হাই কোর্টের কাঠগড়ায় শেঠ কমিটি
রোজভ্যালি চিটফান্ডে সর্বস্ব হারানো আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত হয়েছিল প্রাক্তন বিচারপতি দিলীপ শেঠের নেতৃত্বাধীন কমিটি। কিন্তু এবার সেই কমিটিই পড়ল আদালতের কঠিন প্রশ্নের মুখে। আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এল অডিট সংক্রান্ত গুরুতর গাফিলতি, আর্থিক স্বচ্ছতার ঘাটতি।
১০ বছরে একটিও অডিট হয়নি! বিস্মিত বেঞ্চ
প্রতিবেদন দেখে চমকে গেল ডিভিশন বেঞ্চ | শেঠ কমিটির পক্ষ থেকে এদিন আদালতে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়, যেখানে গত ১০ বছরের আর্থিক হিসেব-নিকেশ রয়েছে। কিন্তু তা দেখে বিস্মিত হন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ এবং বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের বেঞ্চ। প্রশ্ন ওঠে, এতবড় আর্থিক দায়িত্ব নিয়ে কীভাবে একবারও অডিট না করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হল?
চকোলেট গ্রুপ কোথা থেকে এল? হাই কোর্টের কড়া প্রশ্ন
নজরে চিটফান্ডের ব্যবসায়িক যোগ | আদালতের চোখে পড়ে, শেঠ কমিটির অন্তর্ভুক্ত একটি বিতর্কিত সংস্থার নাম — চকোলেট গ্রুপ। ২০১৫ সাল থেকে তাদের মাধ্যমেই চালানো হয়েছে অফিস, খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। বিচারপতির প্রশ্ন, কে দিল এই অর্থ? উত্তরে আইনজীবী জানান, ওই চকোলেট গ্রুপই টাকা দিয়েছে। তখনই আদালত জানতে চায়— "কে এই সংস্থা? কেন এদের হাতে দেওয়া হল এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব?"
‘কমিটির অভ্যন্তরে ঢুকেছে ভূত সংস্থা’! অনুসন্ধানের ইঙ্গিত হাই কোর্টের
শেঠ কমিটিকে কেন্দ্র করে নতুন তদন্ত কমিটির ইঙ্গিত | চকোলেট গ্রুপের কোনও সরকারি অস্তিত্ব নেই বলেই মত বেঞ্চের। বিচারপতির কটাক্ষ, “এই ভূত সংস্থা কীভাবে সরকারি টাকায় ব্যবসা করছে?” এই প্রশ্নের পরেই আদালত জানিয়ে দেয়, শেঠ কমিটির কাজকর্মের উপর একটি স্বাধীন অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রয়োজন রয়েছে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
‘মানুষ জানুক, কী চলছে’— স্বচ্ছতার পক্ষে হাই কোর্ট
প্রতিটি পক্ষকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ | বিচারপতির স্পষ্ট মন্তব্য, এই রিপোর্ট যেন মামলার সমস্ত পক্ষের হাতে পৌঁছয়। জনগণ জানুক, কি চলছে এই টাকা ফেরতের নাম করে। এ কথা বলেই আদালত জানিয়ে দেয়, আগামী বুধবার ইডির জবাবও শোনা হবে, কারণ শেঠ কমিটির সদস্যদের মধ্যে ইডির একজন সদস্যও রয়েছেন।
এমপিএস চিটফান্ড মামলাতেও আদালতের নজর
তালুকদার কমিটিকে ঘিরেও প্রশ্ন | এদিন শুধু রোজভ্যালিই নয়, প্রশ্নের মুখে পড়েছে এমপিএস চিটফান্ড ফেরতের জন্য গঠিত তালুকদার কমিটিও। আদালত প্রশ্ন তোলে তাদের নথিপত্র নিয়েও। আগামী বুধবার এই সংক্রান্ত মামলাতেও হবে শুনানি। প্রতারণার শিকার লক্ষ মানুষের টাকাপয়সা ফেরাতে হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত হয়েছিল বিশেষ কমিটি। কিন্তু এবার সেই কমিটির কাজ নিয়েই উঠেছে অসংখ্য প্রশ্ন। আর তাতেই নতুন করে জোরালো হচ্ছে চিটফান্ড তদন্ত। রোজভ্যালি হোক বা এমপিএস — সর্বস্ব হারানো আমানতকারীরা অপেক্ষা করছেন প্রকৃত বিচার আর টাকা ফেরতের দিনটির জন্য।