স্নানের পরেও ঘাম! স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক?
গরমে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক—তাতে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু স্নানের পরপরই যদি ঘামে ভিজে চুপচুপে হয়ে যেতে হয়, তাও আবার বর্ষা বা শীতকালের দিনে—তাহলে সেটা শুধু পরিবেশজনিত নয়, হতে পারে আপনার শরীরের গভীরে লুকিয়ে থাকা কোনো সমস্যার সতর্ক সংকেত। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি হাইপারহাইড্রোসিস, থাইরয়েড সমস্যা, কিংবা হরমোনাল ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ হতে পারে। অতিরিক্ত ঘামকে 'নরমালি ঘামি মানুষ' বলে চিহ্নিত করে এড়িয়ে না গিয়ে, সময়মতো কারণ জানা জরুরি।
স্নানের পর ঘাম হওয়া কতটা স্বাভাবিক?
স্নানের উদ্দেশ্য হল শরীরকে পরিষ্কার ও সতেজ করা। কিন্তু অনেকেই বলেন, স্নান শেষ হওয়ার পরই ঘাম শুরু হয়ে যায়। এর ফলে গোটা শরীর আবার চিটচিটে হয়ে পড়ে। কেউ কেউ মনে করেন এটি তাপমাত্রার প্রতিক্রিয়া, কিন্তু সবসময় তা নয়। যদি ঘন ঘন এমন হয় এবং তাতেও আপনি ক্লান্ত বা অস্বস্তিতে ভোগেন, তাহলে শরীরের ভিতরে কিছু গোলমাল চলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
গরমে কেন এমন হয়, ব্যাখ্যা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা
গরমের সময় আমরা অনেকেই ঠান্ডা জল নয়, বরং উষ্ণ জলে স্নান করে থাকি—ধরে নেওয়া হয়, এতে শরীর পরিষ্কার হয় বেশি। কিন্তু এর ফল উলটো হতে পারে। শরীর যখন উত্তপ্ত জলের সংস্পর্শে আসে, তখন তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য শরীর নিজেই ঘাম নিঃসরণ করে। এটিই স্বাভাবিক মেকানিজম। তবে ঘন ঘন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
বাথরুমে ভেন্টিলেশন না থাকাও হতে পারে একটি কারণ
অধিকাংশ মানুষের বাড়ির বাথরুমে পর্যাপ্ত হাওয়ার ব্যবস্থা থাকে না। এক্সহস্ট ফ্যান না থাকলে বা চলাচলের হাওয়া না থাকলে ভিতরে আর্দ্রতা বেড়ে যায়, যার ফলে স্নানের পরও শরীর ঠান্ডা না হয়ে বরং ঘামতে থাকে। শরীরের এই প্রতিক্রিয়াকে একধরনের পরিবেশগত রিফ্লেক্স হিসেবেও ধরা যায়।
থাইরয়েড ও হরমোনের অসাম্য: অদৃশ্য শত্রু
অনেক সময় শরীরের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে বা থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ঠিকভাবে কাজ না করলে ঘাম বেড়ে যায়। অতিরিক্ত মানসিক চাপও এমন সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে। শরীরের মধ্যে অল্প অস্বাভাবিকতা ধীরে ধীরে বড় অসুস্থতায় রূপ নিতে পারে, তাই প্রথম ধাপেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
এটি হতে পারে Hyperhidrosis: কী এই অসুখ?
হাইপারহাইড্রোসিস এক ধরনের মেডিক্যাল অবস্থা, যেখানে শরীরের ঘামগ্রন্থিগুলি অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে পড়ে। এতে হাত, পা, বগল এমনকি পিঠ বা মুখও ঘামে ভিজে যায়, এমনকি শীতকালের মধ্যেও। স্নানের পর যদি প্রতিবার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তবে এটি হাইপারহাইড্রোসিস হতে পারে, যা অপ্রতিরোধ্য নয় তবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
কী করবেন এমন পরিস্থিতিতে?
❶ স্নানের সময় ঠান্ডা বা হালকা গরম জল ব্যবহার করুন।
❷ বাথরুমে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।
❸ স্নানের পর শরীরকে রগড়ে নয়, হালকাভাবে মুছে নিন।
❹ শরীরে টাইট বা ঘন জামাকাপড় না পরে ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক বেছে নিন।
❺ পরিস্থিতির অবনতি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসকের মতামত
দিল্লির খ্যাতনামা এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. রাকেশ মালহোত্রা জানাচ্ছেন, যদি কোনও ব্যক্তি নিয়মিত স্নানের পর অতিরিক্ত ঘামে ভিজে যান এবং শরীর অত্যন্ত ক্লান্ত ও অস্বস্তিতে ভোগে, তাহলে এটি হয়তো হরমোনাল ইমব্যালান্স বা হাইপারহাইড্রোসিসের লক্ষণ। দ্রুত থাইরয়েড ও হরমোন চেক-আপ করানো উচিত।
কোনও কিছু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করবেন না
এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত পরামর্শসমূহ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের উক্তির ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলো সাধারণ জ্ঞানের জন্য উপযোগী হলেও, নিজের শরীর সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন প্রথিতযশা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। নিউজ১৮ বাংলা কোনও আত্মনির্ভর চিকিৎসার ফলাফলের দায় নিচ্ছে না।