার্থ যতটা রক্ষা করা উচিত ছিল, ততটা করা হয়নি। তিনি আরও বলেন যে জাতিগত জনগণনা না করা তাঁর একটি রাজনৈতিক ভুল ছিল, যা তিনি এখন সংশোধন করতে চান।
রাহুল গান্ধী কী বলেছেন?
রাহুল গান্ধী শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে বলেন, "আমি ২০০৪ সাল থেকে রাজনীতিতে আছি এবং ২১ বছর পূর্ণ করেছি। যখন আমি পিছনে ফিরে তাকাই এবং আত্মবিশ্লেষণ করি, তখন মনে হয় যে কংগ্রেস সরকারের আমলে ওবিসি সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যদি আমি আপনাদের সমস্যাগুলির গুরুত্ব আগে বুঝতে পারতাম, তাহলে সেই সময়েই একটি জাতিগত জনগণনা করতাম। এটা আমার ভুল ছিল, যা এখন আমি সংশোধন করতে চাই।"
বিজেপির প্রতিক্রিয়া: 'রাহুল অনেক দেরিতে বোঝেন'
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান রাহুল গান্ধীকে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, "রাহুল গান্ধী সবসময় অনেক দেরিতে বোঝেন। তিনি জরুরি অবস্থার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন, তারপর শিখ দাঙ্গার জন্য। এখন তিনি ওবিসি সম্প্রদায়ের কাছেও ক্ষমা চাইছেন। কংগ্রেস কখনও ওবিসিদের প্রাপ্য দেয়নি, বরং তাদের দমন করার চেষ্টা করেছে। তিনি প্রতিটি বিষয়ে ভুল করেন এবং তারপর দশ বছর পর ক্ষমা চান।"
বিজেপি আরও অভিযোগ করেছে যে রাহুল গান্ধীর এই বিবৃতিটি শুধুমাত্র একটি নির্বাচনী কৌশল এবং ওবিসি সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার একটি প্রচেষ্টা। দলটি কংগ্রেসের অতীতের শাসনামলে ওবিসিদের জন্য করা কাজের অভাবের ওপর জোর দিয়েছে।
বিআরএস নেত্রী কবিতা'র কড়া বক্তব্য: 'শুধু ক্ষমা যথেষ্ট নয়'
বিআরএস নেতা কে. কবিতা রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়াকে "রাজনৈতিক নাটক" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, "রাহুল গান্ধী গতকাল দেশের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন যে তিনি কংগ্রেসের শাসনামলে ওবিসিদের জাতিগত জনগণনা করতে পারেননি। কিন্তু ৭৫ বছরের মধ্যে বেশিরভাগ সময় কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী যারা সংরক্ষণ বা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তাদের জন্য কি শুধু ক্ষমা যথেষ্ট?"
কবিতা আরও রাহুলকে একটি খোলা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন: "যদি আপনি সত্যিই সৎ হন, তাহলে তেলেঙ্গানায় অনুষ্ঠিত ওবিসি জনগণনার ডেটা প্রকাশ করুন। যদি তাতে কোনো ভুল থাকে, তাহলে আমাদের তা সংশোধন করার সুযোগ দিন। আমরা বিহার সহ সারা দেশে আপনার বিরুদ্ধে প্রচার চালাব এবং সত্য উন্মোচন করব।"
জাতিগত জনগণনার রাজনৈতিক তাৎপর্য
জাতিগত জনগণনার দাবি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বিরোধী দলগুলো মনে করে যে এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ন্যায়বিচার এবং প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব দিতে পারে, যেখানে কিছু রাজনৈতিক দল এটিকে সামাজিক কাঠামো দুর্বল করে এমন একটি বিষয় হিসেবে মনে করে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিহার, উত্তর প্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলোতে জাতিগত জনগণনার বিষয়টি একটি প্রধান নির্বাচনী ইস্যু ছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধীর এই বিবৃতি আসন্ন নির্বাচনকে মাথায় রেখে নেওয়া একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।