ভারতকে অপরিশোধিত তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখার আশ্বাস রাশিয়ার। মার্কিন চাপের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাবুশকিন বলেন, ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্ব দৃঢ়। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো তাদেরই ক্ষতি করছে যারা এটি আরোপ করছে।
Trum Tariff: ভারত ও রাশিয়া কয়েক দশক ধরে জ্বালানি খাতে শক্তিশালী অংশীদার। বিশেষ করে অপরিশোধিত তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে রাশিয়া ভারতের জন্য একটি বড় এবং নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা ভারতের উপর রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে, কিন্তু রাশিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ভারতকে সরবরাহ যে কোনো মূল্যে অব্যাহত থাকবে।
মার্কিন চাপকে রাশিয়ার "অযৌক্তিক" বলা
দিল্লিতে অবস্থিত রুশ দূতাবাসের উপ-প্রধান রোমান বাবুশকিন বুধবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, আমেরিকা কর্তৃক ভারতের উপর যে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস ভারত-রাশিয়ার জ্বালানি অংশীদারিত্ব বাইরের চাপ সত্ত্বেও শক্তিশালী থাকবে।
ভারতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি
বাবুশকিন স্বীকার করেছেন যে বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জিং। একদিকে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, অন্যদিকে ভারত তার জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। তা সত্ত্বেও তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন যে ভারত তার জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার উল্টো প্রভাব
পশ্চিমা দেশগুলো কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বাবুশকিন বলেন, আসল ক্ষতি তাদেরই হচ্ছে যারা এগুলো প্রয়োগ করছে। তার মতে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো দীর্ঘ মেয়াদে পশ্চিমা অর্থনীতিকেই দুর্বল করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, রাশিয়ার উপর এর তেমন প্রভাব পড়েনি যতটা পশ্চিমা দেশগুলো ভেবেছিল।
বন্ধুরা কখনো নিষেধাজ্ঞা দেয় না
রোমান বাবুশকিন আমেরিকাকে সরাসরি বার্তা দিয়ে বলেন, Friends never put sanctions। অর্থাৎ, আসল বন্ধু কখনো তার সহযোগীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে না। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনকে এটা বুঝতে হবে যে অর্থনীতিকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করা ভুল। রাশিয়া কখনো ভারতের উপর এমন চাপ সৃষ্টি করেনি এবং করবেও না।
ট্রাম্পকে ৪৪০ ভোল্টের ধাক্কা
বাবুশকিনের এই বক্তব্যকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তিনি ভারতকে আশ্বাস দিয়েছেন যে পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, রাশিয়া ভারতের পাশে থাকবে। এই বক্তব্য আমেরিকার সেই নীতির উপর সরাসরি আঘাত, যার অধীনে তারা তাদের সহযোগীদের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে।
ব্রিকসের (BRICS) ক্রমবর্ধমান ভূমিকা
বাবুশকিন আরও বলেন যে বর্তমান বিশ্ব সংকটে ব্রিকসের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ব্রিকস এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ থেকে দূরে থেকে উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতিগুলোকে শক্তিশালী করে। ভারত ও রাশিয়া উভয়ই ব্রিকসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং এই অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে।
ভারত-রাশিয়ার ‘ব্রো কোড’
ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ককে বাবুশকিন ‘ব্রো কোড’-এর মতো বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, উভয় দেশ প্রতিটি কঠিন সময়ে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে। তা আন্তর্জাতিক চাপ হোক, অর্থনৈতিক সংকট হোক বা যুদ্ধ পরিস্থিতি, ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্ব সবসময় অটুট থেকেছে। এই বিশ্বাস আগামীতেও कायम থাকবে।
পুতিন ও মোদীর আলোচনা
বাবুশকিন আরও জানান, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এই কথোপকথনে পুতিন ইউক্রেনের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ফোন কলটি প্রমাণ করে যে রাশিয়া ভারতকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।
তেল সরবরাহের আশ্বাস
রুশ কূটনীতিক বলেন, ভারতকে তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য প্রক্রিয়া আগে থেকেই তৈরি আছে। তিনি স্পষ্ট করে জানান, যাই বাধা আসুক না কেন, ভারতের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করা রাশিয়ার অগ্রাধিকার থাকবে। এই বক্তব্য ভারতের জন্য স্বস্তিদায়ক, কারণ দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জ্বালানি চাহিদা রাশিয়া থেকে আসা তেলের উপর নির্ভরশীল।